আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, পরবর্তীযুগে যারা এসেছে এবং নিজেদেরকে ইমাম আশ‘আরীর অনুসারী বলে দাবি করে, তারা মূলত ইমাম আশ‘আরীকে যথার্থরূপে অনুসরণ করেনি; কারণ ইমাম আশ‘আরীর আকীদা তিনটি পর্যায় দিয়ে অতিক্রম করেছে।

প্রথম পর্যায়: মুতাযিলা মতবাদ পর্যায়: অর্থাৎ ইমাম আশ‘আরী চল্লিশ বছর পর্যন্ত মুতাযিলা সম্প্রদায়ের মতবাদ পোষণ করে চলেছেন। এ সময় তিনি মুতাযিলা মতবাদের পক্ষে অন্যদের সঙ্গে বিতর্ক করেছেন। এরপর তিনি মুতাযিলা মতবাদ থেকে ফিরে আসেন এবং মুতাযিলাদের গোমরাহ বলে আখ্যায়িত করে কঠোরভাবে তাদের যুক্তিতর্ক খণ্ডন করেন।[1]

দ্বিতীয় পর্যায়: মুতাযিলা ও আহলে সুন্নতের মাঝামাঝি পর্যায়।

এ পর্যায়ে তিনি আবু মুহাম্মদ আবদুল্লাহ ইবনে কুল্লাব এর পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলেন। শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেন, ‘আশ‘আরী এবং তার মতো যারা আছেন তারা হলেন সালাফ এবং জাহমিয়াদের মাঝামাঝি পর্যায়ে অবস্থিত। তারা সালাফদের কাছ থেকে বিশুদ্ধ কথা গ্রহণ করেছেন এবং জাহমিয়াদের কাছ থেকে যুক্তিভিত্তিক মতবাদসমূহ গ্রহণ করেছেন, যা তাদের কাছে বিশুদ্ধ বলে মনে হতো, কিন্তু আসলে তা ছিল অশুদ্ধ।’[2]

তৃতীয় পর্যায়: আহলে সুন্নতের মতাদর্শ আপন করে নেয়ার পর্যায়, যাদের ইমাম হলেন আহমদ ইবনে হাম্বল রা.। ইমাম আশ‘আরী এ কথাটি তার সর্বশেষ কিতাব الإبانة في أصول الديانة (আল ইবানাহ ফী উসূলিদ্দিয়ানাহ) তে উল্লেখ করেছেন।

ইমাম আশ‘আরী র. এ কিতাবের ভুমিকায় বলেছেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সম্মানিত কিতাব নিয়ে আমাদের কাছে এসেছেন। যে কিতাবের আগে-পিছে কোনো বাতুলতা আসে না। যা প্রজ্ঞাময়, সপ্রশংসিত আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ। যে কিতাবে পূর্বের সকল ইলম একত্র হয়েছে। যে কিতাব দ্বারা দ্বীন ও অবশ্য পালনীয় বিধানসমূহ পরিপূর্ণ করে দেওয়া হয়েছে। আর তা আল্লাহ তা‘আলার সরল পথ। শক্ত রজ্জু। যে এ কিতাবকে আঁকড়ে ধরবে সে নাজাত পাবে। আর যে তার বিপক্ষে যাবে সে পথভ্রষ্ট ও গোমরাহ হয়ে যাবে, অজ্ঞতায় নিপতিত হবে। আর আল্লাহ তা‘আলা তার এ কিতাবে রাসূলের সুন্নত আঁকড়ে ধরার প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿وَمَآ ءَاتَىٰكُمُ ٱلرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَىٰكُمۡ عَنۡهُ فَٱنتَهُواْۚ﴾ [الحشر: ٧]

রাসূল তোমাদের যা দেয় তা গ্রহণ কর, আর যা থেকে সে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও। (সূরা আল হাশর ৫৯: ৭)

ইমাম আশ‘আরী র. তাঁর ভুমিকায় আরো বলেছেন যে, ‘আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে তাঁর রাসূলের আনুগত্যের নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন নির্দেশ দিয়েছেন তাঁর নিজের আনুগত্য করার। অনুরূপভাবে তিনি তাঁর কিতাব অনুযায়ী আমল করার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে যারা ভাগ্যহারা, শয়তান যাদের ওপর চড়াও হয়েছে, তারা আল্লাহর নবীর সুন্নতকে পেছনে ছুড়ে মেরেছে, পরিত্যাগ করেছে। তারা তাদের কিছু পূর্বসূরির প্রতি ধাবিত হয়েছে যাদের মতাদর্শ তারা অন্ধভাবে মেনে অনুসরণ করেছে, যাদের দ্বীনকে তারা নিজেদের দ্বীন হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং তারা রাসূলের সুন্নতকে বাতিল করে দিয়েছে, তারা তা প্রত্যাখ্যান করেছে এবং অস্বীকার করেছে। তারা আল্লাহর ওপর মিথ্যা রটনা করতে গিয়েই এরূপ করেছে। অতএব কুরআনের ভাষায় (তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং হিদায়েতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।) (সূরা আন-আনআম: ৬: ১৪০)

এরপর ইমাম আশ‘আরী র. বিদআতপন্থীদের একটি নীতির কথা উল্লেখ করেন এবং তা বাতিল বলে ইঙ্গিত করেন। তারপর তিনি বলেন:

‘যদি কেউ আমাকে এ প্রশ্ন করে বলে যে, আপনি তো মুতাযিলা, জাহমিয়াহ, হারুরিয়া, রাফেযা, মুরজিয়াহ- এদের সকলের কথাকে অস্বীকার করলেন। তাহলে আপনার নিজস্ব বক্তব্য এবং আপনি যে মতাদর্শ বহন করেন সে ব্যাপারে কি আমাদের বলবেন?

এ জাতীয় প্রশ্নকারীর উত্তর দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা যে কথা বলি এবং মতাদর্শ বহন করি তা হলো - আল্লাহর কিতাবকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরা, আমাদের নবীর সুন্নতকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরা, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন, হাদীসের ইমামগণ যা বলেছেন তা মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরা। আমরা এগুলোকে শক্তভাবে ধরে থাকি। আর আবু আবদুল্লাহ আহমদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে হাম্বল- আল্লাহ তার চেহারা উজ্জ্বল করুন, তার দরজা বুলন্দ করুন, তাকে অঢেল প্রতিদানে ভূষিত করুন- যা বলতেন আমরাও তা বলি। আর যারা তার বিপরীতে যায় আমরা তাদের এড়িয়ে চলি; কেননা তিনি একজন মর্যাদাবান ইমাম ও পূর্ণাঙ্গ নেতা।’

এরপর তিনি ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল র. এর মাধ্যমে যে সত্য প্রকাশিত হয়েছে তার জন্য তার প্রশংসা করেন এবং সিফাতসমূহ আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত হওয়া, তাকদীর সম্পর্কে কিছু মাসআলা, শাফাআত এবং কিছু ওহীনির্ভর বিষয়ের কথা উল্লেখ করেন এবং তিনি তা ওহী ও যুক্তির মাধ্যমে প্রমাণিত করেন।

পরবর্তী যুগে যারা এসেছে এবং ইমাম আশ‘আরীর অনুসারী বলে দাবি করেছে তারা তার আকীদাগত জীবনের দ্বিতীয় পর্যায়ের কথাগুলো নিয়েছে এবং সকল সিফাতের ক্ষেত্রে তাবীলের পথ বেছে নিয়েছে। তারা কেবল সাতটি সিফাত আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করেছে যা নিম্নোক্ত কবিতায় সন্নিবিষ্ট:

حــي عليـم قدير والكلام لـــه إرادة وكذلك السمع والبصر

অর্থাৎ -চিরঞ্জীব, সর্বজ্ঞ, সর্বক্ষমতাবান, কথা, ইচ্ছা, শ্রবণ ও দর্শন।

এ সিফাতগুলো সাব্যস্ত করার ধরণ কি হবে সে ব্যাপারেও আহলে সুন্নত ও তাদের মধ্যে মতপার্থক্য আছে।

আশ‘আরিয়া সম্প্রদায় সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তা উল্লেখ করে ইমাম ইবনে তাইমিয়া র. বলেন: ‘যারা আশ‘আরিয়াদের সমালোচনা করেছেন তাদের উদ্দেশ্য হলো ওইসব আশ‘আরী যারা আল্লাহ তা‘আলার ওইসব সিফাতসমূহকে নাকচ করে দেয় যার সংবাদ কুরআন-সুন্নাহয় এসেছে। আর ইমাম আশ‘আরী তাঁর শেষ জীবনে ‘আল ইবানা’ নামক যে গ্রন্থটি লিখেছিলেন সে গ্রন্থের বক্তব্য যারা মেনে নেয় তারা আহলে সুন্নতের মধ্যে শামিল।’ (মাজমুউল ফাতাওয়া, খণ্ড ৬, পৃ. ৩৫৯)

ইমাম ইবনে তাইমিয়া এর পূর্বে পৃষ্ঠা নং ৩১০-এ বলেছেন: ‘আশআরিয়ারা হলো তাদের বিপরীত (অর্থাৎ ইমাম আবুল হাসান আল আশ‘আরীর প্রকৃত অনুসারীদের বিপরীত)। তাদের কথা তা‘তীল (আল্লাহর সিফাত বাতিল করে দেওয়া)-কে আবশ্যক করে দেয়। তারা বলে যে, আল্লাহ তা‘আলা না এ মহাবিশ্বের ভিতরে, না তার বাইরে। তারা বলে যে আল্লাহর সকল কথার অর্থ এক। আয়াতুল কুরসী যে অর্থ ব্যক্ত করে, ঋণ বিষয়ক আয়াতও অভিন্ন অর্থ ব্যক্ত করে। তাওরাত ও ইঞ্জীলও একই অর্থ বহন করে। আর এটা স্পষ্ট বাতিল কথা।’

ইমাম ইবনুল কাইয়েম তার এক কবিতায় বলেন:

واعلم بأن طريقهم عكس الـ ـطريق المستقيم لمن له عينان

জেনে রাখুন যে তাদের পথ সিরাতুল মুস্তাকিম থেকে আলাদা

দুচোখ আছে যার তার কাছে।[3]

শায়খ মুহাম্মদ আমীন আশ্শানকিতী তার তাফসীর গ্রন্থ ‘আদওয়াউল বায়ান’- এ সূরায়ে আ‘রাফে আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক আরশের ওপরে ওঠা বিষয়ক আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘জেনে রাখুন যে, পরবর্তী যুগের অসংখ্য মানুষ এই বিষয়ে ভুল করেছে। তারা ধারণা করেছে যে, ‘ইস্তিওয়া’ এবং ‘হাত’ শব্দের বাহ্যিক যে অর্থ তাৎক্ষণিকভাবে মাথায় আসে, তা সৃষ্টিজীবের গুণের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ বলে মনে হয়। তারা বলেছে যে, ‘এ শব্দদ্বয়কে বাহ্যিক অর্থ থেকে সরিয়ে নেওয়া ইজমায়ে উম্মত অনুযায়ী ওয়াজিব।’

তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির সামান্য আকল-বুদ্ধি আছে, তার কাছে এ কথাটি অত্যন্ত পরিস্কার যে, উল্লিখিত কথার মর্ম হলো, আল্লাহ তা‘আলা, আল কুরআনে, নিজেকে এমনসব গুণে গুণান্বিত করেছেন যার তাৎক্ষণিক বাহ্যিক অর্থ আল্লাহর প্রতি কুফরী করা এবং আল্লাহর ব্যাপারে এমন কথা বলা হিসেবে সাব্যস্ত হয় যা আল্লাহর ক্ষেত্রে উপযোগী নয়। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যার ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿وَأَنزَلۡنَآ إِلَيۡكَ ٱلذِّكۡرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيۡهِمۡ [النحل: ٤٤]

এবং আমি তোমার প্রতি নাযিল করেছি কুরআন, যাতে তুমি মানুষের জন্য স্পষ্ট করে দিতে পার, যা তাদের প্রতি নাযিল হয়েছে। (সূরা আন্-নাহল: ১৬: ৪৪)

সেই নবী এ ব্যাপারে একটি অক্ষরও স্পষ্ট করলেন না, অথচ নির্ভরযোগ্য আলেমদের ইজমা অনুযায়ী, যে সময় কোনো আয়াতের বক্তব্যকে স্পষ্ট করতে হবে সে সময় থেকে স্পষ্টকরণ প্রক্রিয়াকে পিছিয়ে দেওয়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য জায়েয নয়। আর তা যদি আকীদার ব্যাপারে হয় যার বাহ্যিক অর্থ কুফরী এবং স্পষ্ট গোমরাহী, তবে তো স্পষ্ট করার গুরুত্ব আরো বেড়ে যায়। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্পষ্ট করলেন না, এমনকি পরিশেষে ওইসব অজ্ঞ লোকদের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন পড়ে যারা ধারণা করেছে যে, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিজের ওপর এমন সিফাত আরোপ করেছেন যার বাহ্যিক অর্থ আল্লাহর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়টি অব্যক্ত রেখে গেলেন যে, এ বাণীগুলোর বাহ্যিক অর্থ কুফরী ও গোমারাহী। এটা কিছুতেই হতে পারে না। অতএব তারা যা করেছে তা কেবলই খেয়াল-খুশি মুতাবেক করেছে, তারা এ ক্ষেত্রে কুরআন-সুন্নাহর আশ্রয়ে যায়নি। এটা এক মিথ্যাচার যা থেকে আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র। এটা সবচেয়ে বড় গোমারাহী এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ওপর চরম মিথ্যাচার।

যে ব্যক্তির সামান্যতম আকলবুদ্ধি আছে, সে এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ করে না যে, প্রত্যেক ওই গুণ যা দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা নিজেকে গুণান্বিত করেছেন, অথবা যা দ্বারা রাসূল তাঁকে গুণান্বিত করেছেন, যে ব্যক্তির অন্তরে সামান্য পরিমাণ ঈমানও রয়েছে, এ গুণগুলো শোনামাত্র তাৎক্ষণিকভাবে তার মাথায় যে বিষয়টি আসে তা হলো আল্লাহ তা‘আলার গুণকে মাখলুকের গুণের সাদৃশ্যতা থেকে পবিত্র মনে করে বাহ্যিক অর্থটাকে বুঝা। সৃষ্টিকর্তা সৃষ্টবস্তু থেকে সত্তায় ও গুণে সম্পূর্ণ আলাদা, এ বিষয়টি কি কেউ অস্বীকার করতে পারে? না, পারে না। যারা সত্যকে অমান্য করে তারা ব্যতীত এ বিষয়টিকে কেউ অস্বীকার করতে পারে না।

আর ওই অজ্ঞ মিথ্যাচারী ব্যক্তি, যে মনে করে যে, সিফাত-বিষয়ক আয়াতের বাহ্যিক অর্থ আল্লাহর জন্যে উপযোগী নয়; কেননা তা তার কাছে কুফরী ও তাশবীহ (মাখলুকের সঙ্গে সাদৃশ্যকরণ), সে এরূপ কথা এ জন্য বলতে পেরেছে যে, তার অন্তর খালেক ও মাখলুকের মধ্যে সাদৃশ্যকরণের পঙ্কিলতায় নাপাক হয়ে আছে। তাই সাদৃশ্যকরণের আপদ তাকে আল্লাহর সিফাত অস্বীকার করার দিকে নিয়ে গেছে। আল্লাহর সিফাতের প্রতি ঈমান না আনার দিকে নিয়ে গেছে। অথচ আল্লাহ তা‘আলা স্বয়ং নিজেকে এসব গুণে গুণান্বিত করেছেন। অতএব এই জাহেল প্রথমে নিজে মুশাবিবহ তথা সাদৃশ্যকারী হয়েছে, এবং পরবর্তীতে মু‘আত্তিল তথা আল্লাহর সিফাত বাতিলকারী হয়েছে। অতএব আল্লাহর জন্য যা উপযোগী নয়, এমন কথা বলার পাপে সে শুরুতে যেমনি শেষেও তেমনি, জড়িয়ে পড়েছে। যদি তার অন্তর যথার্থরূপে আল্লাহ তা‘আলাকে চিনতে পারত। আল্লাহ তা‘আলাকে যথার্থরূপে তা‘যীম করতে জানত, তাহলে সে তাশবীহ (সাদৃশ্যকরণ) এর পঙ্কিলতা থেকে নিজেকে পবিত্র করে নিত। সে আল্লাহ তা‘আলার গুণবাচক বাণীসমূহের বাহ্যিক অর্থকে মাখলুকের সঙ্গে সকল সাদৃশ্যতা থেকে ঊর্ধ্বে বলে বিশ্বাস করত এবং তার অন্তর কুরআন-সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত আল্লাহ তা‘আলার সকল সিফাতে কামালের প্রতি ঈমান আনার জন্য প্রস্তুত থাকত। পাশাপাশি সে আল্লাহর সকল গুণকে মাখলুকের গুণের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ ভাবা থেকে পবিত্র থাকত। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ١١ ﴾ [الشورى: ١١]

তাঁর মত কিছু নেই, আর তিনি হলেন সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। (আশশূরা: ৪২: ১১)’[4]আর ইমাম আবুল হাসান আল আশ‘আরী র. তার শেষ জীবনে, আহলে সুন্নত ও আহলে হাদীসের মাযহাবের ওপর ছিলেন। আর তা হলো আল্লাহ তা‘আলা তাঁর কিতাবে তাঁর নিজের জন্য যেসব সিফাত সাব্যস্ত করেছেন অথবা রাসূলের মাধ্যমে যেসব সিফাত সাব্যস্ত করেছেন, সেসব সিফাতকে কোনো বিকৃতি সাধন, বাতিলকরণ, ধরন-ধারণ নির্ধারণকরণ এবং উদাহরণ নির্ণয়করণ ব্যতীতই মেনে নেওয়া। আর মানুষের মাযহাব হলো সেটা যা সে শেষ জীবনে লালন করে, যদি তার কথা এ ব্যাপারে পরিষ্কার থাকে যে, এর বাইরে তার কোনো বক্তব্য নেই, যেমনটি করেছেন আবুল হাসান আশ‘আরী র.। ‘আল ইবানা’ গ্রন্থে থাকা আশ‘আরী এর বক্তব্য থেকে আমরা এটাই বুঝতে পারি। অতএব পরিপূর্ণরূপে ইমাম আশ‘আরী র. এর অনুসরণ করতে হলে তিনি তার জীবনের শেষ ভাগে যার ওপর ছিলেন তার অনুসরণ করতে হবে। আর তা হলো আহলে সুন্নত ও আহলে হাদীসের মাযহাব অনুসরণ করা। কেননা এটাই হলো সঠিক মাযহাব যার অনুসরণ ইমাম আবুল হাসান আল আশ‘আরী র. করেছেন।

>
[1] - শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া, মাজমুউল ফাতাওয়া, খন্ড. ৪, পৃষ্ঠা. ৭২

[2] - মাজমুউল ফাতাওয়া, খন্ড ১৬, পৃ. ৪৭১

[3] - আন-নুনিয়াহ, হাররাসের ব্যাখ্যাসহ, পৃ. ৩১২

[4]- তাফসীর আদওয়াউল বায়ান, ২/৩১৯।