আমরা পূর্বে আলোচনা করেছি যে, ফকীর ও মিসকীন যাকাতের হকদার, তবে শরী‘আত উদ্বুদ্ধ করেছে ভিক্ষা ও ভিক্ষার ভান থেকে পবিত্র থাকার বিষয়ে। সহীহ সনদে সাব্যস্ত হয়েছে, কয়েকজন আনসারি সাহাবি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট যাচ্ঞা করল, তিনি তাদেরকে দিলেন, তারা আবার চাইলে তিনি আবারও তাদের দিলেন, যখন সবশেষ হল, তখন তিনি বললেন:
«ما يَكُنْ عندي مِن خيرٍ فلن أدَّخِرَهُ عنكم، وَمَن يَستعفِف يُعِفهُ الله، وَمَن يَستغنَ يُغنِهِ الله، وَمَن يتصبر يُصَبِّرْهُ الله، وما أعطِيَ أحدٌ مِن عَطَاءٍ خيراً وأوْسَعَ مِن الصبر».
“আমার নিকট যে কল্যাণ (সম্পদ) থাকবে, সেগুলো আমি তোমাদেরকে না দিয়ে জমা করে রাখব না, তবে যে পাক থাকতে চায় আল্লাহ তাকে পাক রাখেন, যে অমুখাপেক্ষী থাকতে চায় আল্লাহ তাকে অমুখাপেক্ষী রাখেন। যে ধৈর্য ধারণ করে আল্লাহ তাকে ধৈর্য ধরার তাওফীক দেন, তবে কাউকে ধৈর্য থেকে উত্তম ও প্রশস্ত কল্যাণ দান করা হয় নি”।[1]
অপর হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لِأنْ يَغدُو أحدُكُم فيَحْتَطِب على ظهره (يعني يَحمِل الحَطَب على ظهره)، فيتصدق به (يعني يتصدق بهذا المال على نفسه، بأن يكفي حاجاتِه وحاجة مَن يَعول)، ويستغنِي عن الناس خيرٌ له مِن أن يسأل رجلاً أعطاهُ أو مَنَعَهُ، ذلك بأنَّ اليَد العُليا أفضل مِن اليَدِ السُفلَى، وابدأ بمَن تَعُول».
“তোমাদের কেউ ভোরে বের হবে ও নিজের পিঠে লাকড়ি বহন করবে, অতঃপর তার উপার্জন থেকে সদকা করবে, (অর্থাৎ নিজের প্রয়োজন ও পরিবারের প্রয়োজন পুরণ করবে, যা সদকার অন্তর্ভুক্ত) এবং মানুষ থেকে অমুখাপেক্ষী হবে, এটি তার জন্য যাচ্ঞা করা অপেক্ষা অনেক ভালো, তাকে দেওয়া হোক বা না হোক। কারণ, উপরের হাত নিচের হাত থেকে উত্তম এবং তুমি যার দায়িত্বশীল তাকে দান করার মাধ্যমে সদকা প্রদান আরম্ভ কর”।[2]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
«ليس الغِنَى عن كثرةِ العَرَض (والعَرَض هو متاع الدنيا وحُطَامُها)، إنما الغِنَى: غِنَى النفس».
“অধিক সম্পদ হলেই ধনী হয় না, আসল ধনাঢ্যতা হচ্ছে নফসের ধনাঢ্যতা”।[3]
ভিক্ষা করা হারাম: মানুষের নিকট ভিক্ষা ও যাচ্ঞা করাকে শরী‘আত কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«ما يَزال الرجل يسأل الناس حتى يأتي يوم القيامة وليس في وجهه مُزعَة لحم (يعني قطعة لحم)»
“ব্যক্তি মানুষের নিকট চাইতে থাকে, চাইতে থাকে, অবশেষে কিয়ামতের দিন উঠবে যে, তার চেহারায় মাংসের টুকরো থাকবে না”।[4] কিয়ামতের দিন চেহারায় মাংসের টুকরো থাকবে না প্রসঙ্গে কুরতুবী রহ. বলেন: এতে দু’টি মত রয়েছে:
এক. যার পেশা ও অভ্যাস মানুষের নিকট অবৈধ যাচ্ঞা করা, সে যখন কিয়ামতের দিন উঠবে তার চেহারার মাংস কেটে নেওয়া হবে, ফলে তার চেহারা মাংসহীন কুৎসিত থাকবে।
দুই. কিয়ামতের দিন সে যখন উঠবে আল্লাহর নিকট তার মর্যাদা ও সম্মান থাকবে না।[5]
অতএব, অপারগ না হলে কারও জন্য মানুষের নিকট চাওয়া বৈধ নয়। ইমাম আহমদকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: মানুষ যদি ভিক্ষা করতে বা যাচ্ঞা করতে বাধ্য হয় তবে কী করবে? তিনি বললেন: চাইতে বাধ্য হলে চাওয়া বৈধ। তাকে পুনরায় জিজ্ঞেস করা হল: সে যদি না চেয়ে পবিত্রতা অবলম্বন করে। তিনি বললেন: এটি তার জন্য উত্তম, আল্লাহ তার রিযক নিয়ে আসবেন। অতঃপর তিনি বলেন: আমার মনে হয়ে না কেউ না খেয়ে মারা যাবে, আল্লাহ অবশ্যই তার রিযিক নিয়ে আসবেন।
অতএব, অপারগতার সংজ্ঞা কি, কখন চাওয়া বৈধ, মানুষ কখন প্রশ্ন করতে বাধ্য হয় এসব প্রশ্নের উত্তরে আহলে ইলমগণ ইখতিলাফ করেছেন, তার সারকথা হচ্ছে:
১. কারও নিকট যদি তার অবস্থা মোতাবেক এক দিন ও এক রাতের খাবার থাকে, যাচ্ঞা করে বেড়ানো তার জন্য বৈধ নয়।
২. যাচ্ঞা না করার অর্থ এই নয় যে, কেউ যদি চাওয়া ছাড়া সদকা দেয় সেটি গ্রহণ করা বৈধ নয়, বরং সেটি গ্রহণ করা বৈধ, কারণ সে মুখাপেক্ষী। যদি কেউ চাইতে বাধ্য হয় তবে তার চাওয়া বৈধ, কারণ তার প্রয়োজন থাকতে পারে, তাছাড়া এমন কাজও থাকতে পারে অর্থ ছাড়া যা সম্ভব নয়, এই অবস্থায় চাওয়া তার জন্য বৈধ।
৩. অবস্থা যাই হোক, না চাওয়া উত্তম এতে সন্দেহ নেই, যেমন পূর্বে আমরা ইমাম আহমদের কথা উল্লেখ করেছি। সাওবান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَن يَتكفل لي أن لا يسأل الناس شيئاً، فأتكفل له بالجنة؟ » فقال ثوبان: أنا، فقال - صلى الله عليه وسلم: «لا تسألْ شيئاً» زادَ ابن ماجة: «فكان ثوبان رضي الله عنه يقع سَوْطُهُ وهو راكب، فلا يقول لأحد: (ناولْنِيه)، حتى ينزل فيأخذه»
“মানুষের নিকট না চাওয়ার জিম্মাদারি আমাকে কে দিবে, আমি তার জন্য জান্নাতের জিম্মাদার হব? সাওবান বললেন: আমি; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: কিছু চেয়ো না। ইবন মাজাহ বাড়িয়েছেন: সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহুর অভ্যাস ছিল, তিনি বাহনে থাকাবস্থায় তার চাবুক পড়ে যেত, কিন্তু কাউকে বলতেন না ‘চাবুকটি উঠিয়ে দাও’। তিনি নেমে নিজেই উঠিয়ে নিতেন সেটি।[6]
>[2] সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম।
[3] সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম।
[4] সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম।
[5] কামহুল হিরস, লিল কুরতুবি: (পৃ.১৯)
[6] সহীহ আবু দাউদ (১৬৩৯)।
-------------------------------
সংক্ষেপ করার দায়ভার লিখকের
এই কিতাব মূলত শাইখ ‘আদিল ‘আয্যাযী লিখিত (تمام المِنّة في فِقه الكتاب وصحيح السُنّة) গ্রন্থের সারসংক্ষেপ, যিনি আরও দলীল ও মতামত জানতে চান, তিনি মূল কিতাব দেখুন।