উত্তরঃ প্রিয় পাঠক! আল্লাহ তা‘আলার বাণীর প্রতি লক্ষ্য করুন:
﴿فَوَيۡلٞ لِّلۡمُصَلِّينَ ٤ ٱلَّذِينَ هُمۡ عَن صَلَاتِهِمۡ سَاهُونَ ٥﴾ [الماعون: ٤، ٥]
“সুতরাং দুর্ভোগ (‘ওয়াইল’ জাহান্নামের একটি স্থান) সেই সালাত আদায়কারীদের যারা তাদের সালাত সম্পর্কে উদাসীন।” [সূরা আল-মাউন, আয়াত: ৪-৫]
তাফসীরকারকগণ এই আয়াতের তাফসীর করেন যে, এই আয়াত দ্বারা ঐ সমস্ত লোক বুঝায়, যারা সালাতকে তার সময় থেকে পিছিয়ে অসময়ে আদায় করে। সা‘দ ইবন আবী ওয়াক্কাস থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ٱلَّذِينَ هُمۡ عَن صَلَاتِهِمۡ سَاهُونَ আয়াতটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি উত্তর দেন “এরা ঐ সমস্ত মানুষ যারা সালাতকে তার (প্রকৃত) সময়ে আদায় না করে পরে আদায় করে”। (তাফসীর ইবন কাসীর)
আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে মুসল্লী (সালাত আদায়কারী) নামে অভিহিত করা সত্ত্বেও তাদেরকে ওয়াইলের হুশিয়ারী দিয়েছেন। কেননা তারা সালাত প্রকৃত সময়ের পরে আদায় করে। অতএব, সালাতকে আপন ওয়াক্ত থেকে পরে আদায় করার জন্য আল্লাহ যাদেরকে ওয়াইলের হুশিয়ারী দিয়েছেন, তারা কীভাবে উপরোক্ত উপকারিতা ও ফযীলতের অধিকারী হবে?
সুতরাং সালাতের জন্য রয়েছে নির্ধারিত ওয়াক্ত। শর‘ঈ ওযর ব্যতীত নির্ধারিত ওয়াক্ত নষ্ট করা যাবে না। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّ ٱلصَّلَوٰةَ كَانَتۡ عَلَى ٱلۡمُؤۡمِنِينَ كِتَٰبٗا مَّوۡقُوتٗا﴾ [النساء: ١٠٣]
“নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করা মুমিনদের জন্য অবশ্য কর্তব্য।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১০৩]
ইবন কাসীর রহ. তার তাফসীর গ্রন্থে উল্লেখ করেন: “ইবন আব্বাস “মাওকূতান” এর তাফসীরে ফরয অর্থ নিয়েছেন”। তিনি আরো উল্লেখ করেন: “হজের মতো সালাতেরও সময় নির্ধারিত”। অতঃপর তিনি বর্ণনা করেন: “ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, হজের মতো সালাতেরও একটি নির্ধারিত সময় রয়েছে”।
প্রিয় পাঠক! (আপনার প্রতি আল্লাহ রহম করুন) সাহাবীগণের যুগের তাফসীরের ইমামদের প্রতি লক্ষ্য করুন। ইবন মাসউদ ও ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা কীভাবে হজের মতো সালাতেরও এক নির্ধারিত সময় সাব্যস্ত করেছেন। আর কে আছে এমন যে হজ নির্ধারিত সময়ে আদায় না করে তা অসময়ে আদায় করবে? সালাতেরও সময় এমনি নির্ধারিত, কোনো শর‘ঈ ওযর ব্যতীত নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় না করলে আল্লাহ কবুল করবেন না।
সম্মানিত পাঠক! নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণীর প্রতি লক্ষ্য করুন: “যে ব্যক্তি সালাতের হিফাযত করল, সালাত তার জন্য কিয়ামতের দিন জ্যোতি, দলীল-প্রমাণ ও নাযাতের উসীলা হবে। আর যে ব্যক্তি সালাতের হিফাযত করল না, তার জন্য সালাত কিয়ামতের দিন জ্যোতি, প্রমাণ ও নাযাতের উসীলা হবে না, বরং কারূন, ফিরআউন, হামান এবং উবাই ইবন খালাফের সাথে তার হাশর (পুনরুত্থান) হবে”। (মুসনাদে আহমদ)
আর যে ব্যক্তি সালাত ঠিক সময়ে আদায় করল না, সে সালাতের হিফাযতও করল না।
অতএব, সালাত নির্ধারিত সময়ে আদায়ে তৎপর হোন ও এর প্রতি গুরুত্ব দিন। সালাতের নিয়ম-কানূন শিখার প্রতিও তেমনি তৎপর হউন, কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«صلوا كما رأيتموني أصلى»
“তোমরা সেভাবে সালাত পড় যেভাবে আমাকে সালাত পড়তে দেখ।” (সহীহ বুখারী)
সহীহ বুখারী ও মুসলিমে রয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশ করলেন। এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি প্রবেশ করল ও সালাত আদায় করল তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে সালাম দিল। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ফিরে যাও পুনরায় সালাত আদায় কর, কেননা তুমি সালাতই আদায় কর নি। সে তিনবার একইভাবে আদায় করল।” নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই লোকটির ওপর বিধান আরোপ করলেন যে, সে সালাতই আদায় করে নি শুধু তার সালাতে স্থিরতা না থাকার কারণে। আর এ জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে শিক্ষা দিয়ে দিলেন সালাত কীভাবে আদায় করতে হয়।
অতএব, আমরা পরিশেষে উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এ ফলাফলে পৌঁছতে পারি যে, সালাত অবশ্যই যথাসময়ে আদায় করতে হবে এবং তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সালাতেরই অনুরূপ হতে হবে। তবেই ইনশাআল্লাহ উক্ত সালাত গ্রহণযোগ্য ও উপকারী হবে এবং দুনিয়াতেও তার ফল প্রকাশিত হবে।