পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - উসমান (রাঃ)-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬০৮০-[১২] ’উসমান ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু মাওহাব (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন মিসরের এক লোক হজ্জে বায়তুল্লাহর উদ্দেশে (মক্কায়) আসলো। তখন সে সেখানে একদল লোককে উপবিষ্ট দেখে প্রশ্ন করল, এরা কে? লোকেরা বলল, এরা কুরায়শ। সে আবার প্রশ্ন করল, এদের মাঝে এ প্রবীণ বয়স্ক লোক কে? লোকেরা বলল, ’আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ)।
তখন সে বলল, হে ইবনু ’উমার! আমি আপনাকে কিছু কথা জিজ্ঞেস করতে চাই। আপনি আমাকে বলুন আপনি কি জানেন যে, উহুদ যুদ্ধের দিন ’উসমান (রাঃ) (যুদ্ধক্ষেত্র হতে) পলায়ন করেছিলেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। লোকটি আবার প্রশ্ন করল, আপনি কি এটাও জানেন যে, উসমান (রাঃ) বদর যুদ্ধে অনুপস্থিত ছিলেন, যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত হননি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। লোকটি পুনরায় প্রশ্ন করল, আপনি কি জানেন যে, উসমান (রাঃ) বায়’আতে রিযওয়ান (হুদায়বিয়াতে অনুষ্ঠিত বায়’আত) হতে অনুপস্থিত ছিলেন এবং তাতে যোগদান করেননি। তিনি বললেন, হ্যাঁ। [’উসমান (রাঃ)-এর প্রতি বিদ্বেষীস্বরূপ আনন্দে] সে বলে উঠল, ’আল্ল-হু আকবার’। তখন ইবনু ’উমার (রাঃ) বললেন, এবার আসো। প্রকৃত বিষয়টি তোমাকে বুঝিয়ে দিচ্ছি। উহুদের দিন তাঁর পলায়নের ব্যাপারটি- সে সম্পর্কে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তাঁর সে ত্রুটিটি আল্লাহ তা’আলা মাফ করে দিয়েছেন। আর বদর যুদ্ধ হতে তার অনুপস্থিতির ব্যাপার হলো, রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কন্যা রুকাইয়্যাহ্ ছিলেন উসমান (রাঃ) এর স্ত্রী। আর তিনি ছিলেন ঐ সময় রোগশয্যায়। তাই রাসূলুল্লাহ (সা.) ’উসমান-কে বলেছিলেন, এ যুদ্ধে যারা যোগদান করবে, তুমি তাদের সমপরিমাণ পুণ্য লাভ করবে এবং (অনুরূপভাবে) গনীমাতের অংশ হতেও তাদের সমপরিমাণ অংশ তুমি লাভ করবে। আর “বায়’আতে রিযওয়ান” হতে অনুপস্থিতির ব্যাপার হলো মাক্কার অধিবাসীদের কাছে উসমান অপেক্ষা অধিকতর সম্মানিত ব্যক্তি যদি অপর কেউ থাকত, তাহলে রাসূলুল্লাহ (সা.) উসমান (রাঃ)-এর স্থলে নিশ্চয় তাকেই পাঠাতেন। তাই রাসূলুল্লাহ (সা.) উসমান (রাঃ) -কেই পাঠিয়েছিলেন। উসমান (রাঃ) -এর মাক্কায় চলে যাওয়ার পর বায়’আতুর রিযওয়ান সংঘটিত হয়। তখন রাসূলল্লাহ (সা.) আপন ডান হাতের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, এটা ’উসমান-এর হাত। তারপর তিনি সে হাতটি নিজের অপর হাতের উপর রেখে বললেন, ’এটা ’উসমান-এর বায়’আত’।
অতঃপর ইবনু ’উমার (রাঃ) লোকটিকে বললেন, ’এখন তুমি এ বর্ণনা সঙ্গে নিয়ে যাও। কেননা তাতে যাদের ’উসমান (রাঃ) সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা আছে, তাদের বিভ্রান্তি দূর হয়ে যাবে। আর ’উসমান (রাঃ) সম্পর্কে তোমার ভ্রান্ত বিশ্বাস হতে তোমার কোন উপকারে আসবে না, বরং তা বাতিল বলে গণ্য হবে। (বুখারী)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب مَنَاقِب عُثْمَان)
عَنْ عُثْمَانَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَوْهَبٍ قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ مِصْرَ يُرِيدُ حَجَّ الْبَيْتِ فَرَأَى قَوْمًا جُلُوسًا فَقَالَ: مَنْ هَؤُلَاءِ الْقَوْمُ؟ قَالُوا: هَؤُلَاءِ قُرَيْشٌ. قَالَ فَمَنِ الشَّيْخُ فِيهِمْ؟ قَالُوا: عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ. قَالَ: يَا ابْنَ عُمَرَ إِنِّي سَائِلُكَ عَنْ شَيْءٍ فَحَدِّثْنِي: هَلْ تَعْلَمُ أَنَّ عُثْمَانَ فَرَّ يَوْمَ أُحُدٍ؟ قَالَ: نَعَمْ. قَالَ: هَلْ تَعْلَمُ أَنَّهُ تَغَيَّبَ عَنْ بَدْرٍ وَلَمْ يَشْهَدْهَا؟ قَالَ: نَعَمْ. قَالَ: هَلْ تَعْلَمُ أَنَّهُ تَغَيَّبَ عَنْ بَيْعَةِ الرِّضْوَانِ فَلَمْ يَشْهَدْهَا؟ قَالَ: نَعَمْ؟ قَالَ: اللَّهُ أَكْبَرُ قَالَ ابْنُ عُمَرَ: تَعَالَ أُبَيِّنْ لَك أما فِراره يَوْم أُحد فأشهدُ أَن اللَّهَ عَفَا عَنْهُ وَأَمَّا تَغَيُّبُهُ عَنْ بَدْرٍ فَإِنَّهُ كَانَتْ تَحْتَهُ رُقَيَّةُ بِنْتُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكَانَتْ مَرِيضَةً فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ لَكَ أَجْرَ رَجُلٍ مِمَّنْ شَهِدَ بَدْرًا وَسَهْمَهُ» . وَأَمَّا تَغَيُّبُهُ عَنْ بَيْعَةِ الرِّضْوَانِ فَلَوْ كَانَ أَحَدٌ أَعَزَّ بِبَطْنِ مَكَّةَ مِنْ عُثْمَانَ لَبَعَثَهُ فَبَعَثَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عُثْمَان وَكَانَت بَيْعةُ الرضْوَان بعدَ مَا ذَهَبَ عُثْمَانُ إِلَى مَكَّةَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدِهِ الْيُمْنَى: «هَذِهِ يَدُ عُثْمَانَ» فَضَرَبَ بِهَا عَلَى يَدِهِ وَقَالَ: «هَذِه لعُثْمَان» . فَقَالَ لَهُ ابْنُ عُمَرَ: اذْهَبْ بِهَا الْآنَ مَعَكَ. رَوَاهُ البُخَارِيّ
رواہ البخاری (3698) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (جَاءَ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ مِصْرَ يُرِيدُ حَجَّ الْبَيْتِ) হাফিয ইবনু হাজার (রহিমাহুল্লাহ) এ প্রসঙ্গে বলেন, আমি ব্যক্তির নাম জানি না এবং কোন গোত্র হতে এসেছিল সে গোত্রের নাম কি তাও জানি না।
(وَ قٰتِلُوۡهُمۡ حَتّٰی لَا تَکُوۡنَ فِتۡنَۃٌ) ফিতনাহ্ দূরীভূত না হওয়া পর্যন্ত”- (সূরা আল বাকারাহ ২ : ১৯৩)। উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় যা বলা হয়েছে তাতে মনে হয় ব্যক্তিটির নাম ছিল 'আলা ইবনু আরার। কিন্তু সূরা আল আনফাল-এর ব্যাখ্যায় বলা প্রশ্নকারী ব্যক্তির নাম ছিল হাকিম।
(قَالَ ابْنُ عُمَرَ: تَعَالَ أُبَيِّنْ لَك) ইবনু উমার (রাঃ) তার উদ্দেশ্য বুঝতে পারলেন কেন সে এ বিষয়টিকে বড় করে দেখছে। তিনটি বিষয়ে ব্যক্তিটি দোষ তুলে ধরল, তাই ইবনু 'উমার (রাঃ) -এর নিকট তিনটি ওযর ব্রেনে উপস্থিত হলো এবং উপস্থাপন করে তার সন্দেহ দূর করল।
১) উহুদ যুদ্ধ হতে পলায়ন করা, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন।
২) বদর যুদ্ধ হতে পিছিয়ে থাকা নবী (সা.) -এর আদেশ ছিল। তার জন্য দুটি বিষয় অর্জিত হয়েছে। দুনিয়াতে গনীমাতের অংশ আর পরকালে উত্তম প্রতিদান।
৩) আর বায়'আত থেকে পিছিয়ে থাকার ব্যাপারে নবী (সা.)-এর অনুমতি ছিল। আর 'উসমান (রাঃ) এর জন্য নবী (সা.) -এর হাত উত্তম ছিল তার নিজের হাতের চেয়ে।
(فَإِنَّهُ كَانَتْ تَحْتَهُ رُقَيَّةُ بِنْتُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ) নবী (সা.) যখন বদর যুদ্ধে বের হলেন তখন রুকাইয়্যাহ (রাঃ) অসুস্থ ছিলেন, তাই তার শুশ্রূষা করার জন্য উসমান ও উসামাহ ইবনু যায়দ (রাঃ) কে রেখে যান।
যায়দ ইবনু হারিস (রাঃ), যখন সুসংবাদ নিয়ে পৌছান তখন রুকাইয়্যাহ (রাঃ) মৃত্যুবরণ করেন। তিনি বিশ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। আর তারপরে তার ছেলে আবদুল্লাহ ৪র্থ হিজরীতে ছয় বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করে।
কারী (রহিমাহুল্লাহ) হাদীসের একটি সারমর্মে বলেন, ইবনু 'উমার (রাঃ) লোকটিকে বলল, 'উসমান (রাঃ) সম্পর্কে তোমার কোন ভ্রান্ত ধারণা থাকবে না যখন আমি যথার্থ উত্তরের মাধ্যমে সুস্পষ্ট বর্ণনা করব।
(وَكَانَت بَيْعةُ الرضْوَان بعدَ مَا ذَهَبَ عُثْمَانُ إِلَى مَكَّةَ) মুসলিমদের মাঝে এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়ল যে, মুশরিকরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। তখন মুসলিমরাও যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করল এবং তারা নবী (সা.) - এর হাতে বায়'আত গ্রহণ করল যে, তারা যুদ্ধের ময়দান হতে পলায়ন করবে না।
কেউ কেউ বলেন যে, মুসলিমদের নিকট খবর আসলো ‘উসমান (রাঃ)-কে হত্যা করা হয়েছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ, ফাতহুল বারী ৭/৩৬৯৮)