৬২৯২

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - এ উম্মতের [উম্মতে মুহাম্মাদী (সা.)-এর] সাওয়াবের বিবরণ

৬২৯২-[১০] মু’আবিয়াহ্ ইবনু কুররাহ্ (রাঃ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: সিরিয়াবাসীগণ যখন ধ্বংস হয়ে যাবে, তখন আর তোমাদের মাঝে কোন কল্যাণ থাকবে না। আর আমার উম্মতের একদল লোক সর্বদা কিয়ামত অবধি শত্রুদের ওপর বিজয়ী থাকবে। যারা তাদের সাহায্য করবে না। তারা তাদের কোন ক্ষতি সাধন করতে পারবে না। ইবনুল মাদানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এঁরা হলেন মুহাদ্দিসীনের দল। ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং তিনি বলেছেন, হাদীসটি হাসান ও সহীহ

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب ثَوَاب هَذِه)

وَعَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ قُرَّةَ عَنْ أَبِيهِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا فَسَدَ أَهْلُ الشَّامِ فَلَا خَيْرَ فِيكُمْ وَلَا يَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي مَنْصُورِينَ لَا يَضُرُّهُمْ مَنْ خَذَلَهُمْ حَتَّى تَقُومَ السَّاعَةُ» قَالَ ابْنُ الْمَدِينِيِّ: هُمْ أَصْحَابُ الْحَدِيثَ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ

اسنادہ صحیح ، رواہ الترمذی (2192) ۔
(صَحِيح)

وعن معاوية بن قرة عن ابيه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «اذا فسد اهل الشام فلا خير فيكم ولا يزال طاىفة من امتي منصورين لا يضرهم من خذلهم حتى تقوم الساعة» قال ابن المديني: هم اصحاب الحديث. رواه الترمذي وقال: هذا حديث حسن صحيح اسنادہ صحیح ، رواہ الترمذی (2192) ۔ (صحيح)

ব্যাখ্যা: (إِذَا فَسَدَ أَهْلُ الشَّامِ فَلَا خَيْرَ فِيكُمْ) অর্থাৎ, সেখানে বসে অবস্থান করাতে অথবা সে অভিমুখে যাত্রা করাতে কোন কল্যাণ নেই।
(طَائِفَةٌ) কুরতুবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, (الُ طَائِفَةٌ) বলতে একটি নির্দিষ্ট দলকে বুঝানো হয়েছে। নিহায়ায় বর্ণিত হয়েছে, (الُ طَائِفَةٌ مَنْصُورِينَ) হলো মানুষের একটি দল। এটি একজন ব্যক্তির ক্ষেত্রেও ব্যবহার হয়। যেন এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো খোদ এক শ্রেণি। (مَنْصُورِينَ) অর্থাৎ দীনের শত্রুদের ওপর বিজয়ী। (لَا يَضُرُّهُمْ مَنْ خَذَلَهُمْ) তাদেরকে সাহায্য সহযোগিতা না করাতে তাদের কোন ক্ষতি হবে না। কিয়ামত সংগঠিত হওয়া বলতে ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, কিয়ামত সন্নিকটে আসা পর্যন্ত। আর তা হলো (خريج الريح) তথা মৃদু হাওয়া বয়ে যাওয়া।
কুসত্বলানী (রহিমাহুল্লাহ) বুখারীর ব্যাখ্যায় বলেন, এ হাদীসটি মুসলিমে বর্ণিত আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ)-এর হাদীসের সাথে সাংঘর্ষিক বা পরস্পর বিরোধী। এর উত্তরে বলা যায় যে, সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, নিকৃষ্ট মানুষের ওপর কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবে। এখানে (شرارالناس) থেকে উদ্দেশ্য হলো, তারা এমন মানুষ যারা একটি নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করবে। অপর স্থানে থাকবে একদল যারা হকের পথে যুদ্ধ করবে। তবারানীতে আবূ উমামাহ্-এর হাদীসে আছে, জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! তারা কোথায় থাকবে। উত্তরে তিনি (সা.) বললেন, তারা বায়তুল মাক্বদিসে থাকবে। যাদেরকে দাজ্জাল বের হয়ে ঘিরে ফেলবে। অতঃপর ‘ঈসা আলায়হিস সালাম নেমে আসবেন এবং দাজ্জালকে হত্যা করবেন। হতে পারে এটা হবে দাজ্জাল বের হওয়ার সময় অথবা ‘ঈসা আলায়হিস সালাম-এর মৃত্যুর পর যার পূর্বে এক হাওয়া বয়ে যাবে। যে হাওয়াতে যাদের মধ্যে বিন্দুমাত্র ঈমান রয়েছে তাদের কেউ অবশিষ্ট থাকবে না। প্রত্যেকে মৃত্যুবরণ করবে। শুধুমাত্র থাকবে পৃথিবীর নিকৃষ্ট মানুষেরা। তাদের ওপর কিয়ামত সংঘটিত হবে। এভাবেই মুসলিমমুক্ত পৃথিবী নিশ্চিত হবে। অধিকন্ত এ সম্মানিত দল থেকে তো বটেই। এভাবেই ফাতহুল বারীতে দুই হাদীসের মাঝে সমন্বয় সাধন করা হয়, যা গ্রহণে নির্ভরযোগ্য।
(أَضحَابُ الْحَدِيثَ) ইমাম বুখারী তাঁর সহীহ গ্রন্থে বলেন, তারা হলো (اهل العلم) অর্থাৎ ‘আলিম উলামা।
‘আল্লামাহ্ হাফিয (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর (الفتح) গ্রন্থে বলেন, হাকাম ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল (রহিমাহুল্লাহ) থেকে সহীহ সনদে উলূমুল হাদীসে বলেন, (إِنْ لَمْ يَكُونُواأَهْلَ الْحَدِيثِ فَلَا أَدُرِي مَنْ هُمْ) অর্থাৎ এ দল যদি আহলে হাদীস না হয়, তাহলে আমার জানা নেই তারা কারা।
কাযী ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, মূলত ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল (রহিমাহুল্লাহ)-এর দ্বারা আহলে হাদীস আদর্শের অনুসারী বা তাদের আক্বীদায় বিশ্বাসীদেরকে এবং আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা'আতকে বুঝাতে চেয়েছেন। ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, হতে পারে এরা মু'মিনদের বিভিন্ন দল। যাদের মধ্যে বীর যোদ্ধা, ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, দুনিয়াত্যাগী সৎকাজের নির্দেশ দাতা ও মন্দ কাজের নিষেধকারী রয়েছে। আরো বিভিন্ন প্রকার কল্যাণকামী দল তাদের একত্রিত থাকা আবশ্যক নয়। বরং তারা পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত থাকবে। (তুহফাতুল আহওয়াযী - “জামিউল কিতাবিত তিস্'আহ” এ্যাপ, হা, ২১৯২)
(حَتَّى تَقُومَ السَّاعَةُ) কিয়ামত সংগঠিত হওয়া পর্যন্ত। অর্থাৎ কিয়ামত নিকটে চলে আসবে। আসহাবুল হাদীস অর্থাৎ হাদীসের অনুসারীদের একটি দল কিয়ামত পর্যন্ত কুরআন ও হাদীসের পথে কায়িম থাকবে, মানুষেরা তাদের প্রতি শত্রুতা পোষণ করবে। কিন্তু তাদের শত্রুতায় কোনই ক্ষতি হবে না। কিয়ামত পর্যন্ত এ দল কায়িম থাকবে এমনকি ইমাম মাহদীর সাথে মিলিত হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ - মুম্বাই ছাপা, ৫ম খণ্ড, পৃ. ৩০২)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩০: মান-মর্যাদা (كتاب المناقب)