যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য এবং সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক আল্লাহর রাসূল, তাঁর পরিবার ও সাথীগণের ওপর। আরো সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক তাদের ওপর যারা কিয়ামাত পর্যন্ত তাঁর হিদায়াতের দ্বারা হিদায়াতপ্রাপ্ত হবেন।
অতঃপর অধিক গুরুত্বপূর্ণ ও অতি উত্তম নৈকট্যের কাজ হলো, পরস্পর উপদেশ দেওয়া, কল্যাণের দিকনির্দেশনা দেওয়া, পরস্পর সত্যের প্রতি আহ্বান করা এবং সত্যের দিকে আহ্বান করতে গিয়ে বিপদ আসলে তার ওপর ধৈর্য ধারণ করা। আর যা সত্য বিরোধী, আল্লাহকে রাগান্বিত করে ও তাঁর রাহমাত হতে দূরে ঠেলে দেয় তা হতে সতর্ক করা।
আমি মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন আমাদের অন্তর ও কর্মকে ও সকল মুসলিমদেরকে সংশোধন করে দেন এবং তিনি যেন আমাদেরকে তাঁর দীনের বুঝ ও তার ওপর দৃঢ়তা প্রদান করেন এবং তিনি যেন তাঁর দীনকে সাহায্য করেন, তাঁর কালেমাকে বুলন্দ করেন। আর তিনি যেন মুসলিম শাসকদেরকে সংশোধন করে দেন, তাদেরকে সকল কল্যাণের তাওফীক দান করেন, তাদের জন্য তাদের সঙ্গী-সাথীদেরকে সঠিক করে দেন, তিনি যেন তাদেরকে সাহায্য করেন সে সকল কাজ সম্পাদনের যাতে দেশ ও জাতির কল্যাণ রয়েছে, তিনি যেন তাদেরকে দীনের বুঝ দান করেন এবং তিনি যেন তাদের বক্ষকে খুলে দেন তাঁর শরী‘আতকে শাসক বানানোর জন্যে এবং তার ওপর তাদেরকে স্থায়িত্ব প্রদান করেন। নিশ্চয় তিনি এর মালিক ও এর ওপর ক্ষমতাবান।
হে মুসলিমগণ! ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও গুরুত্ব পাবার দাবিদার, কারণ এর বাস্তবায়নের মাঝে নিহিত রয়েছে জাতির কল্যাণ ও তাদের মুক্তি এবং এটি পরিত্যাগের মাঝে রয়েছে মহাবিপদ ও বড় বিপর্যয়, মর্যাদার বিলুপ্তি ও হীনতার আগমন।
মহান আল্লাহ তা‘আলা তাঁর মহাগ্রন্থে ইসলামের মাঝে এ কাজটির মান-মর্যাদা ও স্থান পরিষ্কার-ব্যাখ্যা করেছেন এবং নিশ্চিতভাবে বর্ণনা করেছেন এর মহান স্থান; এমনকি তিনি কিছু আয়াতে একে ঈমানের আগে উল্লেখ করেছেন যা দীনের মূল ও ইসলামের ভিত্তি। যেমন তিনি বলেছেন:
﴿كُنتُمۡ خَيۡرَ أُمَّةٍ أُخۡرِجَتۡ لِلنَّاسِ تَأۡمُرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَتَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَتُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِۗ﴾ [ال عمران: ١١٠]
“তোমরা শ্রেষ্ঠ জাতি যাদেরকে লোকদের জন্যে বের করা হয়েছে, তোমরা ন্যায়ের আদেশ দিবে অন্যায়ের নিষেধ করবে এবং আল্লাহর ওপর ঈমান আনবে। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১১০]
বস্তুত এ ওয়াজিব কাজটির মহত্ব প্রকাশ ও এর ওপর সকল মহা কল্যাণ নির্ভরশীল হওয়ার কারণেই আল্লাহ (এ আয়াতে) ঈমান আনার কথার আগে ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধের কথা উল্লেখ করেছেন।
বিশেষ করে বর্তমান সময়ে পৃথিবীর অধিকাংশ জায়গায় শির্ক, বিদ‘আতের সয়লাব ও মা‘সিয়াত- আল্লাহর বিরোধিতা প্রকাশ পাওয়ার কারণে ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায় থেকে নিষেধের দিকে আহ্বান জানানো মুসলিমদের প্রয়োজন ও জরুরত খুব বেশি হয়ে পড়েছে।
রাসূলের যুগে, সাহাবীগণের যুগে ও সালাফ সালেহীনের যুগে মুসলিমরা এ ওয়াজিবটির সম্মান করতো এবং খুব সুন্দরভাবে এটি বাস্তবায়ণ করতো। তাই অধিক মুর্খতা, জ্ঞানের স্বল্পতা ও অধিকাংশ মানুষের এ মহা ওয়াজিবটি হতে উদাসীন থাকার কারণে এ কাজটির প্রতি প্রয়োজন খুব বেশি ও বড় আকার ধারণ করেছে। যেমন জানা গেছে যে, অধিকাংশ দেশে অকল্যাণ ও বিপর্যয়ের প্রসার লাভ, বাতিলের দিকে আহ্বানকারীদের আধিক্য ও কল্যাণের দিকে আহ্বানকারীদের স্বল্পতার কারণে আমাদের এ বর্তমান সময়ে বিষয়টি আরো কঠিন আর বিপদটি আরো ভয়াবহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণেই আল্লাহ এর আদেশ দিয়েছেন এবং এর ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান করেছেন এবং একে সূরা আল ইমরানের আয়াতে ঈমানের ওপর প্রাধান্য দিয়েছেন। আর সে আয়াতটি হলো:
﴿كُنتُمۡ خَيۡرَ أُمَّةٍ أُخۡرِجَتۡ لِلنَّاسِ﴾ [ال عمران: ١١٠]
“তোমরা শ্রেষ্ঠ উম্মত যাদেরকে লোকদের জন্যে সৃষ্টি করা হয়েছে।” [সূরা আলে ইমরান: আয়াত : ১১০]
অর্থাৎ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মাত। তারা আল্লাহর নিকট সর্বশ্রেষ্ট ও সর্বোত্তম উম্মাত। যেমন, সহীহ হাদীসে এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
«أَنْتُمْ تُتِمُّونَ سَبْعِينَ أُمَّةً أَنْتُمْ خَيْرُهَا وَأَكْرَمُهَا عَلَى اللَّهِ».
“তোমরা সত্তর উম্মাত পূর্ণ করবে (অর্থাৎ তোমরা সত্তরতম উম্মত), তাদের মধ্যে তোমরা আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম ও অধিক সম্মানিত উম্মাত।”[1]
>