যাকাতুল ফিতর কখন ওয়াজিব হয়, আলিমগণ দু’টি মত বলেছেন:
এক. বিশুদ্ধ মতে রমযানের সর্বশেষ দিনে সূর্যাস্ত থেকে যাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হয়।
দুই. ঈদের দিন ফজর উদিত হওয়া থেকে ওয়াজিব হয়।
অতএব, যদি রমযানের শেষ দিন কোনো বাচ্চা জন্ম নেয় তার ওপর যাকাতুল ফিতর ওয়াজিব, সবাই বলেন। কারণ, সে সূর্যাস্ত পেয়েছে। আর যদি সূর্যাস্ত শেষে ও ঈদের দিন ফজর উদিত হওয়ার আগে জন্ম নেয়, তাহলে যারা দ্বিতীয় মত গ্রহণ করেন তাদের নিকট যাকাত ওয়াজিব, প্রথম মত গ্রহণকারীদের নিকট ওয়াজিব হবে না, তবে যাকাত ওয়াজিব না হওয়ার মত অধিক বিশুদ্ধ। অনুরূপ সূর্যাস্তের পূর্বে যে ইসলাম গ্রহণ করবে তার ওপর যাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হবে। আর যে সূর্যাস্তের পর ও ফজর উদিত হওয়ার আগে ইসলাম গ্রহণ করবে তার ওপর যাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হবে না। এটিই বিশুদ্ধ মত।
যাকাতুল ফিতরের সর্বশেষ সময়: ঈদের সালাত শুরু হলে যাকাতুল ফিতরের সময় শেষ হয়। অতএব, যাকাতুল ফিতর সালাতের পর পর্যন্ত বিলম্ব করা বৈধ নয়। যদি ঈদের দিন থেকেও সদকা পিছিয়ে দেয় কঠিন পাপ হবে। ইবন কুদামাহ রহ. ‘আল-মুগনী’ গ্রন্থে বলেন: “সদকাতুল ফিতর যদি ঈদের দিন থেকেও পিছিয়ে প্রদান করে তবে তাতে গুনাহ হবে এবং তার কাযা আদায় করা জরুরি”। এখানে কাযার অর্থ তওবার একটি নমূনা পেশ করা, হয়ত আল্লাহ তাকে মাফ করবেন। এতে সদকাতুল ফিতর আদায় হয় না, সাধারণ সদকা হয়, যেমন কুরবানির সালাতের পূর্বে পশু যবেহ করলে সাধারণ যবেহ হয়, কুরবানি হয় না।
একটি জিজ্ঞাসা: সময় হওয়ার পূর্বে সদকাতুল ফিতর আদায় করা কি বৈধ? এ প্রশ্নের উত্তরে আহলে ইলমগণ মতভেদ করেছেন, বিশুদ্ধ মতে এক দিন বা দু’দিন পূর্বে আদায় করা বৈধ, কেউ যদি প্রয়োজন বুঝে দু’দিন পূর্বেও আদায় করে, সেটিও আমাদের দৃষ্টিতে বৈধ। দীনকে সহজ রাখার দাবি এটি।
কয়েকটি জ্ঞাতব্য:
১. যাকাতুল ফিতর আদায় করার জন্য প্রতিনিধি করা বৈধ। যেমন, কাউকে যাকাতুল ফিতরের নগদ অর্থ দিয়ে দিবে, সে অর্থ দ্বারা খাবার কিনে তার পক্ষ থেকে খাবার বণ্টন করবে। সদকাতুল ফিতরের অর্থ দেওয়ার নিয়ম হচ্ছে, আগে এক ‘সা’ অর্থাৎ ২.৩ কেজি চাউলের বাজার দর জানবে, যেমন পূর্বে বলেছি। অতঃপর বাজার দর হিসেব করে প্রতিনিধিকে টাকা দিবে, প্রতিনিধি চাউল কিনে তার পক্ষে যাকাতুল ফিতর বণ্টন করবে। উদাহরণত কেউ যদি নিজের ও পরিবারের পক্ষে চার ‘সা’ আদায় করার ইচ্ছা করে, সে ৪*২.৩=৯.২ কেজি চাউলকে এক কেজি চাউলের বাজার দর দিয়ে গুণ দিবে, যে অংক আসবে তাই প্রতিনিধির হাতে সোপর্দ করবে।
২. মুসলিম শাসক, নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি বা তার প্রতিনিধির জন্য বৈধ ঈদের পূর্বে যাকাতুল ফিতর সংগ্রহ করে গুদামজাত করে রাখা, যেন ঈদের সালাতের পর সুষ্ঠুভাবে ফকীরদের মাঝে বণ্টন করা সহজ হয়।
৩. যদি অপারগতার কারণে যাকাতুল ফিতর আদায় করতে দেরি হয়, যেমন শাওয়ালের চাঁদ সম্পর্কে সফর অবস্থায় জেনেছে অথবা সঠিক সময়ে যাকাত গ্রহণকারী কাউকে পায়নি, তাহলে সে অপরাধী সাব্যস্ত হবে না, তবে তার ওপর যাকাত ওয়াজিব থাকবে, যখন সুযোগ হবে তখন আদায় করবে।
৪. নিজের ও পরিবারের একাধিক সদস্যের যাকাতুল ফিতর একজন ফকীরকে দেওয়া বৈধ। অনুরূপভাবে একটি যাকাতুর ফিতর একাধিক ফকীরকে ভাগ করে দেওয়াও বৈধ।