মহানবী (সঃ) কি আমাদের মতো মানুষ ছিলেন?

মহানবী (সঃ) আমাদের মত রক্ত, মাংস ও অস্তির গড়া মানুষ ছিলেন। আমাদের মত পিতার ঔরসে ও মাতার গর্ভে তাঁর জন্ম হয়েছিল। আমাদের মত তিনি খেতেন, পান করতেন। সুস্থ-অসুস্থ থাকতেন। বিস্মৃত হতেন, স্মরন করতেন। বিবাহ-শাদী করেছেন, তাঁর একাধিক স্ত্রী ছিল। তিনি সন্তানের জনক ছিলেন। ব্যবসা- বাণিজ্য করতেন। দুঃখ শোক, ব্যাথা ও যন্ত্রণা অনুভব করতেন। তাঁর প্রস্রাব- পায়খানা হত এবং তা অপবিত্র ছিল। তাঁর নাপাকীর উযু-গোসলের প্রয়োজন হতো। ১১ জীবিত ছিলেন, ইন্তিকাল করেছেন। মানুষের সকল প্রকৃতি ও প্রয়োজন তাঁর মাঝে ছিল।
মহান আল্লাহ তাঁর নবী (সঃ)-কে বলেছেন,
তুমি বল, ‘আমি তো তোমাদেরই মতই একজন মানুষ; আমার প্রতি প্র্যত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের উপাস্যই একমাত্র উপাস্য; সুতরাং যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার প্রতিপালকের ইবাদতে কাউকেও শরীক না করে।’(কাহফঃ ১১০, হা-মীম সাজদাহঃ৬)
পক্ষান্তরে কোন মানুষই তাঁর মত (সমান) নয়। আমরা তাঁর মতো মানুষ নই। অতিপ্রাকৃত বিষয়ে কেউই তাঁর মতো নয়। তিনি একটানা রোযা রাখতেন। সাহাবীগন তাঁর মতো রোযা রাখতে চাইলেন। তিনি বললেন, ‘এ বিষয়ে তোমরা আমার মতো নও। আমি তো রাত্রি অতিবাহিত করি, আর আমার প্রতিপালক আমাকে পানাহার করান।’১২
তাঁর দেহের ঘাম ছিল সুগন্ধি। একদা তিনি উম্মে সুলাইম (রঃ)'র ঘরে এসে শুয়ে ঘুমিয়ে গেলেন। তিনি ঘর্মাক্ত হলে উম্মে সুলাইম সেই ঘাম জমা করতে লাগলেন। তিনি জেগে উঠে তা দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কী ব্যাপার উম্মে সুলাইম?’ বললেন ‘আপনার ঘাম। আমাদের সুগন্ধিতে মিশিয়ে দেব। আর তা হবে শ্রেষ্ঠ সুগন্ধি।’১৩
তিনি বিশেষ ক’রে নামাযে সামনে যেমন দেখতেন, তেমনি পিছনেও দেখতেন। একদা এক নামাযের সালাম ফিরে তিনি বললেন, “তোমরা তোমাদের রুকু ও সিজদাকে পরিপূর্ণভাবে আদায় কর। সেই সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রান আছে, আমার নিকট তোমাদের রুকু, সিজদাহ ও বিনয়-নম্রতা অস্পষ্ট নয়। আমি আমার পিঠের পিছনে থেকে দেখতে পাই, যেমন সামনে দেখতে পাই। ১৪
তাঁর চক্ষু নিদ্রাভিভূত হতো, কিন্তু হৃদয় নিদ্রাভিভূত হতো না। ১৫
তাঁর দেহ ও দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন চুল, থুথু, তাঁর ব্যবহারিত জিনিস ইত্যাদি বরকতময় ছিল। ১৬

১১ (তিরমিযী ২৪৯১নং) । ১২ (মুসলিম ১১০৩, মিশকাত ১৯৮৬ নং) । ১৩ (মুসলিম ৬২০১নং)
১৪ (আহমাদ ৯৭৯৬, বুখারী ৪১৮, মুসলিম ৯৮৬, হাকেম ১/৩৬১, ইবনে খুজাইমা ৪৭৪, মিশকাত ৮৬৮ নং)
১৫ (বুখারী ৮৫৯, ১১৪৭, মুসলিম ১৭৫৭, ১৮২৬, আবূ-দাঊদ ২০২, তিরমিযী ৪৩৯, নাসাঈ ৬৯৭ নং)
১৬ (বুখারী, মুসলিম ৩২১৩ নং)