যাকাতুল ফিতর সংক্রান্ত কয়েকটি মাসআলা:

১. স্ত্রীর যাকাতুল ফিতর: কতক আলিম বলেছেন: স্ত্রী যদি সম্পদের মালিক হয়, নিজের ফিতরাহ নিজেই দিবে, কারণ তার ফিতরাহ তার ওপর ওয়াজিব। অধিকাংশ আলিম বলেছেন: স্ত্রীর ফিতরাহ বা যাকাতুল ফিতর স্বামীর ওপর ওয়াজিব, কারণ স্ত্রীর খরচ তার জিম্মায়। শাইখ উসাইমীন রহ. প্রথম ব্যক্তকে প্রাধান্য দিয়েছেন, অতঃপর তিনি বলেন: “তবে নারীর অনুমতি সাপেক্ষে তার অভিভাবক আদায় করলে যথেষ্ট হবে, এতে কোনো পাপ ও সমস্যা নেই”।[1] অনুরূপ কর্মঠ ও দায়িত্বশীল ছেলে যদি নিজের পিতা-মাতা এবং অন্যান্য দায়িত্বশীলদের পক্ষ থেকে যাকাতুল ফিতর আদায় করে তাহলে তা জায়েয আছে।

শাইখ আদিল আযযাযী বলেছেন: “দাস-দাসীর যাকাতুল ফিতর মালিকের সম্পদে ওয়াজিব হবে, এটি ঐচ্ছিক নয় আবশ্যিক। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«ليسَ في العبدِ صدقة - أي: على سيده - إلا صدقة الفِطر».

“দাস-দাসীর ওপর, অর্থাৎ তাদের মনিবের ওপর কোনো সদকা নেই, তবে সদকাতুল ফিতর ব্যতীত”।[2]

২. ছোট বাচ্চার যাকাতুল ফিতর: বিশুদ্ধ মত মোতাবেক ছোট বাচ্চার ওপর যাকাতুল ফিতর ওয়াজিব, কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম "والصغير والكبير" (ছোট-বড়) দু’টি শব্দ উল্লেখ করেছেন। অতএব, ছোট বাচ্চা যদি সম্পদের মালিক হয়, তার ফিতরাহ তার সম্পদ থেকে দিবে। আর সে যদি সম্পদের মালিক না হয়, যার ওপর তার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব সেই তার ফিতরাহ দিবে। এটি অধিকাংশ আলিমের মত।

৩. পেটের বাচ্চার যাকাতুল ফিতর: অধিকাংশ আলিম বলেছেন পেটের বাচ্চার ওপর যাকাতুল ফিতর ওয়াজিব নয়। এটি বিশুদ্ধতম মত।

৪. যাকাতুল ফিতরের নিসাব কত? অর্থাৎ যাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ থাকা জরুরি কি, যা থাকলে ওয়াজিব হবে, অন্যথায় হবে না?

পূর্বের হাদীসে এসেছে যে, যাকাতুল ফিতর (স্বাধীন-পরাধীন) সবার ওপর ওয়াজিব। ধনী বা ফকীর কোনও শর্ত নেই। অধিকাংশ আলিম যাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হওয়ার জন্য ইসলাম ব্যতীত কোনো শর্তারোপ করেন নি, বরং ঈদের দিন-রাতের ব্যয়, জরুরি খরচ ও পরিবারের মৌলিক প্রয়োজন থেকে সম্পদ বেশি হলেই যাকাতুল ফিতর ওয়াজিব, যার আলোচনা পূর্বে করেছি। বস্তুত সদকাতুল ফিতর বের করার জন্য নির্দিষ্ট অর্থ অথবা নির্দিষ্ট পরিমাণ খাবার থাকা জরুরি নয়।

আরেকটি বিষয় জানা উচিৎ যে, যার পক্ষ থেকে যাকাতুল ফিতর বের করা হচ্ছে তার রমযানের সিয়াম রাখা জরুরি নয়। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছোট-বড় বলেছেন। ছোটদের ওপর সিয়াম ওয়াজিব নয় সবাই জানি। অতএব, নারী যদি পুরো রমযান মাস নিফাসের হালতে থাকে তার ওপর যাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হবে, সে নিজের সম্পদ থেকে দিবে কিংবা স্বামীর সম্পদ থেকে দিবে, পূর্বে যেরূপ আলোচনা করেছি।৫. যাকাতুল ফিতরের পরিমাণ: রমযান শেষে নিজ নিজ দেশের এক ‘সা’ সাধারণ খাবার যাকাতুল ফিতর হিসেবে সদকা করা ওয়াজিব। অতএব, যদি দেশের প্রধান বা সাধারণ খাবার গম হয় এক ‘সা’ গম সদকা করবে। অথবা এক ‘সা’ কিশমিশ সদকা করবে, যদি দেশের প্রধান খাদ্য কিশমিশ হয়। অথবা এক ‘সা’ খেজুর সদকা করবে, যদি দেশের প্রধান খাদ্য খেজুর হয়। অথবা এক ‘সা’ অন্য খাবার সদকা করবে, যা দেশের প্রধান ও মৌলিক খাবার, যেমন চাল, গম ও ভুট্টা ইত্যাদি।

>
[1] আশ-শারহুল মুমতি‘: (৬/১৫৬)।

[2] সিলসিলাহ সহীহাহ: (৫/২২০)।