পরিচ্ছেদঃ ২৩/৬৫. জানাযার সালাতে সূরা ফাতিহা পাঠ করা।
وَقَالَ الْحَسَنُ يَقْرَأُ عَلَى الطِّفْلِ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ وَيَقُولُ اللَّهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا فَرَطًا وَسَلَفًا وَأَجْرًا
হাসান (রহ.) বলেছেন, শিশুর জানাযার সালাতে সূরা ফাতিহা তিলাওয়াত করবে এবং দু‘আ পড়বে। হে আল্লাহ্! তাকে আমাদের জন্য অগ্রে প্রেরিত, অগ্রগামী এবং আমাদের পুরস্কার স্বরূপ গ্রহণ কর।
১৩৩৫. ত্বলহাহ্ ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘আওফ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর পিছনে জানাযার সালাত আদায় করলাম। তাতে তিনি সূরা ফাতিহা পাঠ করলেন [1] এবং (সালাত শেষে) বললেন, (আমি সূরা ফাতিহা পাঠ করলাম) যাতে লোকেরা জানতে পারে যে, এটা সুন্নাত। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১২৪৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১২৫৪)
بَاب قِرَاءَةِ فَاتِحَةِ الْكِتَابِ عَلَى الْجَنَازَةِ
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ حَدَّثَنَا غُنْدَرٌ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ سَعْدٍ عَنْ طَلْحَةَ قَالَ صَلَّيْتُ خَلْفَ ابْنِ عَبَّاسٍ ح حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ كَثِيرٍ أَخْبَرَنَا سُفْيَانُ عَنْ سَعْدِ بْنِ إِبْرَاهِيمَ عَنْ طَلْحَةَ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَوْفٍ قَالَ صَلَّيْتُ خَلْفَ ابْنِ عَبَّاسٍ عَلَى جَنَازَةٍ فَقَرَأَ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ قَالَ لِيَعْلَمُوا أَنَّهَا سُنَّةٌ
حدثنا محمد بن بشار حدثنا غندر حدثنا شعبة عن سعد عن طلحة قال صليت خلف ابن عباس ح حدثنا محمد بن كثير اخبرنا سفيان عن سعد بن ابراهيم عن طلحة بن عبد الله بن عوف قال صليت خلف ابن عباس على جنازة فقرا بفاتحة الكتاب قال ليعلموا انها سنة
[1] একদল লোক বলেন, সালাতে জানাযায় রুকুও নেই, সিজদাও নেই, ফলে তা তাওয়াফের অনুরূপ। তাওয়াফ বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য সূরা আল-ফাতিহা পাঠের প্রয়োজন হয় না, ঠিক তেমনি সালাতে জানাযাও বিশুদ্ধ হবার জন্য সূরা ফাতিহা পাঠের কোন দরকার হয় না। এটা সুস্পষ্ট সহীহ হাদীসের মোকাবিলায় নিছক মনগড়া কিয়াস-যা সম্পূর্ণ নাজায়িয। তালহা বিল আবদুল্লাহ বিন আউফ (রাঃ) বর্ণিত বুখারীর উল্লিখিত হাদীস ছাড়াও সুনানে নাসায়ী ইত্যাদি গ্রন্থে সালাতে জানাযায় সূরা ফাতিহা পাঠের স্বপক্ষে আরও হাদীস রয়েছে। সুনানে নাসায়ীর হাদীসটি ‘উসমান (রাঃ) হতে বর্ণিত। এ হাদীস সম্পর্কে আল্লামাহ শাইখ উবাইদুল্লাহ রাহমানী তাঁর মিশকাতের বিখ্যাত ভাষ্যগ্রন্থ ‘মিরআতুল মাফাতীহ’-তে মন্তব্য করেছেন- নাসায়ীতে বর্ণিত আবূ উমামাহর হাদীসটির সূত্র বুখারী ও সহীহ মুসলিমের হাদীসের শর্ত ভিত্তিক। হাদীস শাস্ত্রের মহাপন্ডিত হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী এ হাদীস সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন- হাদীসটির বর্ণনা সূত্র বিশুদ্ধ। আল্লামাহ রাহমানী বলেছেন- বাস্তব ও যথার্থ কথা এই যে, সালাতে জানাযায় সূরা ফাতিহা পাঠ ওয়াজিব। ইমাম শাফিয়ী, ইমাম আহমাদ, ইমাম ইসহাক (রহঃ) প্রমুখ আয়িম্মায়ে দ্বীন এ বিষয়ে একমত যে, জানাযা অনুষ্ঠানটি সালাতের অন্তর্ভুক্ত আর এটা সুপ্রমাণিত যে, সূরা ফাতিহা ব্যতীত কোন সালাতই সহীহ হয় না। হাদীসের এই ব্যাপকতা সাধারণভাবে সকল সালাতের উপর প্রযোজ্য হবে। সালাতে জানাযায় সূরা ফাতিহা পাঠ না করার স্বপক্ষে মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত রিওয়ায়াতটি পেশ করা হয়, যার অর্থ হলঃ ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেছেন, আমাদের পক্ষে মাইয়্যিতের জানাযায় কোন কিরা‘আত ও কাওল নির্ধারণ করা হয়নি। অর্থাৎ সালাতে জানাযায় কিরা‘আতের স্থান বা সময়সূচী নির্ধারণ করে দেয়া হয়নি। এ সম্পর্কে আল্লামাহ রাহমানী বলেন, এ রিওয়ায়াতটি কিরা‘আত পাঠ না করা প্রমাণ করে না। তাছাড়া ইবনু মাসউদ থেকেই পরিষ্কার রিওয়ায়াত আছে, তিনি সালাতে জানাযায় সূরা ফাতিহা পাঠ করেছেন। হানাফী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ হাসানসার নাবলালী তাঁর রচিত ‘‘আল নাজমুল মুস্তাতাব লি হুকমিল রিফাতে ফি সালাতিল জানাযাতে বে উম্মিল কিতাব’’ নামক গ্রন্থে প্রমাণ করে দেখিয়েছেন যে, সালাতে সূরা ফাতিহা পাঠ না করার চেয়ে ফাতিহা পাঠ করা বহুগুণে উত্তম। আল্লামাহ আবদুল হাই লাক্ষ্ণৌবী হানাফী তাঁর শরহে বিকায়ার ভাষ্য উমদাতুর রিয়ায়া গ্রন্থে লিখেছেন, সালাতে জানাযায় সূরা ফাতিহা পাঠ বিষয়ে ইমাম আবূ হানীফার সিদ্ধান্তের চেয়ে ইমাম শাফিয়ীর সিদ্ধান্তই দলীল হিসেবে অনেক মজবুত। আমাদের হানাফী ফকীহমন্ডলীর আল্লামাহ সার নাবলালী ইমাম শাফিয়ীর ফতওয়া পছন্দ করেছেন। কেননা আবূ উমামাহ বলেছেন, জানাযার সালাতে সূরা ফাতিহা পাঠ নাবী -এর নির্ধারিত বিধান- (উমদাতুর রিয়ায়া ১ম খন্ড ১৮৯ পৃষ্ঠা)। কাযী সানাউল্লাহ পানিপথী জীবনের অন্তিমকালে বহু বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন ও পুত্র পরিজনের সামনে শক্তভাবে অসিয়ত রাখেন যে, আমার সালাতে জানাযায় যেন বিপুল মুসল্লীবৃন্দের সমাবেশ ঘটে, আর মুহাম্মাদ আলী অথবা হাকীম সুখয়া অথবা পীর মুহাম্মাদ আমার জানাযায় পেশ ইমাম হন। বায়াদা তাকবীরে উলা সূরা ফাতিহা হাম খোয়াননদ। (অর্থাৎ তারা যেন প্রথম তাকবীরের পর সূরা আল-ফাতিহাও পাঠ করেন- (মালাবুদ্দা মিনহু)। মাওলানা আশরাফ আলী থানবীর মহাগুরু মাওলানা রশীদ আহমাদ গাঙ্গুহী এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন- ইমাম সাহেব (রহঃ) জানাযার সালাতে কিরা‘আতের নিয়তে কুরআন পাঠ নিষেধ করেছেন, তা দু‘আর নিয়তে পাঠ করলে দোষ নেই। অতঃপর তিনি বলেন, যদি কিরা‘আতের নিয়তেও পাঠ করা হয় তাহলেও গুনাহগার হবে না। কেননা হাদীস বিশারদ মুহাদ্দিসমন্ডলীর ও ইমাম শাফিয়ীর গবেষণা মতে সালাতে জানাযায় সূরা ফাতিহা পাঠ রসূলুল্লাহ -এর বিধান। কাজেই গুনাহগারও হবে না- (ফাতওয়া রাশিদীয়া কামিল ২৫৮ পৃষ্ঠা)।
হানাফী ইমাম মুল্লা আলী ক্বারী বলেন, সালাতে জানাযায় দু‘আর নিয়তে সূরা ফাতিহা পাঠ মুস্তাহাব। এতে ইমাম শাফিয়ীর শক্ত দলিল ভিত্তিক অভিমতের বিরোধিতা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে- (রাদ্দুল মুহতার)।
বড় পীর সাহেব তাঁর বিশ্ব বিশ্রুত গুনিয়াতুত তালেবীনে লিখেছেন- সালাতে জানাযায় তাকবীর বলবে প্রথম তাকবীরের পর সূরা ফাতিহা পাঠ করবে। কেননা ‘আবদুল্লাহ বিন ‘আববাস (রাঃ) বলেছেন- আল্লাহর রসূল আমাদের নির্দেশ দান করেছেন, সালাতে জানাযায় যেন সূরা ফাতিহা পাঠ করা হয়। অতঃপর দ্বিতীয় তাকবীরের পর সালাতের তাশাহ্হুদের মত যেন নাবীর প্রতি দরূদ পাঠ করা হয়, কেননা তাবিয়ী ইমাম মুজাহিদ বলেছেন, আমি আল্লাহর রসূল -এর অষ্টাদশ সহচরকে সালাতে জানাযা বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছি, তাঁরা সকলেই বলেছেন, তুমি তাকবীর উচ্চারণ করবে, তারপর সূরা আল-ফাতিহা পাঠ করবে। আবার তুমি তাকবীর ধ্বনি উচ্চারণ করে নাবী -এর প্রতি দরূদ পড়বে। অতঃপর আল্লাহু আকবার বলে তোমার পছন্দমত মাইয়্যিত ব্যক্তির উদ্দেশে দু‘আ আবৃত্তি করবে- (গুনিয়াতুত তালেবীন- উর্দু অনুবাদ সহ ১০৫ পৃষ্ঠা)। ইমাম ও মুজতাহিদমন্ডলীর শিরোমণি শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী লিখেছেন- সালাতে জানাযার বিধানসমূহের মধ্যে সূরা ফাতিহা পাঠও একটি বিধান। যেহেতু সূরা ফাতিহা সর্বাপেক্ষা উত্তম ও সবচাইতে পূর্ণাঙ্গ দু‘আ যা খোদ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাগণকে স্বীয় পবিত্র কিতাবে শিক্ষাদান করেছেন- (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা- উর্দু অনুবাদ সহ ১২৩ পৃষ্ঠা)।
জানাযার সালাতে সানা পাঠ করার প্রমাণ পাওয়া যায় না এবং আলবানী এটি বিদ‘আত হিসেবে চিমিত করেছেন। (আহকামুল জানায়িয- বিদ‘আত নং- ৭৬, পৃষ্ঠা ৩১৬)
Narrated Talha bin `Abdullah bin `Auf:
I offered the funeral prayer behind Ibn `Abbas and he recited Al-Fatiha and said, "You should know that it (i.e. recitation of Al-Fatiha) is the tradition of the Prophet (ﷺ) Muhammad.