হে নারীদের আইনানুগ অভিভাবক ভাইসব!

কিছু সংখ্যক মানুষের নিকট ব্যাপক প্রচলন ও সহজ হয়ে গেছে যে, তারা তাদের কন্যাদেরকে ছোট-খাট পোশাক পরিধান করায়, অথবা এমন সংকীর্ণ বা আঁটসাঁট পোশাক পরিধানের ব্যবস্থা করে দেয়, যা শরীরের জোড়া বা ভাঁজগুলো পরিষ্কার করে দেয়, অথবা এমন হালকা-পাতলা পোশাক পরিধান করায়, যা শরীরের রং-এর কথা বলে দেয়, আর নিঃসন্দেহে যে ব্যক্তি তার কন্যাদেরকে এ জাতীয় পোশাক পরিধান করায় অথবা তাদের এ জাতীয় পোশাক পরিধানের বিষয়টিকে স্বীকৃতি দেয়, সে তো তাদেরকে জাহান্নামের অধিবাসীদের পোশাকই পরিধান করায়, যেমনিভাবে এ বিষয়টি সহীহভাবে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে, যে হাদীসটির আলোচনা পূর্বেও হয়েছে, তিনি বলেছেন:

«صِنْفَانِ مِنْ أهْلِ النَّارِ لَمْ أَرَهُمَا: قَومٌ مَعَهُمْ سِيَاطٌ كَأذْنَابِ البَقَرِ يَضْرِبُونَ بِهَا النَّاسَ، وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مُمِيلاَتٌ مَائِلاَتٌ، رُؤُوسُهُنَّ كَأَسْنِمَةِ البُخْتِ المائِلَةِ لاَ يَدْخُلْنَ الجَنَّةَ، وَلاَ يَجِدْنَ رِيحَهَا، وإنَّ رِيحَهَا لَيُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ كَذَا وَكذَا».

“জাহান্নামীদের এমন দু’টি দল রয়েছে, যাদেরকে আমি দেখি নি; তাদের এক দলের হাতে গরুর লেজের মতো চাবুক থাকবে, তারা তা দিয়ে লোকদেরকে মারবে। আর এক দল হবে নারীদের, তাদেরকে পোশাক-পরিচ্ছদ পরিধান করা সত্ত্বেও উলঙ্গ দেখাবে, গর্বের সাথে নৃত্যের ভঙ্গিতে বাহু দুলিয়ে পথ চলবে, বুখতী উটের উঁচু কুঁজের মতো করে খোপা বাঁধবে, এসব নারী কখনও জান্নাতে প্রবেশ করবে না, জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না, অথচ জান্নাতের সুঘ্রাণ অনেক অনেক দূর থেকে পাওয়া যাবে।”[1]

অতএব, হে মুসলিম পিতা! আপনার কলিজার টুকরা মেয়েটি জাহান্নামের অধিবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হউক -এতে কি আপনি রাজি আছেন?

আপনি কি পছন্দ করবেন যে, আপনি তাকে এমন পোশাক পরিধান করাবেন, যার কারণে সে নির্লজ্জ হয়ে যাবে, অথচ লজ্জা হলো ঈমানের অঙ্গ?

আপনি কি আপনার মেয়েকে এমনভাবে উপস্থাপন করতে পছন্দ করবেন, যেমনিভাবে আপনি বিক্রয়ের পণ্যকে সুন্দর চাকচিক্যপূর্ণ আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করেন, যার প্রতি প্রত্যেক নিকৃষ্ট দুষ্ট ব্যক্তির দৃষ্টি আকৃষ্ট থাকে?

আপনি কি চাইবেন যে, আপনি আপনার পূর্ববর্তীগণের কুরআন ও সুন্নাহর শিষ্টাচারপূর্ণ স্বভাব-চরিত্র ও ঐতিহ্য থেকে বের হয়ে এমন এক জাতির স্বভাব-চরিত্র অনুসরণের দিকে ধাবিত হবেন, যারা ইহুদী, খ্রিষ্টান, মূর্তিপূজক ও স্বভাব-প্রকৃতি পূজারীগণের নিকট থেকে তা গ্রহণ করেছে?

আপনারা জানেন না যে, এসব সম্প্রদায় এমন, যারা ডুবে গেছে এ নকল সভ্যতার মধ্যে এবং তারা এসব নগ্ন পোশাক পরিধান করেছে।

সাবধান! আপনারা জেনে রাখবেন যে, তারা এখন তার নিষ্ঠুর নিষ্পেষণ ও মারাত্মক পরিণতির কারণে আর্তনাদ করছে এবং তার তার পঙ্কিলতা থেকে মুক্তি কামনা করছে। কারণ, তার তার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সম্পর্কে বুঝতে পেরেছে এবং তার বিষফল লাভ করেছে, আর তারা যে পর্যায়ে পৌঁছে গেছে তা এক খারপ গন্তব্যস্থল এবং তারা যা অর্জন করেছে তা এক মন্দ ফল।

হে ভাইসব! আমরা যখন এ পোশাকের ব্যাপারে আপত্তি তুলব না বা তার প্রতিরোধ করব না এবং তার থেকে আমাদের মেয়েদেরকে বিরত রাখব না, তখন নিশ্চিতভাবে তা আমাদের দেশে ছড়িয়ে যাবে এবং সৎ ও নষ্ট উভয়কে গ্রাস করবে, যেমনটি হয় আগুনের ক্ষেত্রে। যদি আপনি তাকে শুরুতেই নিভিয়ে দেন, তাহলে আপনি তাকে শেষ করে দিলেন এবং তার থেকে মুক্তি পেয়ে গেলেন, আর যদি আপনি তাকে ছেড়ে দেন, তাহলে তা ছড়িয়ে যাবে এবং তার চারি পাশে যা আছে সব জালিয়ে দেবে বা গিলে ফেলবে, অথচ আপনি তা প্রতিরোধ করতে পরবেন না এবং পরক্ষণে আপনি তার থেকে পালিয়েও বাঁচতে পারবেন না। কারণ, ততক্ষণে তা আপনার শক্তি ও সামর্থ্যের বাইরে চলে গেছে। আর কোনো কোনো মানুষ কতগুলো ভুল ও অযৌক্তিক ওজর দেখানো ও ছুতা খোঁজার কাজে লেগে থাকে, তারা বলে: তাদের (নারীদের) পরনে তো বড় লম্বা পাজামা আছে (সমস্যা কী?), কিন্তু এ যুক্তিটি সঠিক নয়। কারণ, এ পাজামাগুলো সংকীর্ণ আঁটসাঁট, যা ঊরু ও নিতম্বের (পাছার) আয়তন ও পরিমাপ পুরাপুরিভাবে স্পষ্ট করে দেয় এবং তার গ্রন্থি বা জোড়াগুলো একটা একটা করে আলাদাভাবে প্রকাশ করে দেয়, আর যদি মেয়েটি হালকা-পাতলা বা মোটা হয়, এসব পোশাক তাও স্পষ্ট করে দেয়। আর এসব কিছু এমন বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত, যা নারীর সাথে পঙ্কিল ও দুষ্ট লোকের সম্পর্ককে আবশ্যক করে এবং তাকে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণীর আওতাভুক্ত করে নেয়, যেখানে তিনি বলেছেন:

«... وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ... ».

“...আর এক দল হবে নারীদের, তাদেরকে পোশাক-পরিচ্ছদ পরিধান করা সত্ত্বেও উলঙ্গ দেখাবে...।”[2]

আবার কোনো কোনো মানুষ বলে: এ মেয়েটি তো ছোট, সে পর্দার বিধানের আওতায় নেই এবং এ জাতীয় পোশাক পরিধান করা তার জন্য বৈধ, আর এ মেয়েটি যখন ছোট অবস্থায় তা পরিধান করবে, তখন তাকে বড় অবস্থায়ও তা পরিধানে অভ্যস্ত করে তুলবে। আর যখন সে ছোট থাকা অবস্থায় তা পরিধান করবে, তখন তার লজ্জা-শরম চলে যাবে এবং তার জন্য তার ঊরু ও পা উদোম করাটাকে মামুলী ব্যাপার মনে হবে। কারণ, এসব স্থান শরীরের অংশবিশেষ, যখন তা প্রথম থেকেই ঢাকা থাকবে, তখন নারী তার বয়স কালে তা উন্মুক্ত করার বিষয়টিকে সমীহ করবে এবং গুরুত্বপূর্ণ মনে করবে, আর যখন তা প্রথম থেকেই খোলা-মেলা থাকবে, তখন পরবর্তী সময়ে তা খোলা রাখার ব্যাপারে তার মনের কাছে বড় কিছু মনে হবে না। আর এটা স্বভাবগত ও নিশ্চিতভবে জানা বিষয় যে, মানুষ যখন কোনো কিছুতে অভ্যস্ত হয়ে যায়, তখন তা তার জন্য সহজ হয়ে যায় যেমনটি আমরা এখন লক্ষ্য করি যে, এসব পোশাক এমন সব বড় বড় মেয়েরা পরিধান করে, যাদের ওপর পর্দা করা বাধ্যতামূলক। কেননা মেয়ে যখন পরিণত বয়সে উপনীত হবে, তখন তার প্রতি দৃষ্টি আকৃষ্ট হবে এবং পুরুষ ব্যক্তির মন তাকে দেখতে চাইবে। সুতরাং সে এ বয়সে পর্দা মেনে চলবে। তাবে‘ঈগণের অন্যতম ইমাম যুহরী রহ. বলেন:

«لا يَصْلُحُ النَّظَرُ إِلَى شَىْءٍ مِنْهُنَّ مِمَّنْ يُشْتَهَى النَّظَرُ إِلَيْهِ ، وَإِنْ كَانَتْ صَغِيرَةً».

“অপ্রাপ্ত বয়স্কা হলেও এসব মেয়েদের এমন কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দিকে তাকানো বৈধ হবে না, যা দেখলে লোভ সৃষ্টি হতে পারে।”[3]কিন্তু কিভাবে আমরা এ জাতীয় পোশাকসমূহ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হব? আমরা এতে সক্ষম হব, প্রতিটি মানুষ কর্তৃক বিবেক-বুদ্ধি ও ইনসাফের দৃষ্টিতে এসব পোশাকের উপকারিতা (বাস্তবে এগুলোর মধ্যে কোনো উপকারিতা নেই) ও ক্ষতিসমূহ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার দ্বারা। সুতরাং যখন সে তার ক্ষতিসমূহের ব্যাপারে নিশ্চিত হবে, তখন সে তার পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজনকে তা পরিধান করা থেকে নিষেধ করবে, যাদেরকে নিষেধ করতে সে সক্ষম হবে, আর তার ভাইদেরকে তার থেকে সতর্ক করবে এবং ছোট্ট মেয়েদের মনে তার কুৎসিত দিকগুলো তুলে ধরবে। আর তাদের নিকট তার নোংরা ও খারাপ দিকগুলো বর্ণনা করবে, যাতে তাদের মনে এসব পোশাকের ব্যাপারে অপছন্দ ও ঘৃণার বিষয়টি পুঞ্জীভূত হয়, এমনকি শেষ পর্যন্ত যে এ জাতীয় পোশাক পরিধান করবে তারা তাকে দোষী বলে মনে করবে।

>
[1] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ৫৭০৪

[2] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ৫৭০৪

[3] বুখারী, অনুমতি অধ্যায়, পরিচ্ছেদ (বাব) নং-২