এক- খুব তাড়াতাড়ি খাওয়ারের ব্যবস্থা করা। কারণ, এটি মেহমানের সম্মান করা। হাতেম আল-আসাম রহ. বলেন, “তাড়াহুড়া করা শয়তানের কাজ, তবে পাঁচটি কাজে তাড়াহুড়া করা বৈধ:
১. মেহমানের মেহমানদারি করা।
২. মৃত ব্যক্তির দাফন কাফন।
৩. কুমারী মেয়েকে বিবাহ দেওয়া।
৪. ঋণ পরিশোধ করা এবং
৫. গুনাহ থেকে তাওবা করা”।[1]
দুই- যখন কোনো মেহমান আসে তুমি তার সামনে খানা সাধ্য অনুযায়ী ভালো খাবার পেশ করবে। তাকে এ কথা জিজ্ঞাসা করবে না যে, আপনি খানা খাবেন? আপনার জন্য খানা আনব কিনা? খানা পাকাবো কিনা? ইত্যাদি। আর যখন কোনো মেহমান বলে, না আমি খাবো না, শুধু তার এ কথা বলা দ্বারা মেহমানদারি করা হতে বিরত থাকা কৃপণতারই আলামত। যেমন, সুফিয়ান সাওরী রহ. বলেন, “যখন তোমার কোনো ভাই তোমার বাড়িতে মেহমান হয়, তাকে তুমি এ কথা বলবে না। তুমি খানা খাবে? অথবা তোমার জন্য কি খানা নিয়ে আসব? তুমি খানা পেশ কর, যদি খায় ভালো অন্যথায় তুলে নাও”।
তিন- দস্তরখানে খাবার পরিবেশন করতে কার্পণ্য করবে না। কোনো খাবারকে গোপন করবে না। সব খাবারই মেহমানের সামনে তুলে ধরবে। অনেক মানুষ এমন আছে তারা মেহমানকে ভালো ভালো খাওয়ার দেয় না। নিজেরা ভালো ভালো খায়। ইমাম গাজ্জালি রহ. দস্তরখানের আদব ও খাওয়ার নিয়ম বর্ণনা সম্পর্কে বলেন, যখন মেহমানদারি করবে, তখন প্রথমে ফল-ফ্রুটকে সামনে দেবে। কারণ, প্রথমে ফল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকার। তারপর মাংস খাবে। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে করীমে প্রথমে ফলের কথা উল্লেখ করেছেন তারপর মাংসের কথা উল্লেখ করছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَفَٰكِهَةٖ مِّمَّا يَتَخَيَّرُونَ ٢٠ وَلَحۡمِ طَيۡرٖ مِّمَّا يَشۡتَهُونَ ٢١﴾ [الواقعة: ٢٠، ٢١]
“আর (ঘোরাফেরা করবে) তাদের পছন্দমত ফল নিয়ে। আর পাখির মাংস নিয়ে, যা তারা কামনা করবে”। [সূরা আল-ওয়াকিয়া, আয়াত: ২০-২১]
চার- মেহমানের খাওয়া শেষ না হতে দস্তরখান উঠাবে না। মেহমানের সাথে একসাথে খানা শেষ করবে। অন্যথায় লজ্জায় মেহমান খেতে চাইবে না।
পাঁচ- এক সাথে খেতে বসলে মেহমানের আগেই খাওয়া শেষ করে চলে যাবে না। কারণ, এতে মেহমান পেট ভরে খেতে সংকোচ বোধ করবে। এ জন্য তার সাথে শরীক থাকবে বা বসে গল্প করবে।
ছয়- মেহমানের সাথে সাথে সুন্দর সুন্দর কথা বলবে। যাতে তার অন্তরে খুশি থাকে। মেহমানকে রেখে তার অনুমতি ছাড়া ঘুমবে না। তার উপস্থিতিতে নিজের কপালকে দোষারোপ করবে না।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«الكلمة الطيبة صدقة»
“সুন্দর কথা সদকা স্বরূপ”।[2]
ইমাম আওযায়ী রহ. কে জিজ্ঞাসা করা হলো, মেহমানের সম্মান কী? তিনি বললেন, “হাসি মুখ ও সুন্দর কথা”।
সাত- মেহমানকে বাড়ীর দরজা থেকে সম্ভাষণ জানানো এবং বিদায়ের সময় বাড়ীর দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসা।
আট- মেহমানের সাথে হাসি মুখে সাক্ষাত করা: আবু যর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«وتبسمك في وجه أخيك صدقة»
“তোমার ভাইয়ে সাথে মুচকি হাসি দিয়ে সাক্ষাত করা দান করার সাওয়াব”।[3]
নয়- মেহমানের সাথে মুসাফাহা করা: বারা ইবন আযেব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَا مِنْ مُسْلِمَيْنِ يَلْتَقِيَانِ فَيَتَصَافَحَانِ إِلَّا غُفِرَ لَهُمَا قَبْلَ أَنْ يَفْتَرِقَا»
“যখন দুই মুসলিম ভাইয়ের মাঝে দেখা হয় এবং একে অপরের সাথে মুসাফাহা করে, তাদের উভয়ের পৃথক হওয়ার পূর্বে আল্লাহ তা‘আলা তাদের ক্ষমা করে দেন”।[4] আল্লাহ তা‘আলা আমাদের মেহমানের মেহমানদারি করার তাওফীক দিন। আমীন।
>[2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৭০৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০০৯।
[3] সহীহ বুখারী, আদাবুল মুফরাদ, হাদীস নং ৮৯১। আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন।
[4] আবু দাউদ, হাদীস নং ৫২১২; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৭০৩; তিরমিযী, হাদীস নং ২৭২৭। আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন।