১. কোন কোন ফসলের ওপর যাকাত ওয়াজিব?

হাদীসে যেসব ফসলের নাম উল্লেখ করে যাকাত নির্ধারণ করা হয়েছে সেগুলো চার প্রকার: ক. الحِنطة বা গম, খ. الشعير বা যব, গ. التمر বা খেজুর, ও ঘ. الزبيب বা কিশমিশ।

জ্ঞাতব্য যে, এই চার প্রকার ব্যতীত অন্যান্য ফল ও ফসলে যাকাত ওয়াজিব হবে কি না আহলে ইলমগণ দ্বিমত পোষণ করেছেন, বিশুদ্ধ মত হচ্ছে, (আল্লাহ ভালো জানেন) যেসব ফল ও ফসল খাদ্য ও সঞ্চয় করার উপযুক্ত তাতে যাকাত ওয়াজিব, অর্থাৎ ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করলে নষ্ট হয় না, যেমন ভুট্টা, চাল ও অন্যান্য খাদ্যশস্য। অতএব, শাক-সবজি, জয়তুন ও ফলের ভেতর যাকাত নেই, কাঁচা খেজুর ব্যতীত [কারণ তা সঞ্চয় করা যায়], অনুরূপ আঙ্গুর ব্যতীত। কারণ, আঙ্গুর সঞ্চয় [করা যায়, তা সঞ্চয়] করলে কিশমিশ হয়।

ফল ও ফসলের যাকাতের নিসাব: অধিকাংশ আলিম বলেছেন: ফল ও ফসলের নিসাব পাঁচ ওসাক[1], যা সাধারণত ৬৪৭ কেজি হয়। লক্ষণীয় যে, এই পরিমাপ করবে শস্য খোসা থেকে পরিস্কার করার পর। অনুরূপ ফল শুকানোর পর। উদাহরণত কারও ১০ ওসাক আঙ্গুর আছে, শুকানোর পর যদি পাঁচ ওসাক থেকে কম হয়, তাতে যাকাত ওয়াজিব হবে না, কারণ নিসাব পর্যন্ত পৌঁছেনি, অর্থাৎ পাঁচ ওসাক।[2]

যদি ফল ও ফসল খোসাসহ গুদামজাত করা হয়, বিশুদ্ধ মতে অভিজ্ঞগণ চিন্তা করে বলবেন খোসা থেকে পরিস্কার করা হলে কি পরিমাণ ফসল টিকবে, যদি পাঁচ ওসাক বা তার চেয়ে বেশি টিকে তাতে যাকাত ওয়াজিব হবে।[3]

ফসলে যাকাতের পরিমাণ: দশ ভাগের একভাগ ফসল যাকাত দেওয়া ওয়াজিব, অর্থাৎ মোট ফল ও ফসলের ১০% যাকাত দিবে, যদি প্রাকৃতিক সেচ দিয়ে বিনা খরচে ফসল উৎপন্ন হয়, যেমন নদী-খাল ও বৃষ্টির পানির ফসল। অনুরূপ যে গাছগাছালি লম্বা শিকড় দিয়ে দূর থেকে পানি চুষে নেয়, সেচ করার প্রয়োজন হয় না তার হুকুমও এক, যেমন খেজুর গাছ। আর যদি ফল ও ফসলের জমি টাকা খরচ করে সেচ করা হয়, যেমন মেশিন দিয়ে সেচ করা হয়, তার ৫% অর্থাৎ এক দশমাংশের অর্ধেক বা বিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত দিবে। চার ইমামের মাযহাব এটি, এতে কেউ দ্বিমত করেন নি।

ফল ও ফসলের যাকাত দেওয়ার সময়: বিশুদ্ধ মতে, ফল যখন ব্যবহার উপযোগী হয় ও পেকে যায়, যেমন ফলের আঁটি শক্ত বা খেজুর লাল হয়, তখন তার ওপর যাকাত ওয়াজিব হয়, তবে যখন ফসল খোসা থেকে পরিস্কার করবে বা তাতে মেশিন লাগাবে, তখন আদায় করবে, অনুরূপ খেজুর শুকানোর পর তার যাকাত দিবে।

জ্ঞাতব্য যে, ফসল নিসাব পরিমাণ হওয়ার পর মালিক যেভাবে ইচ্ছা তাতে কর্তৃত্ব করতে পারবে, যেমন বেচা ও হেবা করা ইত্যাদি। যদি ফল উপযুক্ত হওয়ার পর মালিক সেখান থেকে বেচে বা কাউকে হেবা করে, বিশুদ্ধ মতে তার যাকাত মালিকের ওপর ওয়াজিব হবে, অর্থাৎ বিক্রেতার ওপর। কারণ, যখন সে ফল/ফসলের মালিক ছিল, তখন যাকাত ওয়াজিব হয়েছে। এখন চাইলে ফসল কিনে যাকাত দিবে বা সহজতার জন্য টাকাও দিতে পারবে। আর যদি ফল উপযুক্ত হওয়ার পূর্বে বেচে দেয় কিংবা হেবা করে, অতঃপর ক্রেতা কিংবা দান গ্রহীতার কাছে ফল বা ফসল উপযুক্ত হয়, ক্রেতা বা দান গ্রহীতার ওপর যাকাত ওয়াজিব হবে, যদি যাকাত পরিমাণ হয়।[4]জ্ঞাতব্য যে, মালিকের হস্তক্ষেপ বা সীমালঙ্ঘন ছাড়া যদি ফল বা ফসল ধ্বংস হয় তাতে যাকাত ওয়াজিব হবে না। যদি যাকাত ওয়াজিব হওয়ার পর মালিক নিজে ধ্বংস করে, তবে তার ওপর থেকে যাকাত মওকুফ হবে না। যদি সে দাবি করে সীমালঙ্ঘন ছাড়া নষ্ট হয়েছে, বিশুদ্ধ মতে তার কথা গ্রহণযোগ্য হবে, কসম নেওয়ার প্রয়োজন নেই। ইমাম আহমদ বলেছেন: সদকার জন্য কসম গ্রহণ করা যাবে না।

>
[1] এক ওসাক ৬০ ‘সা’, তাই ৫ ওসাক ৩০০ ‘সা’ হয়, অথবা অধিকাংশ আলেমের দৃষ্টিতে ৩০০ ‘সা’ ৬৫৩ কেজি, যদি এক ‘সা’-কে ২১৭৫ গ্রাম ধরা হয়। কেউ এক ‘সা’-র পরিমাণ করেছেন ২.৫ কেজি, বা ২৫০০ গ্রাম। সে হিসেবে ৩০০ ‘সা’ ৭৫০ কেজি হয়, অর্থাৎ ১৮ মন ৩০ কেজি। এক ‘সা’ এর প্রকৃত হিসেবে আমরা ০০ নং পৃষ্ঠায় করে এসেছি, অর্থাৎ মাঝারি সাইজের মানুষের দুই হাতের চার খাবরি/আঁজলা/অঞ্জলি হচ্ছে এক ‘সা’। এই হিসেবে বিভিন্ন শস্যের এক ‘সা’ এর ওজন কম-বেশী হয়। কারণ চার খাবরি চাউল ও ভুট্টার ওজন এক নয়। কেউ যদি নিজের ফসলের যথাযথ পাঁচ ওসাক দিতে চায়, সে সংশ্লিষ্ট ফসল থেকে চার খাবরি নিয়ে আগে এক ‘সা’ নির্ণয় করবে, যেই ওজন হবে তার ষাট গুণ এক ওসাক, এভাবে পাঁচ ওসাক হলে যাকাত দিবে। এই নীতি মনে রাখলে ফল ও ফসলের যাকাতের জন্য কারও দ্বারস্থ হওয়ার প্রয়োজন হবে না, এবং পরিমাপ নিয়ে সংশয়ও থাকবে না। -অনুবাদক।

[2] দেখুন: আল-মুগনি: (২/৬৯৬)।

[3] দেখুন: আল-মুগনি: (২/৬৯৬)।

[4] দেখুন: আল-মুগনি: (২/৭০৪)।