৫৮৬৩

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - মিরাজের বর্ণনা

৫৮৬৩-[২] সাবিত আল বুনানী (রহিমাহুল্লাহ) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আমার সামনে বুরাক’ উপস্থিত করা হলো। তা শ্বেত বর্ণের লম্বা কায়াবিশিষ্ট একটি জানোয়ার, গাধার চেয়ে বড় এবং খচ্চর অপেক্ষা ছোট। তার দৃষ্টি যত দূর যেত সেখানে পা রাখত। আমি তাতে আরোহণ করে বায়তুল মাক্বদিসে এসে পৌছলাম এবং অন্যান্য নবীগণ যে স্থানে নিজেদের বাহন বাঁধতেন, আমিও আমার বাহনকে সেখানে বাঁধলাম। নবী (সা.) বলেন, অতঃপর বায়তুল মাকদিসের মাসজিদে প্রবেশ করে সেখানে দু’রাকআত সালাত আদায় করলাম। তারপর মাসজিদ হতে বের হলাম, তখন জিবরীল আলায়হিস সালাম আমার কাছে এক পাত্র মদ ও এক পাত্র দুধ নিয়ে আসলেন। আমি দুধের পাত্রটি গ্রহণ করলাম। তখন জিবরীল আলায়হিস সালাম বললেন, আপনি (ইসালামরূপী) ফিত্বরাত (স্বভাব-ধর্ম ইসালাম গ্রহণ করেছেন।
অতঃপর জিবরীল আলায়হিস সালাম আমাকে আকাশের দিকে নিয়ে চললেন, এর পরবর্তী অংশ সাবিত আল বুনানী (রহিমাহুল্লাহ) আনাস (রাঃ) হতে পূর্ববর্ণিত হাদীসটির মর্মানুরূপ বর্ণনা করেছেন।
নবী (সা.) বলেন, হঠাৎ আমি আদম আলায়হিস সালাম -কে দেখতে পেলাম। তিনি আমাকে সাদর সম্ভাষণ জানালেন এবং আমার জন্য ভালো দু’আ করলেন। নবী (সা.) এটাও বলেছেন যে, তিনি তৃতীয় আকাশের ইউসুফ আলায়হিস সালাম -এর সাক্ষাৎ লাভ করেছেন। তিনি এমন লোক যে, তাঁকে (গোটা পৃথিবীর) অর্ধেক সৌন্দর্য দান করা হয়েছে। তিনিও আমাকে সাদর অভিনন্দন জানিয়ে আমার জন্য ভালো দুআ করলেন। সাবিত (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এবং মূসা আলায়হিস সালাম এর কান্নার বিষয়টি এতে উল্লেখ নেই।
নবী (সা.) আরো বলেছেন, সপ্তম আকাশে আমি ইবরাহীম আলায়হিস সালাম -কে দেখতে পেলাম যে, তিনি বায়তুল মা’মূরের সাথে পিঠ লাগিয়ে বসে আছেন। সে ঘরে দৈনিক সত্তর হাজার মালাক (ফেরেশতা) প্রবেশ করেন। যারা একবার বের হয়েছেন, পুনরায় তারা আর প্রবেশ করার সুযোগ পাবেন না। অতঃপর জিবরীল আলায়হিস সালাম আমাকে সিদরাতুল মুনতাহায় নিয়ে গেলেন। তার পাতাগুলো হাতির কানের মতো এবং তার ফল মটকার মতো। এরপর উক্ত গাছটি আল্লাহ তা’আলার নির্দেশে এমন একটি আবৃতকারী বস্তুতে পরিবর্তিত হয় যে, আল্লাহর সৃষ্ট কোন মাখলুক যার সৌন্দর্যের কোন প্রকার বর্ণনা দিতে সক্ষম হবে না।
এরপর আল্লাহ তা’আলা আমার কাছে ওয়াহী পাঠালেন, যা তিনি পাঠিয়েছেন এবং আমার ওপরে দৈনিক পঞ্চাশ (ওয়াক্ত) সালাত ফরয করলেন। ফেরার সময় আমি মুসা আলায়হিস সালাম -এর কাছে আসলে তিনি আমাকে প্রশ্ন করলেন আপনার প্রভু আপনার উম্মতের ওপর কি ফরয করেছেন? আমি বললাম, দৈনিক পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। তিনি আমাকে (পরামর্শস্বরূপ) বললেন, আপনি আপনার প্রভুর কাছে ফিরে যান এবং (সালাতের সংখ্যা) কম করার জন্য তার কাছে আবেদন করুন। কেননা আপনার উম্মত এটা দৈনিক পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত সম্পাদন করতে সক্ষম হবে না। আমি বানী ইসরাঈলকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছি।
তিনি (সা.) বলেন, তখন আমি আমার প্রভুর কাছে ফিরে গিয়ে বললাম, হে আমার প্রভু! আমার উম্মাতের ওপর হতে কম করে দিন। তখন আমার ওপর হতে পাঁচ (ওয়াক্ত সালাত) কমিয়ে দিলেন। অতঃপর আমি মূসা আলায়হিস সালাম -এর কাছে ফিরে এসে বললাম, আল্লাহ তা’আলা আমার ওপর হতে পাঁচ (ওয়াক্ত সালাত) কমিয়ে দিয়েছেন। মূসা আলায়হিস সালাম বললেন, আপনার উম্মত তা সম্পাদনেও সমর্থ হবে না। কাজেই আপনি পুনরায় আপনার প্রভুর কাছে যান এবং আরো কম করার জন্য আবেদন করুন।
নবী (সা.) বলেন, আমি এভাবে আমার প্রভু ও মূসা আলায়হিস সালাম -এর মাঝে আসা-যাওয়া করতে থাকলাম এবং বার বার সালাতের সংখ্যা কমিয়ে আনতে থাকলাম। তিনি (সা.) বলেন, সর্বশেষে আমার প্রভু বললেন, হে মুহাম্মাদ! দৈনিক ফরয় তো এই পাঁচ সালাত এবং প্রত্যেক সালাতের সাওয়াব দশ সালাতের সমান। ফলে এটা (পাঁচ ওয়াক্ত) পঞ্চাশ সালাতের সমান। যে লোক কোন একটি ভালো কাজ করার সংকল্প করবে, কিন্তু তা সম্পাদন করেনি, তার
জন্য একটি পুণ্য লেখা হবে এবং সে কাজটি সম্পাদন করলে তার জন্য দশটি পুণ্য লেখা হবে। আর যে লোক কোন একটি খারাপ কাজ করার সংকল্প করে তা বাস্তবায়ন না করে, তার জন্য কিছুই লেখা হবে না। অবশ্য যদি সে উক্ত কাজটি বাস্তবায়ন করে, তবে তার জন্য একটি গুনাহই লেখা হবে।
তিনি (সা.) বলেন, অতঃপর আমি অবতরণ করে যখন মূসা আলায়হিস সালাম -এর নিকট পৌছলাম, তখন তাঁকে পূর্ণ বিবরণ জানালাম। তখন তিনি আমাকে বললেন, আবারও আপনার প্রভুর কাছে যান এবং আরো কিছু কমিয়ে দেয়ার জন্য। অনুরোধ করুন। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, আমি বললাম, আমি আমার প্রভুর কাছে বার বার গিয়েছি। এখন পুনরায় যেতে আমার লজ্জাবোধ হচ্ছে। (মুসলিম)

الفصل الاول (بَابٌ فِي الْمِعْرَاجِ)

وَعَن ثابتٍ البُنانيِّ عَنْ أَنَسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «أُتيتُ بالبُراق وَهُوَ دابَّة أَبْيَضُ طَوِيلٌ فَوْقَ الْحِمَارِ وَدُونَ الْبَغْلِ يَقَعُ حَافِرُهُ عِنْدَ مُنْتَهَى طَرْفِهِ فَرَكِبْتُهُ حَتَّى أَتَيْتُ بَيْتَ الْمَقْدِسِ فَرَبَطْتُهُ بِالْحَلْقَةِ الَّتِي تَرْبُطُ بِهَا الْأَنْبِيَاءُ» . قَالَ: ثُمَّ دَخَلْتُ الْمَسْجِدَ فَصَلَّيْتُ فِيهِ رَكْعَتَيْنِ ثمَّ خرجتُ فَجَاءَنِي جِبْرِيلُ بِإِنَاءٍ مِنْ خَمْرٍ وَإِنَاءٍ مِنْ لبن فاختَرتُ اللَّبن فَقَالَ جِبْرِيل: اخْتَرْتَ الْفِطْرَةَ ثُمَّ عَرَجَ بِنَا إِلَى السَّمَاءِ . وَسَاقَ مِثْلَ مَعْنَاهُ قَالَ: «فَإِذَا أَنَا بِآدَمَ فرحَّبَ بِي وَدَعَا لِي بِخَيْرٍ» . وَقَالَ فِي السَّمَاءِ الثَّالِثَةِ: «فَإِذا أَنا بِيُوسُف إِذا أُعْطِيَ شَطْرَ الْحُسْنِ فَرَحَّبَ بِي وَدَعَا لِي بِخَيْرٍ» . وَلَمْ يَذْكُرْ بُكَاءَ مُوسَى وَقَالَ فِي السَّمَاءِ السَّابِعَةِ: فَإِذَا أَنَا بِإِبْرَاهِيمَ مُسْنِدًا ظَهْرَهُ إِلَى الْبَيْتِ الْمَعْمُورِ وَإِذَا هُوَ يَدْخُلُهُ كُلَّ يَوْمٍ سَبْعُونَ أَلْفَ مَلَكٍ لَا يَعُودُونَ إِلَيْهِ ثمَّ ذهب بِي إِلَى سِدْرَة الْمُنْتَهى فَإِذا وَرقهَا كآذان الفيلة وَإِذا ثمارها كَالْقِلَالِ فَلَمَّا غَشِيَهَا مِنْ أَمْرِ اللَّهِ مَا غَشَّى تَغَيَّرَتْ فَمَا أَحَدٌ مِنْ خَلْقِ اللَّهِ يَسْتَطِيعُ أَنْ يَنْعَتَهَا مِنْ حُسْنِهَا وَأَوْحَى إِلَيَّ مَا أوحى فَفرض عَليّ خمسين صَلَاة كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ فَنَزَلْتُ إِلَى مُوسَى فَقَالَ: مَا فَرَضَ رَبُّكَ عَلَى أُمَّتِكَ؟ قُلْتُ: خَمْسِينَ صَلَاة كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ. قَالَ: ارْجِعْ إِلَى رَبِّكَ فَسَلْهُ التَّخْفِيفَ فَإِنَّ أُمَّتَكَ لَا تُطِيقُ ذَلِكَ فَإِنِّي بَلَوْتُ بَنِي إِسْرَائِيلَ وَخَبَرْتُهُمْ. قَالَ: فَرَجَعْتُ إِلَى رَبِّي فَقُلْتُ: يَا رَبِّ خَفِّفْ عَلَى أُمَّتِي فَحَطَّ عَنِّي خَمْسًا فَرَجَعْتُ إِلَى مُوسَى فَقُلْتُ: حَطَّ عَنِّي خَمْسًا. قَالَ: إِنَّ أُمَّتَكَ لَا تُطِيقُ ذَلِكَ فَارْجِعْ إِلَى رَبِّكَ فَسَلْهُ التَّخْفِيفَ . قَالَ: فَلَمْ أَزَلْ أَرْجِعُ بَيْنَ رَبِّي وَبَيْنَ مُوسَى حَتَّى قَالَ: يَا مُحَمَّدُ إِنَّهُنَّ خَمْسُ صَلَوَاتٍ كُلَّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ لِكُلِّ صَلَاةٍ عَشْرٌ فَذَلِكَ خَمْسُونَ صَلَاةً مَنْ هَمَّ بِحَسَنَةٍ فَلَمْ يَعْمَلْهَا كُتِبَتْ لَهُ حَسَنَةً فَإِنْ عَمِلَهَا كُتِبَتْ لَهُ عَشْرًا وَمَنْ هَمَّ بِسَيِّئَةٍ فَلَمْ يَعْمَلْهَا لَمْ تُكْتَبْ لَهُ شَيْئًا فَإِنَّ عَمِلَهَا كُتِبَتْ لَهُ سَيِّئَةً وَاحِدَةً . قَالَ: فَنَزَلْتُ حَتَّى انتهيتُ إِلى مُوسَى فَأَخْبَرته فَقَالَ: ارجعْ إِلى رَبِّكَ فَسَلْهُ التَّخْفِيفَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: فَقُلْتُ: قَدْ رَجَعْتُ إِلَى رَبِّي حَتَّى استحييت مِنْهُ . رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (259 / 162)، (411) ۔
(صَحِيح)

وعن ثابت البناني عن انس ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «اتيت بالبراق وهو دابة ابيض طويل فوق الحمار ودون البغل يقع حافره عند منتهى طرفه فركبته حتى اتيت بيت المقدس فربطته بالحلقة التي تربط بها الانبياء» . قال: ثم دخلت المسجد فصليت فيه ركعتين ثم خرجت فجاءني جبريل باناء من خمر واناء من لبن فاخترت اللبن فقال جبريل: اخترت الفطرة ثم عرج بنا الى السماء . وساق مثل معناه قال: «فاذا انا بادم فرحب بي ودعا لي بخير» . وقال في السماء الثالثة: «فاذا انا بيوسف اذا اعطي شطر الحسن فرحب بي ودعا لي بخير» . ولم يذكر بكاء موسى وقال في السماء السابعة: فاذا انا بابراهيم مسندا ظهره الى البيت المعمور واذا هو يدخله كل يوم سبعون الف ملك لا يعودون اليه ثم ذهب بي الى سدرة المنتهى فاذا ورقها كاذان الفيلة واذا ثمارها كالقلال فلما غشيها من امر الله ما غشى تغيرت فما احد من خلق الله يستطيع ان ينعتها من حسنها واوحى الي ما اوحى ففرض علي خمسين صلاة كل يوم وليلة فنزلت الى موسى فقال: ما فرض ربك على امتك؟ قلت: خمسين صلاة كل يوم وليلة. قال: ارجع الى ربك فسله التخفيف فان امتك لا تطيق ذلك فاني بلوت بني اسراىيل وخبرتهم. قال: فرجعت الى ربي فقلت: يا رب خفف على امتي فحط عني خمسا فرجعت الى موسى فقلت: حط عني خمسا. قال: ان امتك لا تطيق ذلك فارجع الى ربك فسله التخفيف . قال: فلم ازل ارجع بين ربي وبين موسى حتى قال: يا محمد انهن خمس صلوات كل يوم وليلة لكل صلاة عشر فذلك خمسون صلاة من هم بحسنة فلم يعملها كتبت له حسنة فان عملها كتبت له عشرا ومن هم بسيىة فلم يعملها لم تكتب له شيىا فان عملها كتبت له سيىة واحدة . قال: فنزلت حتى انتهيت الى موسى فاخبرته فقال: ارجع الى ربك فسله التخفيف فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: فقلت: قد رجعت الى ربي حتى استحييت منه . رواه مسلم رواہ مسلم (259 / 162)، (411) ۔ (صحيح)

ব্যাখ্যা: কাযী ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আল্লাহর রাসূল (সা.) -এর ইসরা ও মি'রাজ সম্পর্কে লোকেরা মতভেদ করেছে। কেউ বলেন, তার ইসরা ও মি'রাজ হয়েছিল স্বপ্নযোগে। আবার কেউ বলেন, তা হয়েছিল স্বশরীরে জাগ্রত অবস্থায়। এক্ষেত্রে সঠিক কথা হলো রাসূল (সা.) -এর মি'রাজ স্বশরীরে জাগ্রত অবস্থায় হয়েছে। আর এটিকেই গ্রহণ করেছেন অধিকাংশ লোক, বেশিরভাগ সালাফগণ এবং পরবর্তী অনেক ফাক্বীহ ও মুহাদ্দিসগণ। তাছাড়াও বিভিন্ন চিহ্ন ও নিদর্শনও প্রমাণ করে যে, তার মি'রাজ স্বশরীরে জাগ্রত অবস্থায় হয়েছে। অতএব কোন দলীল ছাড়া এই বিষয়টি থেকে ফিরে অন্যদিকে যাওয়া যাবে না। যদিও শারীক-এর একটি বর্ণনায় এ ব্যপারে ভিন্ন মত এসেছে। কিন্তু সেটি খুবই দুর্বল। 'আলিমগণ তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। আর ইমাম মুসলিম (রহিমাহুল্লাহ) এ বিষয়ে সতর্ক করে বলেন, শারীক বর্ণনা করার ক্ষেত্রে আগে পরে করা সহ অনেক কম-বেশিও করেছেন। অতএব, তার বর্ণনাটি গ্রহণযোগ্য নয়।
(فَرَبَطْتُهُ بِالْحَلْقَةِ الَّتِي تَرْبُطُ بِهَا الْأَنْبِيَاءُ) অর্থাৎ তারপর আমি সেই গোল বৃত্তের সাথে বাহনটি বেঁধে রাখলাম, যার সাথে নবীগণ বেঁধে রাখতেন। এ বিষয়ে শারহুন নাবাবী গ্রন্থকার বলেন, হাদীসের এই অংশ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সতর্কতামূলক কোন উপকরণ গ্রহণ করা আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুলের পরিপন্থী নয়। যদি আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ আস্থা থাকে।
(اخْتَرْتَ الْفِطْرَةَ) অর্থাৎ আপনি প্রকৃত ফিত্বরাত গ্রহণ করেছেন। এখানে ফিত্বরাত দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ইসালাম ও অবিচলতা।
(فَقِيلَ لَهُ مَنْ أَنْتَ قَالَ جِبْرِيلُ قِيلَ وَمَنْ مَعَكَ قَالَ مُحَمَّدٌ) অর্থাৎ তারপর বলা হলো, কে তুমি? উত্তরে তিনি বললেন, জিবরীল। আবার জিজ্ঞেস করা হলো, কে তোমার সাথে? তিনি উত্তরে বললেন, মুহাম্মাদ। হাদীসের এ অংশে মানবকুলকে আদব শিক্ষা দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে যে, কেউ যদি দরজা ধাক্কা দিয়ে অনুমতি চায় আর তাকে জিজ্ঞেস করা হয় ‘কে’? তাহলে অবশ্যই যেন সে তার নাম বলে। শুধু যেন ‘আমি’ না বলে। কেননা এতে তেমন কোন পরিচয় জানা যায় না। তাছাড়া হাদীসেও শুধু ‘আমি’ বলতে নিষেধ করা হয়েছে। (শারহুন্ নাবাবী হা, ২/১৬২)।
(إِذا أُعْطِيَ شَطْرَ الْحُسْنِ) অর্থাৎ তাকে অর্ধেক সৌন্দর্য দেয়া হয়েছে। মুযহির (রহিমাহুল্লাহ) এর ব্যাখ্যায় বলেন, ইউসুফ আলায়হিস সালাম-কে অর্ধেক সৌন্দর্য দেয়া হয়েছে। এ কথার তিনটি ব্যাখ্যা হতে পারে।
১) তাঁকে সর্বপ্রকার সৌন্দর্যের অর্ধেক দেয়া হয়েছিল। ২) তাঁকে তাঁর যুগের সকল লোকেদের অর্ধেক সৌন্দর্য দেয়া হয়েছিল। ৩) তাঁকে কিছু সৌন্দর্য দেয়া হয়েছিল। তখন (شَطْرَ) শব্দটি (بعض) (কিছু) অর্থে ব্যবহৃত হবে।
গ্রহণযোগ্য অনেক ‘আলিমগণ বলেন, আমাদের রাসূল (সা.) মুহাম্মাদ (সা.) ইউসুফ আলায়হিস সালাম-এর থেকে বেশি সুন্দর ছিলেন।
এ ব্যাপারে অনেক মুহাক্কিক ‘আলিম বলেন, আমাদের রাসূল (সা.) -এর বাহ্যিক অনেক সৌন্দর্যকে সাহাবীদের থেকে গোপন রাখা হয়েছে। কিন্তু ইউসুফ আলায়হিস সালাম-এর বাহ্যিক কোন সৌন্দর্য গোপন রাখা হয়নি।
(مَا أَحَدٌ مِنْ خَلْقِ اللَّهِ يَسْتَطِيعُ أَنْ يَنْعَتَهَا مِنْ حُسْنِهَا) অর্থাৎ সৃষ্টিকুলের এমন কেউ নেই যে, তার সৌন্দর্য বর্ণনা করতে পারে। কারণ তার মহত্ব ও সৌন্দর্যের পরিপূর্ণতা এতই যে, সৃষ্টিকুলের কেউ তা বলে বুঝাতে পারবে না। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)