কোন অন্তর ফিতনাকে উপেক্ষা করে? ঐ অন্তরই ফিতনাকে উপেক্ষা করে যার অন্তরে আল্লাহর কিতাবের ইলম রয়েছে এবং যে ব্যক্তি এ ধরনের পেক্ষাপটে করনীয় সম্পর্কে জানে। আর যে মূর্খ সে ফিতনা বিষয়ে নমনীয় থাকে। আবার অনেক সময় তাতে সে আনন্দও পায় এবং এ সব ফিতনাকে সে উন্নতি, অগ্রগতি ও সভ্যতা মনে করে। আর তা হতে দূরে থাকাকে পশ্চাৎপদ ও প্রগতির পরিপন্থী মনে করে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এ ধরণের ফিতনা হতে বাঁচার কোনো উপায় নেই একমাত্র আল্লাহ যে বস্তুকে উপায় হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তা ছাড়া। আর তা হলো আল্লাহর কিতাব ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿الٓرۚ كِتَٰبٌ أَنزَلۡنَٰهُ إِلَيۡكَ لِتُخۡرِجَ ٱلنَّاسَ مِنَ ٱلظُّلُمَٰتِ إِلَى ٱلنُّورِ بِإِذۡنِ رَبِّهِمۡ إِلَىٰ صِرَٰطِ ٱلۡعَزِيزِ ٱلۡحَمِيدِ ١﴾ [ابراهيم: ١]

“আলিফ-লাম-রা। এ কিতাব, যা আমরা তোমার প্রতি নাযিল করেছি, যাতে তুমি মানুষকে তাদের রবের অনুমতিক্রমে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আন, পরাক্রমশালী সর্ব প্রশংসিতের পথের দিকে”। [সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ১]

﴿ٱتَّبِعُواْ مَآ أُنزِلَ إِلَيۡكُم مِّن رَّبِّكُمۡ وَلَا تَتَّبِعُواْ مِن دُونِهِۦٓ أَوۡلِيَآءَۗ قَلِيلٗا مَّا تَذَكَّرُونَ ٣﴾ [الاعراف: ٣]

“তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা নাযিল করা হয়েছে, তা অনুসরণ কর এবং তাকে ছাড়া অন্য অভিভাবকের অনুসরণ করো না। তোমরা সামান্যই উপদেশ গ্রহণ কর”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৩]

﴿إِنَّ هَٰذَا ٱلۡقُرۡءَانَ يَهۡدِي لِلَّتِي هِيَ أَقۡوَمُ وَيُبَشِّرُ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٱلَّذِينَ يَعۡمَلُونَ ٱلصَّٰلِحَٰتِ أَنَّ لَهُمۡ أَجۡرٗا كَبِيرٗا ٩ وَأَنَّ ٱلَّذِينَ لَا يُؤۡمِنُونَ بِٱلۡأٓخِرَةِ أَعۡتَدۡنَا لَهُمۡ عَذَابًا أَلِيمٗا ١٠﴾ [الاسراء: ٩ ، ١٠]

“নিশ্চয় এ কুরআন এমন একটি পথ দেখায় যা সবচেয়ে সরল এবং যে মুমিনগণ নেক আমল করে তাদেরকে সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্য রয়েছে মহা পুরস্কার। আর যারা আখিরাতে ঈমান রাখে না আমি তাদের জন্য প্রস্তুত করেছি যন্ত্রণাদায়ক আযাব”। [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৯-১০]

﴿الٓمٓ ١ ذَٰلِكَ ٱلۡكِتَٰبُ لَا رَيۡبَۛ فِيهِۛ هُدٗى لِّلۡمُتَّقِينَ ٢ ٱلَّذِينَ يُؤۡمِنُونَ بِٱلۡغَيۡبِ وَيُقِيمُونَ ٱلصَّلَوٰةَ وَمِمَّا رَزَقۡنَٰهُمۡ يُنفِقُونَ ٣ وَٱلَّذِينَ يُؤۡمِنُونَ بِمَآ أُنزِلَ إِلَيۡكَ وَمَآ أُنزِلَ مِن قَبۡلِكَ وَبِٱلۡأٓخِرَةِ هُمۡ يُوقِنُونَ ٤ أُوْلَٰٓئِكَ عَلَىٰ هُدٗى مِّن رَّبِّهِمۡۖ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ٥﴾ [البقرة: ١، ٥]

“আলিফ-লাম-মীম। এই সেই কিতাব, যাতে কোন সন্দেহ নেই, মুত্তাকীদের জন্য হিদায়াত। যারা গায়েবের প্রতি ঈমান আনে, সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে। আর যারা ঈমান আনে তাতে, যা তোমার প্রতি নাযিল করা হয়েছে এবং যা তোমার পূর্বে নাযিল করা হয়েছে। আর আখিরাতের প্রতি তারা ইয়াকীন রাখে। তারা তাদের রবের পক্ষ থেকে হিদায়াতের ওপর রয়েছে এবং তারাই সফলকাম”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১-৫]

আল্লাহ তা‘আলা কুরআনের এ সূরার শুরুতেই উল্লেখ করেছেন যে, এ কুরআন বিশেষ করে মুত্তাকীদের জন্য হিদায়াত। তারপর তিনি মুত্তাকী কারা তাদের পরিচয় তুলে ধরেন। অর্থাৎ মুত্তাকী হলো তারা যারা গায়েবের প্রতি ঈমান আনে, সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে। আর যারা ঈমান আনে তাতে, যা তোমার প্রতি নাযিল করা হয়েছে এবং যা তোমার পূর্বে নাযিল করা হয়েছে। আর আখিরাতের প্রতি তারা ইয়াকীন রাখে। তারপর আল্লাহ তা‘আলা তাদের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত দেন তারা কামিয়াব ও সফলকাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তারা তাদের রবের পক্ষ থেকে হিদায়াতের ওপর রয়েছে এবং তারাই সফলকাম। তারপর আল্লাহ তা‘আলা দ্বিতীয় শ্রেণির মানুষ কাফেরদের বর্ণনা দেন। তারপর তৃতীয় শ্রেণির মানুষ অর্থাৎ, মুনাফিকদের বর্ণনা দেন।

আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর নিকট মানবজাতি তিন প্রকারে বিভক্ত।

প্রথম প্রকার:

যারা প্রকাশ্যে ও গোপনে এ কুরআনের প্রতি বিশ্বাস করে তারা হলেন মুমিন-মুত্তাকীন। উল্লেখিত আয়াতসমূহে তাদের গুণাগুণ তুলে ধরা হয়েছে।

দ্বিতীয় প্রকার:

যারা প্রকাশ্যে ও গোপনে আল্লাহর কিতাবকে অস্বীকার করে। তারা কাফের, তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ سَوَآءٌ عَلَيۡهِمۡ ءَأَنذَرۡتَهُمۡ أَمۡ لَمۡ تُنذِرۡهُمۡ لَا يُؤۡمِنُونَ ٦ خَتَمَ ٱللَّهُ عَلَىٰ قُلُوبِهِمۡ وَعَلَىٰ سَمۡعِهِمۡۖ وَعَلَىٰٓ أَبۡصَٰرِهِمۡ غِشَٰوَةٞۖ وَلَهُمۡ عَذَابٌ عَظِيمٞ ٧﴾ [البقرة: ٦، ٧]

“নিশ্চয় যারা কুফুরি করেছে, তুমি তাদেরকে সতর্ক কর কিংবা না কর, উভয়ই তাদের জন্য বরাবর, তারা ঈমান আনবে না। আল্লাহ তাদের অন্তরে এবং তাদের কানে মোহর লাগিয়ে দিয়েছেন এবং তাদের চোখসমূহে রয়েছে পর্দা। আর তাদের জন্য রয়েছে মহা আযাব”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ৬-৭]

এরা প্রকাশ্যে ও গোপনে কুরআনকে অস্বীকার করার ফলে শাস্তি স্বরূপ আল্লাহ তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেন। ফলে তাদের অবস্থা এমন, তারপর থেকে তারা আর কখনো হককে গ্রহণ করবে না, ঈমান আনবে না।

তৃতীয় প্রকার:

যারা বাহ্যিক ভাবে কুরআনকে বিশ্বাস করে কিন্তু গোপনে তারা কুরআনকে অস্বীকার করে। এ শ্রেণির লোক মুনাফিক। আল্লাহ তা‘আলা তাদের পরিচয় তুলে ধরার জন্য একাধিক আয়াত নাযিল করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يَقُولُ ءَامَنَّا بِٱللَّهِ وَبِٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِ وَمَا هُم بِمُؤۡمِنِينَ ٨ يُخَٰدِعُونَ ٱللَّهَ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَمَا يَخۡدَعُونَ إِلَّآ أَنفُسَهُمۡ وَمَا يَشۡعُرُونَ ٩ فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٞ فَزَادَهُمُ ٱللَّهُ مَرَضٗاۖ وَلَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمُۢ بِمَا كَانُواْ يَكۡذِبُونَ ١٠ وَإِذَا قِيلَ لَهُمۡ لَا تُفۡسِدُواْ فِي ٱلۡأَرۡضِ قَالُوٓاْ إِنَّمَا نَحۡنُ مُصۡلِحُونَ ١١ أَلَآ إِنَّهُمۡ هُمُ ٱلۡمُفۡسِدُونَ وَلَٰكِن لَّا يَشۡعُرُونَ ١٢ وَإِذَا قِيلَ لَهُمۡ ءَامِنُواْ كَمَآ ءَامَنَ ٱلنَّاسُ قَالُوٓاْ أَنُؤۡمِنُ كَمَآ ءَامَنَ ٱلسُّفَهَآءُۗ أَلَآ إِنَّهُمۡ هُمُ ٱلسُّفَهَآءُ وَلَٰكِن لَّا يَعۡلَمُونَ ١٣ وَإِذَا لَقُواْ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ قَالُوٓاْ ءَامَنَّا وَإِذَا خَلَوۡاْ إِلَىٰ شَيَٰطِينِهِمۡ قَالُوٓاْ إِنَّا مَعَكُمۡ إِنَّمَا نَحۡنُ مُسۡتَهۡزِءُونَ ١٤ ٱللَّهُ يَسۡتَهۡزِئُ بِهِمۡ وَيَمُدُّهُمۡ فِي طُغۡيَٰنِهِمۡ يَعۡمَهُونَ ١٥ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ ٱشۡتَرَوُاْ ٱلضَّلَٰلَةَ بِٱلۡهُدَىٰ فَمَا رَبِحَت تِّجَٰرَتُهُمۡ وَمَا كَانُواْ مُهۡتَدِينَ ١٦ مَثَلُهُمۡ كَمَثَلِ ٱلَّذِي ٱسۡتَوۡقَدَ نَارٗا فَلَمَّآ أَضَآءَتۡ مَا حَوۡلَهُۥ ذَهَبَ ٱللَّهُ بِنُورِهِمۡ وَتَرَكَهُمۡ فِي ظُلُمَٰتٖ لَّا يُبۡصِرُونَ ١٧ صُمُّۢ بُكۡمٌ عُمۡيٞ فَهُمۡ لَا يَرۡجِعُونَ ١٨ أَوۡ كَصَيِّبٖ مِّنَ ٱلسَّمَآءِ فِيهِ ظُلُمَٰتٞ وَرَعۡدٞ وَبَرۡقٞ يَجۡعَلُونَ أَصَٰبِعَهُمۡ فِيٓ ءَاذَانِهِم مِّنَ ٱلصَّوَٰعِقِ حَذَرَ ٱلۡمَوۡتِۚ وَٱللَّهُ مُحِيطُۢ بِٱلۡكَٰفِرِينَ ١٩ يَكَادُ ٱلۡبَرۡقُ يَخۡطَفُ أَبۡصَٰرَهُمۡۖ كُلَّمَآ أَضَآءَ لَهُم مَّشَوۡاْ فِيهِ وَإِذَآ أَظۡلَمَ عَلَيۡهِمۡ قَامُواْۚ وَلَوۡ شَآءَ ٱللَّهُ لَذَهَبَ بِسَمۡعِهِمۡ وَأَبۡصَٰرِهِمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٞ ٢٠﴾ [البقرة: ٨، ٢٠]

“আর মানুষের মধ্যে কিছু এমন আছে, যারা বলে, ‘আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি এবং শেষ দিনের প্রতি’, অথচ তারা মুমিন নয়। তারা আল্লাহকে এবং যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে ধোঁকা দিচ্ছে। অথচ তারা নিজদেরকেই ধোঁকা দিচ্ছে এবং তারা তা অনুধাবন করে না। তাদের অন্তরসমূহে রয়েছে ব্যাধি। সুতরাং আল্লাহ তাদের ব্যাধি বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব। কারণ তারা মিথ্যা বলত। আর যখন তাদেরকে বলা হয়, ‘তোমরা জমীনে ফ্যাসাদ করো না’, তারা বলে, ‘আমরা তো কেবল সংশোধনকারী’। জেনে রাখ, নিশ্চয় তারা ফাসাদকারী; কিন্তু তারা বুঝে না। আর যখন তাদেরকে বলা হয়, ‘তোমরা ঈমান আন যেমন লোকেরা ঈমান এনেছে’, তারা বলে, ‘আমরা কি ঈমান আনব যেমন নির্বোধরা ঈমান এনেছে’? জেনে রাখ, নিশ্চয় তারাই নির্বোধ; কিন্তু তারা জানে না। আর যখন তারা মুমিনদের সাথে মিলিত হয়, তখন বলে ‘আমরা ঈমান এনেছি’ এবং যখন তাদের শয়তানদের সাথে একান্তে মিলিত হয়, তখন বলে, ‘নিশ্চয় আমরা তোমাদের সাথে আছি। আমরা তো কেবল উপহাসকারী’। আল্লাহ তাদের প্রতি উপহাস করেন এবং তাদেরকে তাদের অবাধ্যতায় বিভ্রান্ত হয়ে ঘোরার অবকাশ দেন। এরাই তারা, যারা হিদায়াতের বিনিময়ে পথভ্রষ্টটা ক্রয় করেছে। কিন্তু তাদের ব্যবসা লাভজনক হয় নি এবং তারা হিদায়াতপ্রাপ্ত ছিল না। তাদের উপমা ঐ ব্যক্তির মতো, যে আগুন জ্বালাল। এরপর যখন আগুন তার চারপাশ আলোকিত করল, আল্লাহ তাদের আলো কেড়ে নিলেন এবং তাদেরকে ছেড়ে দিলেন এমন অন্ধকারে যে, তারা দেখছে না। তারা বধির-মূক-অন্ধ। তাই তারা ফিরে আসবে না। কিংবা আকাশের বর্ষণমুখর মেঘের ন্যায়, যাতে রয়েছে ঘন অন্ধকার, বজ্রধ্বনি ও বিদ্যুৎচমক। বজ্রের গর্জনে তারা মৃত্যুর ভয়ে তাদের কানে আঙুল দিয়ে রাখে। আর আল্লাহ কাফিরদেরকে পরিবেষ্টন করে আছেন। বিদ্যুৎ চমক তাদের দৃষ্টি কেড়ে নেওয়ার উপক্রম হয়। যখনই তা তাদের জন্য আলো দেয়, তারা তাতে চলতে থাকে। আর যখন তা তাদের ওপর অন্ধকার করে দেয়, তারা দাঁড়িয়ে পড়ে। আর আল্লাহ যদি চাইতেন, অবশ্যই তাদের শ্রবণ ও চোখসমূহ নিয়ে নিতেন। নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ৮-২০]

মোটকথা, আল্লাহর কিতাবে রয়েছে নূর ও হিদায়েত। আল্লাহর কিতাবে চিন্তা-ফিকির করা গবেষণা করা খুবই জরুরি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿كِتَٰبٌ أَنزَلۡنَٰهُ إِلَيۡكَ مُبَٰرَكٞ لِّيَدَّبَّرُوٓاْ ءَايَٰتِهِۦ وَلِيَتَذَكَّرَ أُوْلُواْ ٱلۡأَلۡبَٰبِ ٢٩﴾ [ص : ٢٩]

“আমরা তোমার প্রতি নাযিল করেছি এক বরকতময় কিতাব, যাতে তারা এর আয়াতসমূহ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে এবং যাতে বুদ্ধিমানগণ উপদেশ গ্রহণ করে”। [সূরা সোয়াদ, আয়াত: ২৯]

যে ব্যক্তি এ ধরনের ফিতনা হতে বাঁচতে চায়, তাকে অবশ্যই আল্লাহর কিতাবকে আঁকড়ে ধরতে হবে। আল্লাহর কিতাব দিয়ে কি করবে? নিজের কাছে একটি কুরআন বাজার থেকে কিনে নিজের কাছে সংরক্ষণ করবে!!? না তার দায়িত্ব হলো কুরআন পড়বে এবং কুরআন অনুযায়ী জীবন যাপন করবে। এ কুরআনই হলো দুনিয়াতে আখিরাতের যাবতীয় অনিষ্ঠটা ও খারাবী হতে মুক্তি লাভ ও হিদায়াত লাভের প্রথম সোপান। অনুরূপভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুন্নত। কারণ, সুন্নত হলো কুরআনের ব্যাখ্যা, বর্ণনা ও তাফসীর। আল্লাহ তা‘আলা বাণী তার প্রমাণ,

﴿وَمَا يَنطِقُ عَنِ ٱلۡهَوَىٰٓ ٣ إِنۡ هُوَ إِلَّا وَحۡيٞ يُوحَىٰ ٤﴾ [النجم : ٣، ٤]

“আর সে মনগড়া কথা বলে না। তাতো কেবল অহী, যা তার প্রতি অহী-রূপে প্রেরণ করা হয়”। [সূরা আন-নাজম, আয়াত: ৩-৪]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إني تارك فيكم ما إن تمسكتم به لن تضلوا بعدي: كتاب الله, وسنتي»

“আমি তোমাদের মধ্যে দুটি জিনিস রেখে গেলাম। তোমরা যদি এ দু’টিকে মজবুত করে ধর, তবে তোমরা আমার পরে গোমরাহ হবে না। আল্লাহর কিতাব ও আমার সুন্নত”।[7]

ফিতনা থেকে এ ধরনের নিরাপত্তা ও দায়িত্বগ্রহণ তার জন্য যে উভয়টিকে আঁকড়ে ধরবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাধিক হাদীসে ফিতনার বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন। যেমন, তিনি আরও বলেছেন- অচিরেই গভীর অন্ধকার-আমবশ্যার রাতের মতো ফিতনার আবির্ভাব ঘটবে। তখন মানুষ সকালে মুমিন হিসেবে সকাল করবে সন্ধ্যায় কাফেরে পরিণত হবে। আবার মুমিন হিসেবে সন্ধ্যা অতিবাহিত করবে কিন্তু সকালে কাফেরে পরিণত হবে। সামান্য পার্থিব লাভের বিনিময়ে দীন কে বিক্রি করেবে। দুনিয়াকে আখিরাতের ওপর প্রাধান্য দেবে। ফলে মানুষ দুনিয়াদারিতে নিজেকে বিলীন করে দেবে। সালাত ছেড়ে দেবে, যাকাত আদায় করবে না আল্লাহ ও তার রাসূলের নাফরমানী করবে, শয়তান ও শয়তানের সহযোগীদের অনুসরণ করবে। এমন মহান ফিতনা থেকে আমরা আল্লাহর নিকট আশ্রয় কামনা করি। এ বিষয়ে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন হাদীসে আমাদের সংবাদ দেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,

«إنها ستكون فتن كقطع الليل المظلم، يصبح الرجل فيها مؤمناً ويمسي كافراً، ويمسي مؤمناً ويصبح كافراً، يبيع دينه بِعَرَض من الدنيا».

“শেষ জামানায় আমবশ্যার রাতের মতো ফিতনা মানুষকে ঘ্রাস করবে। তখন একজন মানুষ সকালে মুমিন আর বিকালে কাফির এবং বিকালে মুমিন সকালে কাফির। সে দুনিয়ার বিনিময়ে তার দীনকে বিক্রি করবে”।[8] দীন কে দুনিয়ার নগণ্য সুযোগ সুবিধার বিনিময়ে বিক্রি করে দেবে। আখিরাতের ওপর দুনিয়াকে প্রাধান্য দেওয়ার ফলে মানুষ দুনিয়ার সাথে বিলীন হয়ে পড়বে। তখন সে সালাত আদায় করবে না, যাকাত দেবে না আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের নাফরমানী করে এবং শয়তান ও তার দোসরদের অনুসরণ করবে। আমরা আল্লাহর নিকট এ ধরনের ফিতনা হতে আশ্রয় চাই।সময় যত পার হবে ফিতনার মহাপ্রলয় আরও বড় আকার ধারণ করবে। এভাবে কিয়ামত পর্যন্ত একটির পর একটি করে বড় বড় ফিতনা ধারাবাহিক ভাবে আসতে থাকবে। কিয়ামত কাছাকাছি হওয়া এবং পৃথিবী ধ্বংসের ধার প্রান্তে পৌছার কারণে বিশেষ করে আখেরি জামানার মানুষ সর্বাধিক বেশি ফিতনার সম্মুখীন হবে। মানুষ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ফিতনার মধ্যে জীবন-যাপন ও বসবাস করবে। কখনো তার পরিণতি ভালো হবে আবার কখনো তার পরিণতি খারাপ হতে পারে।

[7] তিরমিযী, হাদীস নং ৩৭৮৮

[8] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৮