পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা
৫৮৭৯-[১২] সুলায়মান ইবনু সুরদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (খন্দক যুদ্ধের সময় মদীনাহ্ আক্রমণের উদ্দেশে মক্কাহ্ হতে আগত) কাফিরদের সম্মিলিত বাহিনী যখন (অকৃতকার্য অবস্থায়) ফিরে যেতে বাধ্য হলো, তখন নবী (সা.) বললেন, এখন হতে আমরাই তাদের ওপর আক্রমণ করব। তারা আর আমাদের ওপর আক্রমণ করতে পারবে না, আমরাই তাদের দিকে অগ্রসর হব। (বুখারী)
الفصل الاول (بَاب فِي المعجزا)
وَعَن سليمانَ بن صُرَد قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِينَ أَجْلَى الْأَحْزَابَ عَنْهُ: «الْآنَ نَغْزُوهُمْ وَلَا يغزونا نَحن نسير إِلَيْهِم» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
رواہ البخاری (4019 ۔ 4110) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: খন্দক যুদ্ধে কুফফার শক্তি যখন উচ্ছেদ হলো তখন রাসূল (সা.) বললেন, এরপর থেকে আমরাই তাদেরকে আক্রমণ করতে যাব। তারা আমাদের আক্রমণ করতে আসতে পারবে না। উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় মিরকাত প্রণেতা আলোচনা করে বলেন, খন্দক যুদ্ধের সময় রাসূল (সা.) এর বিরুদ্ধে দশ হাজার কাফির সৈন্যের এক বিশাল বাহিনী মদীনায় আক্রমণ করার লক্ষ্যে বের হয়। কেননা, গোত্র তিহামার অধিবাসী এবং কুরায়শদের লিডার ছিলেন আবূ সুফইয়ান। গাতফান গোত্র এক হাজার সৈন্য নিয়ে বের হয়েছিল। আর তাদের সাথে নাজুদের অধিবাসীরাও এসেছিল। তাদের নেতা ছিলেন ওয়াইনাহ্ ইবনু হাসীন এবং হাওয়াযিন-এর আমীর ইবনু তুফায়ল। সেই সময়ে মদীনার ইয়াহূদী গোত্র তথা কুরায়যাহ্ ও নাযীরের লোকেরাও মুসলিমদেরকে কষ্ট দিয়েছে।
আগত কাফির সৈন্যবাহিনী মদীনায় প্রবেশ করতে পারেনি তবে তারা পরিখার অন্যপাশে অবস্থান করেছে এবং তারা একে অপরকে তীর ও পাথর নিক্ষেপ করেছে। তাদের মাঝে এই অবস্থা চলেছে প্রায় এক মাসের মত। তারপর আল্লাহ প্রত্যুষের বাতাস পাঠানোর মাধ্যমে এবং অদৃশ্য বাহিনী তথা মালাক (ফেরেশতা) পাঠিয়ে মুসলিমদেরকে সাহায্য করেছেন, আর তাদের অন্তরে ভয়-ভীতি প্রবেশ করিয়ে দেন।
ত্বলহাহ্ ইবনু খুওয়াইলিদ আল আসাদী বলেন, ওহে তোমরা! মুক্তির পথ খোঁজ। তাড়াতাড়ি মুক্তির পথ খোজ। অতঃপর তারা লড়াই ছাড়াই ভেগে যেতে বাধ্য হয়।
তারা চলে যাওয়ার পর নবী (সা.) বললেন, এরপর থেকে আমরাই তাদেরকে আক্রমণ করতে যাব। তারা আমাদেরকে আক্রমণ করতে আসতে পারবে না। কেননা অন্যদের আক্রমণ প্রতিহত করাটা অনেক সমস্যার কাজ। এজন্য আমরাই তাদের দিকে গিয়ে আক্রমণ করব। আর পরবর্তীতে তথা হুদায়বিয়ার সন্ধির পর এটিই হয়েছে, কুফফার শক্তি আর তাদেরকে আক্রমণ করতে আসতে পারেনি। তারপর মুসলিমগণ এগিয়ে গিয়ে মক্কাহ্ বিজয় করেছে এবং আল্লাহর অনুগ্রহে তারা অনেক বিজয় লাভ করেছে।
(الْآنَ نَغْزُوهُمْ) অর্থাৎ এখন থেকে আমরাই যুদ্ধ করার জন্য যাব। ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) এ সম্পর্কে বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর উক্ত বাণীর মাধ্যমে এই সংবাদ পাওয়া যায় যে, মুশরিকদের দাপট কমে এসেছে। তারপর তেমনই ঘটেছে। এটি ছিল রাসূল (সা.)-এর বিশেষ মু'জিযাহ্। (মিকাতুল মাফাতীহ)
ফাতহুল বারীতে উল্লেখ করা হয়েছে, (حِينَ أَجْلَى) অর্থাৎ যখন তাদেরকে উচ্ছেদ করা হলো। এ বাক্য থেকে এটাই বুঝা যায় যে, তারা তাদের অনিচ্ছা সত্ত্বেও ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছে আর তা সম্ভব হয়েছে মহান আল্লাহর সাহায্যের কারণেই। এটি সংঘটিত হয়েছে যিলক'দাহ্ মাসের ২৩ তারিখে। তার পরের বছর নবী (সা.) ও তাঁর সাহাবীদের নিয়ে ‘উমরাহ করতে যান। কিন্তু তিনি কুরায়শ কর্তৃক বাধাপ্রাপ্ত হন এবং তাদের মধ্যে তখন সন্ধি স্থাপিত হয়। পরবর্তীতে তারাই সেই সন্ধি ভঙ্গ করে। আর এটিই মুসলিমদের পক্ষে মক্কাহ বিজয়ের সুযোগ হয়ে দাঁড়ায়। (ফাতহুল বারী হা. ৪১০৯)