অর্থঃ প্রশস্তকারী
- The One who expands and widens.
- The Expander, He who expands
আল-বাসিত (প্রসারণকারী):
আল্লাহর নামসমূহের অন্যতম নাম হলো, আল-কাবিদ (নিয়ন্ত্রণকারী), আল-বাসিত (প্রসারণকারী), আল-খাফিদ (অবিশ্বাসীদের অপমানকারী), আর-রাফি‘ (উন্নীতকারী, উঁচুকারী), আল-মু‘ইয (সম্মান প্রদানকারী), আল-মুযিল্ল (সম্মান হরণকারী), আল-মানি‘ (প্রতিরোধকারী, রক্ষাকর্তা), আল-মু‘তী (দানকারী), আদ-দার (যন্ত্রণাদানকারী, উৎপীড়নকারী), আন-নাফি‘ (অনুগ্রাহক, উপকারকারী, হিতকারী)। এসব সম্মানিত নামসমূহ আসমাউল মুতাকাবিলাত তথা পরস্পর বিপরীতমুখী নাম যা একটির দ্বারা আল্লাহর প্রশংসা করলে সাথে এর বিপরীত নামের দ্বারাও প্রশংসা করা অত্যাবশ্যকীয়। কেননা এগুলোর দুটি নাম একত্রে আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ গুণ প্রকাশ পায়। তিনি যেমন রিযিক, রূহ ও আত্মাসমূহের কাবিয তথা নিয়ন্ত্রণকারী তেমনি তিনি রিযিক, রহমত ও অন্তরসমূহের বাসিত তথা প্রসারণকারী, প্রশস্ততাকারী। তিনি যেমন ইলম ও ঈমানে বলিয়ান সম্প্রদায়ের জন্য রাফি‘ তথা উঁচু মর্যাদাদানকারী তেমনি তিনি তাঁর শত্রুর ব্যাপারে আল-খাফিদ তথা অপমানকারী। তিনি তাঁর অনুগতদের জন্য মু‘ইয তথা সম্মান প্রদানকারী। আর তাঁর দেওয়া সম্মানই প্রকৃত সম্মান। কেননা আল্লাহর অনুগতরা পরাক্রমশালী ও সম্মানীত; যদিও তারা ফকির ও অভাবী হন। অন্যদিকে তিনি তাঁর অবাধ্য, অপরাধী ও শত্রুদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে আল-মুযিল্ল তথা সম্মান হরণকারী, অপমানকারী, লাঞ্ছনাকারী। আল্লাহর অবাধ্য ব্যক্তি যদিও প্রকাশ্যে সম্মান-মর্যাদা প্রদর্শন করে, কিন্তু তার অন্তর অপমান, লাঞ্ছনা ও অমর্যাদায় ভরপুর; যদিও সে প্রবৃত্তির লালসায় লিপ্ত থাকার কারণে এটি বুঝতে পারে না। কেননা আল্লাহর অনুগত্যের মধ্যেই রয়েছে সর্বপ্রকারের সম্মান আর তার অবাধ্যতায় রয়েছে সব ধরণের অপমান। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَمَن يُهِنِ ٱللَّهُ فَمَا لَهُۥ مِن مُّكۡرِمٍ١٨﴾ [الحج : ١٨]
“আল্লাহ যাকে অপমানিত করেন তার সম্মানদাতা কেউ নেই।” [সূরা আল-হাজ্জ, আয়াত: ১৮]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,
﴿مَن كَانَ يُرِيدُ ٱلۡعِزَّةَ فَلِلَّهِ ٱلۡعِزَّةُ جَمِيعًا١٠﴾ [فاطر: ١٠]
“কেউ যদি সম্মান চায় (তবে তা যেন আল্লাহর কাছেই চায়); কেননা সকল সম্মান আল্লাহরই।” [সূরা ফাতির, আয়াত: ১০]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,
﴿وَلِلَّهِ ٱلۡعِزَّةُ وَلِرَسُولِهِۦ وَلِلۡمُؤۡمِنِينَ٨﴾ [المنافقون: ٨]
“কিন্তু সকল মর্যাদা তো আল্লাহর, তাঁর রাসূলের ও মুমিনদের।” [সূরা আল-মুনাফিকূন, আয়াত: ৮]
আল্লাহ তা‘আলা আল-মানি‘ তথা প্রতিরোধকারী, রক্ষাকর্তা, নিষেধকারী, বারণকারী এবং তিনি আল-মু‘তী তথা দানকারী। তিনি যাকে দান করেন তাকে কেউ বারণ করতে পারে না আবার তিনি যাকে বারণ করেন তাকে কেউ দান করতে পারে না।[1] তিনি বান্দাদের থেকে যাকে ইচ্ছা দুনিয়া ও আখিরাতের ব্যাপারে উপকার করেন, আবার কেউ ক্ষতির কাজ করলে তিনি তাকে ক্ষতি করেন। [2]
এসব কিছু মহান আল্লাহর ন্যায়পরায়নতা, হিমমত ও প্রশংসনীয় কাজের অনুগামী। কেননা কারো মর্যাদা কমানো, কাউকে অপমানিত করা ও কাউকে কিছু থেকে বঞ্চিত করতে এসব কাজে আল্লাহর হিকমত রয়েছে। তবে আল্লাহর এসব কাজের ব্যাপারে কারো কোন জবাব দিহিতার অধিকার নেই। এমনিভাবে কারো মর্যাদা বৃদ্ধি, কাউকে কিছু দান করা ও কারো কল্যাণ প্রশস্ত করার ক্ষেত্রেও মহান আল্লাহর রয়েছে সূক্ষ্ম হিকমত।
বান্দার উপর কর্তব্য হলো আল্লাহর হিকমতকে স্বীকার করা, এমনিভাবে তাঁর অনুগ্রহ ও মর্যাদা যবান, অন্তর ও কাজের মাধ্যমে স্বীকৃতি দেওয়া।
তাছাড়া এসব কাজে তিনি একক, সব কিছু তাঁরই ইচ্ছায় ঘটে থাকে। আল্লাহ কারো মর্যাদা বৃদ্ধি, সম্মান প্রদান, কিছু দান করা ও সম্মানিত করার ব্যাপারে যুক্তি সংগত কারণ রয়েছে; পক্ষান্তরে এর বিপরীত কিছু করার ক্ষেত্রেও কারণ রয়েছে। প্রত্যেকেই যার যার কর্ম অনুযায়ী প্রতিদান প্রাপ্ত হয়। সৌভাগ্যবান লোকদের জন্য ভালো কাজ সহজ করে দেওয়া হয় আর দুর্ভাগা লোকদের জন্য দুর্ভাগা লোকদের মন্দ কাজ সহজ করে দেওয়া হয়। বান্দার উপর দায়িত্ব হলো আল্লাহর তাওহীদ যথার্থভাবে কায়েম করা, তাঁর রবের উপর সর্বকাজে নির্ভরশীল হওয়া, উপকারী কাজে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করা; কেননা এগুলো আল্লাহর হিকমতের স্থান।[3]
[1] আল-হাক্কুল ওয়াদিহ আল-মুবীন, পৃ. ৮৯।
[2] তাওদিহুল কাফিয়া আশ-শাফিয়াহ, পৃ. ১৩১।
[3] আল-হাক্কুল ওয়াদিহ আল-মুবীন, পৃ. ৮৯ ও ৯০।