কেউ যদি এ প্রশ্ন করে যে, কুরআনের কোথায় সালাতের রাকা‘আতসমূহের বর্ণনা রয়েছে? যদি আমরা কুরআনে সালাতের রাকাতসমূহের বর্ণনা না পাই তাহলে আল্লাহ তা‘আলার বাণী,
﴿وَنَزَّلۡنَا عَلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ تِبۡيَٰنٗا لِّكُلِّ شَيۡءٖ وَهُدٗى وَرَحۡمَةٗ وَبُشۡرَىٰ لِلۡمُسۡلِمِينَ ٨٩﴾ [النحل: ٨٩]
“আর আমরা আপনার ওপর কিতাব নাযিল করেছি প্রতিটি বিষয়ের স্পষ্ট বর্ণনা, হিদায়াত, রহমত ও মুসলিমদের জন্য সুসংবাদস্বরূপ”। [সূরা আন-নাহাল, আয়াত: ৮৯] – এ দাবি কীভাবে সঠিক হয়ে থাকে?
এর উত্তর হলো, আল্লাহ তা‘আলা তার স্বীয় কিতাবে আমাদের এ নির্দেশ দিয়ে বলেছেন যে, আমাদের জন্য ওয়াজিব হলো, আমরা যেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন এবং তিনি যে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন তার অনুসরণ করি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿مَّن يُطِعِ ٱلرَّسُولَ فَقَدۡ أَطَاعَ ٱللَّهَۖ وَمَن تَوَلَّىٰ فَمَآ أَرۡسَلۡنَٰكَ عَلَيۡهِمۡ حَفِيظٗا ٨٠﴾ [النساء : ٨٠]
“যে রাসূলের আনুগত্য করল, সে আল্লাহরই আনুগত্য করল। আর যে বিমুখ হলো, তবে আমি তোমাকে তাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক করে প্রেরণ করি নি”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৮০]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿وَمَآ ءَاتَىٰكُمُ ٱلرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَىٰكُمۡ عَنۡهُ فَٱنتَهُواْۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَۖ إِنَّ ٱللَّهَ شَدِيدُ ٱلۡعِقَابِ ٧﴾ [الحشر: ٧]
“রাসূল তোমাদের যা দেয় তা গ্রহণ কর, আর যা থেকে সে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও এবং আল্লাহকেই ভয় কর, নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি প্রদানে কঠোর”। [সূরা আল-হাসর, আয়াত: ৭]
সুন্নত দ্বারা বর্ণিত বিষয়গুলো অবশ্যই কুরআনে নির্দেশিত। কারণ, সুন্নাত অহীর প্রকারদ্বয়ের এক প্রকার; যা আল্লাহ তা‘আলা তার রাসূলের ওপর নাযিল করেছেন এবং তাকে শিক্ষা দিয়েছেন। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَأَنزَلَ ٱللَّهُ عَلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ وَٱلۡحِكۡمَةَ وَعَلَّمَكَ مَا لَمۡ تَكُن تَعۡلَمُۚ وَكَانَ فَضۡلُ ٱللَّهِ عَلَيۡكَ عَظِيمٗا ١١٣﴾ [النساء : ١١٣]
“আর আল্লাহ তোমার প্রতি নাযিল করেছেন কিতাব ও হিকমাত এবং তোমাকে শিক্ষা দিয়েছেন যা তুমি জানতে না। আর তোমার উপর আল্লাহর অনুগ্রহ রয়েছে মহান”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১১৩]
এরই ভিত্তিতে বলা চলে যা সুন্নাতে বর্ণিত হয়েছে, তা মূলত কুরআনেরই বর্ণনা।
হে আমার ভাইয়েরা!
যখন তোমাদের নিকট বিষয়টি স্পষ্ট হলো, তা হলে তোমরা বল, যে দীন তোমাদেরকে আল্লাহর নিকট পৌঁছে দেবে সে দীনের এমন কোন বিধান অবশিষ্ট আছে কি যার বর্ণনা তোমাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেন নি, অথচ তিনি দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে গেছেন? কখনই না!
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীনের যাবতীয় সবকিছুই তার কথা, কর্ম, ও স্বীকৃতি দ্বারা বাতলিয়ে দিয়েছেন। কখনো তিনি পূর্ণাঙ্গ বাক্য দ্বারা, আবার কখনো প্রশ্নের উত্তর দ্বারা, আবার কখনো আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে কোনো অপরিচিত লোককে পাঠানো দ্বারা -আল্লাহ তাকে পাঠাতেন যাতে রাসূলের দরবারে এসে দীনের এমন বিষয়গুলো জিজ্ঞাসা করত যা রাসূলের সাথে সার্বক্ষণিক অবস্থানকারী সাহাবীরা জিজ্ঞাসা করত না। এ কারণেই তারা রাসূলের দরবারে এমন একজন গ্রাম্য লোকের আগমনে তারা খুশি হতো, যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গুরুত্বপূর্ণ মাসায়েল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে।
একজন মানুষ তার ইবাদত, মু‘আমালা ও মু‘আশারাসহ যাবতীয় বিষয়ে যত কিছুর প্রয়োজন অনুভব করে তার সবকিছুর বর্ণনাই আল্লাহর রাসূল তাদের জন্য তুলে ধরেছেন। এর প্রমাণ আল্লাহ তা‘আলার বাণী -তিনি বলেন,
﴿ٱلۡيَوۡمَ أَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِينَكُمۡ وَأَتۡمَمۡتُ عَلَيۡكُمۡ نِعۡمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ ٱلۡإِسۡلَٰمَ دِينٗاۚ ٣﴾ [المائدة: ٣]
“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নিআমত সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দীন হিসেবে পছন্দ করলাম ইসলামকে”। [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৩]