ইসলামী জ্ঞানই ফিতনা থেকে বাঁচার উপায়

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য। আর সালাত ও সালাম আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর, যাকে প্রেরণ করা হয়েছে সৃষ্টিকুলের জন্য রহমতস্বরূপ। আর সালাত ও সালাম প্রেরিত হোক তার ওপর, তার পরিবার-পরিজন, সাহাবায়ে কেরাম ও যারা কেয়ামত অবধি তার সুন্নতকে আঁকড়ে ধরে এবং তার তরীকার ওপর চলে তাদের ওপর।

অতঃপর....

ইসলামের মতো মহান নি‘আমত দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা আমাদের প্রতি দয়া ও ইহসান করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِۦ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسۡلِمُونَ ١٠٢﴾ [ال عمران: ١٠٢]

“হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর যথাযথ তাকওয়া অবলম্বন কর। আর তোমরা মুসলিম হওয়া ছাড়া মারা যেও না”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০২]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,

﴿وَٱعۡتَصِمُواْ بِحَبۡلِ ٱللَّهِ جَمِيعٗا وَلَا تَفَرَّقُواْۚ وَٱذۡكُرُواْ نِعۡمَتَ ٱللَّهِ عَلَيۡكُمۡ إِذۡ كُنتُمۡ أَعۡدَآءٗ فَأَلَّفَ بَيۡنَ قُلُوبِكُمۡ فَأَصۡبَحۡتُم بِنِعۡمَتِهِۦٓ إِخۡوَٰنٗا وَكُنتُمۡ عَلَىٰ شَفَا حُفۡرَةٖ مِّنَ ٱلنَّارِ فَأَنقَذَكُم مِّنۡهَاۗ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ ٱللَّهُ لَكُمۡ ءَايَٰتِهِۦ لَعَلَّكُمۡ تَهۡتَدُونَ ١٠٣﴾ [ال عمران: ١٠٣]

“আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং বিভক্ত হয়ো না। আর তোমরা তোমাদের ওপর আল্লাহর নি‘আমতকে স্মরণ কর, যখন তোমরা পরস্পরে শত্রু ছিলে। তারপর আল্লাহ তোমাদের অন্তরে ভালোবাসার সঞ্চার করেছেন। অতঃপর তাঁর অনুগ্রহে তোমরা ভাই-ভাই হয়ে গেলে। আর তোমরা ছিলে আগুনের গর্তের কিনারায়, অতঃপর তিনি তোমাদেরকে তা থেকে রক্ষা করেছেন। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ বয়ান করেন, যাতে তোমরা হিদায়াতপ্রাপ্ত হও”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০৩]

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلۡتَكُن مِّنكُمۡ أُمَّةٞ يَدۡعُونَ إِلَى ٱلۡخَيۡرِ وَيَأۡمُرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِۚ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ١٠٤﴾ [ال عمران: ١٠٤]

“আর যেন তোমাদের মধ্য থেকে এমন একটি দল হয়, যারা কল্যাণের প্রতি আহবান করবে, ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই সফলকাম”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০৪]

﴿وَلَا تَكُونُواْ كَٱلَّذِينَ تَفَرَّقُواْ وَٱخۡتَلَفُواْ مِنۢ بَعۡدِ مَا جَآءَهُمُ ٱلۡبَيِّنَٰتُۚ وَأُوْلَٰٓئِكَ لَهُمۡ عَذَابٌ عَظِيمٞ ١٠٥﴾ [ال عمران: ١٠٥]

“আর তোমরা তাদের মতো হইও না, যারা বিভক্ত হয়েছে এবং মতবিরোধ করেছে তাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ আসার পর। আর তাদের জন্যই রয়েছে কঠোর আযাব”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০৫]

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ٱلۡيَوۡمَ أَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِينَكُمۡ وَأَتۡمَمۡتُ عَلَيۡكُمۡ نِعۡمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ ٱلۡإِسۡلَٰمَ دِينٗاۚ ٣﴾ [المائ‍دة: ٣]

“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের ওপর আমার নি‘আমত সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দীন হিসেবে পছন্দ করলাম ইসলামকে”। [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৩]

﴿إِنَّ ٱلدِّينَ عِندَ ٱللَّهِ ٱلۡإِسۡلَٰمُۗ وَمَا ٱخۡتَلَفَ ٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡكِتَٰبَ إِلَّا مِنۢ بَعۡدِ مَا جَآءَهُمُ ٱلۡعِلۡمُ بَغۡيَۢا بَيۡنَهُمۡۗ وَمَن يَكۡفُرۡ بِ‍َٔايَٰتِ ٱللَّهِ فَإِنَّ ٱللَّهَ سَرِيعُ ٱلۡحِسَابِ ١٩﴾ [ال عمران: ١٩]

“নিশ্চয় আল্লাহর নিকট দীন হচ্ছে ইসলাম। আর যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছে, তাদের নিকট জ্ঞান আসার পরই তারা মতানৈক্য করেছে, পরস্পর বিদ্বেষ বশতঃ। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর আয়াতসমূহের সাথে কুফুরি করে, নিশ্চয় আল্লাহ হিসাব গ্রহণে দ্রুত”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৯]

﴿وَمَن يَبۡتَغِ غَيۡرَ ٱلۡإِسۡلَٰمِ دِينٗا فَلَن يُقۡبَلَ مِنۡهُ وَهُوَ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٨٥﴾ [ال عمران: ٨٥]

“আর যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দীন চায়, তবে তার কাছ থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৮৫]

﴿وَجَٰهِدُواْ فِي ٱللَّهِ حَقَّ جِهَادِهِۦۚ هُوَ ٱجۡتَبَىٰكُمۡ وَمَا جَعَلَ عَلَيۡكُمۡ فِي ٱلدِّينِ مِنۡ حَرَجٖۚ مِّلَّةَ أَبِيكُمۡ إِبۡرَٰهِيمَۚ هُوَ سَمَّىٰكُمُ ٱلۡمُسۡلِمِينَ مِن قَبۡلُ وَفِي هَٰذَا لِيَكُونَ ٱلرَّسُولُ شَهِيدًا عَلَيۡكُمۡ وَتَكُونُواْ شُهَدَآءَ عَلَى ٱلنَّاسِۚ فَأَقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتُواْ ٱلزَّكَوٰةَ وَٱعۡتَصِمُواْ بِٱللَّهِ هُوَ مَوۡلَىٰكُمۡۖ فَنِعۡمَ ٱلۡمَوۡلَىٰ وَنِعۡمَ ٱلنَّصِيرُ ٧٨﴾ [الحج : ٧٨]

“আর তোমরা আল্লাহর পথে জিহাদ কর যেভাবে জিহাদ করা উচিৎ। তিনি তোমাদেরকে মনোনীত করেছেন। দীনের ব্যাপারে তিনি তোমাদের ওপর কোন কঠোরতা আরোপ করেন নি। এটা তোমাদের পিতা ইবরাহীমের দীন। তিনিই তোমাদের নাম রেখেছেন ‘মুসলিম’ পূর্বে এবং এ কিতাবেও। যাতে রাসূল তোমাদের জন্য সাক্ষী হয় আর তোমরা মানুষের জন্য সাক্ষী হও। অতএব, তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত দাও এবং আল্লাহকে মজবুতভাবে ধর। তিনিই তোমাদের অভিভাবক। আর তিনি কতই না উত্তম অভিভাবক এবং কতই না উত্তম সাহায্যকারী”! [সূরা আল-হজ, আয়াত: ৭৮]

ইসলাম আল্লাহর পক্ষ হতে বান্দাদের প্রতি এমন একটি মহান নি‘আমত, দুনিয়াতে আর কোনো নি‘আমত ইসলামের সমান হতে পারে না। যদিও আল্লাহ তা‘আলার কোনো নি‘আমতকেই অস্বীকার করা, ছোট মনে করা বা খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। তথাপিও ইসলামই হলো সবচেয়ে বড় ও মহান নি‘আমত। ইসলামকে দুনিয়াতে কায়েম করা ও তার প্রতি দাওয়াত দেওয়ার জন্যই দুনিয়াতে আল্লাহ তা‘আলা অসংখ্য নবী ও রাসূলদের প্রেরণ করেছেন। আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকেও আল্লাহ তা‘আলা ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার জন্যই দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। তিনি মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন। দুনিয়াতে ইসলামকে বিজয়ী করে দেখিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿لَقَدۡ مَنَّ ٱللَّهُ عَلَى ٱلۡمُؤۡمِنِينَ إِذۡ بَعَثَ فِيهِمۡ رَسُولٗا مِّنۡ أَنفُسِهِمۡ يَتۡلُواْ عَلَيۡهِمۡ ءَايَٰتِهِۦ وَيُزَكِّيهِمۡ وَيُعَلِّمُهُمُ ٱلۡكِتَٰبَ وَٱلۡحِكۡمَةَ وَإِن كَانُواْ مِن قَبۡلُ لَفِي ضَلَٰلٖ مُّبِينٍ ١٦٤﴾ [ال عمران: ١٦٤]

“অবশ্যই আল্লাহ মুমিনদের ওপর অনুগ্রহ করেছেন, যখন তিনি তাদের মধ্য থেকে তাদের প্রতি একজন রাসূল পাঠিয়েছেন, যে তাদের কাছে তাঁর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করে আর তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয়। যদিও তারা ইতোপূর্বে স্পষ্ট ভ্রান্তিতে ছিল”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৬৪]

ইসলাম এত বড় ও মহান নি‘আমত হওয়া স্বত্বেও মানুষকে ইসলাম থেকে ফিরিয়ে রাখা বা ইসলাম বিমুখ করার অসংখ্য অনুসর্গ ও কারণও দুনিয়াতে বিদ্যমান রয়েছে যা একজন মানুষকে ইসলাম থেকে বের করে দেয় –যদিও সে ইসলামের যোগ্য- অথবা তার অন্তরে ইসলামকে দুর্বল করে দেয় বা তাকে ইসলাম গ্রহণ করা হতে বিরত রেখে কাফের মুশরিকে রূপান্তরিত করে- যদিও সে তার যোগ্য না হয়। এ সব অনুসর্গ ও কারণগুলো একজন মানুষের জন্য মহা পরীক্ষা- যার সম্মুখীন দুনিয়াতে তাকে হতেই হয়। এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হলে, কোন কর্ম করলে ইসলাম থেকে বের হয়, সে বিষয়গুলো যেমন জানা জরুরি তেমনিভাবে যেগুলো ইসলামে প্রবেশের পথে বাধা বা ইসলামকে মানুষের অন্তরে দুর্বল করে দেয়, সে বিষয়গুলো সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকাও জরুরি। যাতে এ বিষয়গুলো থেকে সতর্ক থাকা যায়।

এ কারণেই বিশিষ্ট সাহাবী হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, লোকেরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট ভালো ভালো আমল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করত, আমি খারাপ আমল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতাম, এভয়ে যে তা আমাকে পেয়ে বসবে।

প্রথমে ইসলাম জানা, ইসলামের বিধি-বিধান ও আহকাম জানা ওয়াজিব। তারপর যে বিষয়গুলো মানুষকে ইসলাম থেকে ফিরিয়ে রাখে এবং বান্দার মাঝে ও ইসলামের মাঝে বাধা হয় বা মানুষের অন্তরে ইসলামকে দুর্বল করে দেয়, তা জানা ওয়াজিব। ইসলামের জন্য ক্ষতিকর বিষয় ও ইসলামের পথে বাধাগুলো নির্ণয় করা খুবই জরুরি, যাতে উপকারী বিষয়গুলোর ওপর আমল করা যায় এবং ক্ষতিকর বিষয় থেকে বিরত থাকা যায়। কারণ, যখন কোনো বান্দা ক্ষতিকর, গোমরাহী বিষয়গুলো সম্পর্কে অজ্ঞ থাকে, তা তাকে তার অজান্তে ধ্বংস করে ফেলতে এবং দীন ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে। অথচ আল্লাহ তা‘আলা তার বান্দাদেরকে আমরণ ইসলামের ওপর অটুট ও অবিচল থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِۦ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسۡلِمُونَ ١٠٢﴾ [ال عمران: ١٠٢]

“হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর যথার্থ তাকওয়া অবলম্বন কর। আর তোমরা মুসলিম হওয়া ছাড়া মারা যেও না”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০২]

ইসলামের ওপর অটুট-অবিচল থাকা মানুষের শক্তি বা বাহুবল দ্বারা নয়, তা কেবলই আল্লাহর মহান কুদরত ও তাওফীক অনুযায়ীই হয়ে থাকে। আমরা নিজেরা আমরণ ইসলামের ওপর বেঁচে থাকার ক্ষমতা রাখি না। এ ক্ষমতা পুরোটাই আল্লাহর হাতে। এ কথার অর্থ, আমরা মৃত্যু পর্যন্ত ঐ সব কর্মগুলোই করব যেগুলো আমাদের ইসলামের ওপর আমরণ বেঁচে থাকাকে নিশ্চিত করে। আমরা যখন ঐ সব কর্মগুলো করব, তখন আল্লাহ তা‘আলা তার স্বীয় রহমত, কুদরত ও দয়া দ্বারা তার নি‘আমতকে পরিপূর্ণ করবেন, আমরণ ইসলামের ওপর বহাল রাখবেন এবং ইসলামের ওপর মৃত্যু দান করবেন। কারণ, আমরা মুক্তি বা নাজাতের জন্য চেষ্টা করছি, যাবতীয় সব উপায় ও অবলম্বন গ্রহণ করেছি। আর আল্লাহ তা‘আলা যখন কোনো বান্দার মধ্যে চেষ্টা, আগ্রহ ও ভালো কর্মের প্রতি আগ্রহ এবং অপকর্মের প্রতি অনীহা, ঘৃণা ও ভীতি দেখেন, তখন আল্লাহ তা‘আলা তাকে হেফাজত করেন, কুফর থেকে বাঁচিয়ে রাখেন এবং তার জন্য দীন পালনকে সহজ করেন, যাবতীয় কল্যাণ নিশ্চিত করেন।

আর আল্লাহ যখন কোনো বান্দার মধ্যে ভালো কর্মের প্রতি অনীহা ও অনাগ্রহ দেখেন, ভালো কর্মের প্রতি ঘৃণা লক্ষ্য করেন এবং অন্যায়-অনাচার ও খারাপ কর্মকে পছন্দ করার মানসিকতা দেখেন, তাকে শাস্তিস্বরূপ আল্লাহ সেই পথে পরিচালনা করবেন যে পথ সে অবলম্বন করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمَن يُشَاقِقِ ٱلرَّسُولَ مِنۢ بَعۡدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ ٱلۡهُدَىٰ وَيَتَّبِعۡ غَيۡرَ سَبِيلِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ نُوَلِّهِۦ مَا تَوَلَّىٰ وَنُصۡلِهِۦ جَهَنَّمَۖ وَسَآءَتۡ مَصِيرًا ١١٥ ﴾ [النساء : ١١٥]

“আর যে রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে তার জন্য হিদায়াত প্রকাশ পাওয়ার পর এবং মুমিনদের পথের বিপরীত পথ অনুসরণ করে, আমি তাকে ফিরাব যেদিকে সে ফিরে এবং তাকে প্রবেশ করাব জাহান্নামে। আর আবাস হিসেবে তা খুবই মন্দ”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১১৫]

সুতরাং কারণটি বান্দার পক্ষ থেকে পাওয়া গেছে। সে আল্লাহ ও তার রাসূলের বিরোধিতা করছে, মুমিনদের পথ বাদ দিয়ে অন্যদের পথের অনুসরণ করছে। ফলে শাস্তির কারণটি তার পক্ষ থেকে ছিল। আর আল্লাহর পক্ষ থেকে ছিল শাস্তি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿نُوَلِّهِۦ مَا تَوَلَّىٰ وَنُصۡلِهِۦ جَهَنَّمَۖ وَسَآءَتۡ مَصِيرًا﴾ [النساء : ١١٥]

“আমি তাকে ফিরাব সেদিকে যেদিকে সে ফিরে এবং তাকে প্রবেশ করাব জাহান্নামে। আর আবাস হিসেবে তা খুবই মন্দ”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১১৫]

আর الفتن শব্দটি الفتنة শব্দের বহুবচন। এর অর্থ হলো, পরীক্ষা। যাতে কারা সত্যিকার ঈমাদার আর কারা মুনাফেক, তা স্পষ্ট হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يَقُولُ ءَامَنَّا بِٱللَّهِ فَإِذَآ أُوذِيَ فِي ٱللَّهِ جَعَلَ فِتۡنَةَ ٱلنَّاسِ كَعَذَابِ ٱللَّهِۖ وَلَئِن جَآءَ نَصۡرٞ مِّن رَّبِّكَ لَيَقُولُنَّ إِنَّا كُنَّا مَعَكُمۡۚ أَوَ لَيۡسَ ٱللَّهُ بِأَعۡلَمَ بِمَا فِي صُدُورِ ٱلۡعَٰلَمِينَ ١٠﴾ [العنكبوت: ١٠]

“আর কিছু লোক আছে যারা বলে, ‘আমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি’, অতঃপর যখন আল্লাহর ব্যাপারে তাদের কষ্ট দেওয়া হয়, তখন তারা মানুষের নিপীড়ন-পরীক্ষাকে আল্লাহর আযাবের মতো গণ্য করে। আর যদি তোমার রবের পক্ষ থেকে কোনো বিজয় আসে, তখন অবশ্যই তারা বলে, ‘নিশ্চয় আমরা তোমাদের সাথে ছিলাম’। সৃষ্টিকুলের অন্তরসমূহে যা কিছু আছে আল্লাহ কি তা সম্পর্কে সম্যক অবগত নন”? [সূরা আল-আন‘কাবুত, আয়াত: ১০]

দুনিয়াতে হকের ওপর অটুট থাকার ফলে দুনিয়াতে যে পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয় সে পরীক্ষায় মুনাফেকরা ধৈর্য ধারণ করে না; বরং তারা পরীক্ষার সম্মুখীন হলে দীন থেকে পলায়ন করে এবং দীনের পথে যে সব প্রতিবন্ধক রয়েছে তার অনুসরণ করে। তারা ধারণা করে- এ দ্বারা নাজাত পাবে। না, নাজাত-তো তারা পাবেই না বরং তারা ছোট বিপদ থেকে পলায়ন করে আরও বড় বিপদকে ডেকে আনল। যেমন, এক ব্যক্তি কয়লার ভয়ে পলায়ন করে আগুনে ঝাঁপ দিল। তারা মানুষের দেওয়া কষ্ট ও যুলুম-নির্যাতনকে আল্লাহর আযাবের মতোই ভয় করল। মানুষের কষ্ট বা যুলুম-নির্যাতন কি কখনো আল্লাহর আযাবের সমান হতে পারে?! যখন কোনো ব্যক্তি দীন ছেড়ে পলায়ন করে এবং ফিতনাকারীদের অনুসরণ করে, তখন সে আল্লাহর আযাবের দিকেই ধাবিত হয়। আর যদি লোকটি মানুষের কষ্ট ও যুলুম-নির্যাতনের ওপর ধৈর্য ধারণ করে এবং দীনের ওপর অটুট ও অবিচল থাকে, তখন তার এ কষ্ট হবে সাময়িক ও ক্ষণিকের জন্য। অচিরেই সে মুক্তি পাবে এবং পরিণতি হবে শুভ ও আরামদায়ক। কিন্তু যখন কোনো বান্দা উল্টো পথে হাঁটবে- মানুষের কষ্টের ওপর ধৈর্য ধরবে না এবং আল্লাহর হুকুমের অবাধ্যতায় ফিতনাকারীদের অনুকরণ করবে, তারা যে দিকে আহ্বান করে (কুফর ও শির্ক) সাড়া দেয়, তখন সে আল্লাহর কঠিন আযাবের দিকেই ধাবিত হয়।

মোটকথা, ফিতনা হলো, পরীক্ষা। ফিতনা দ্বারা পরীক্ষা করা হয়, কে সত্যিকার মুমিন এবং কে সত্যিকার মুমিন নয়? কে তার আকীদা-বিশ্বাসের ওপর অটুট ও অবিচল আর কে মুনাফেক? (দুই নৌকায় পা রাখে) প্রথম ধাক্কাতেই সে ঈমান ও বিশ্বাস থেকে ছিটকে পড়ে -তা স্পষ্ট হয়ে যায়।