মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) পর্ব-৯: দু‘আ (كتاب الدعوات)
২২২৩

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

’আল্লামা মুল্লা ’আলী কারী হানাফী (রহঃ) বলেন, দু’আ হলো নীচু পর্যায়ের কোন ব্যক্তির উঁচু পর্যায়ের ব্যক্তির নিকট বিনয়ের সাথে কোন কিছু চাওয়া শায়খ আবূল কাসিম কুশায়রী বলেন, পবিত্র কুরআনে দু’আ শব্দটি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।

১. ’ইবাদাত অর্থে, মহান আল্লাহর বাণীঃ وَلَا تَدْعُ مِنْ دُونِ اللّٰهِ مَا لَا يَنْفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَ

’’আর আল্লাহকে বাদ দিয়ে আহবান করো না এমন কিছুকে যা না পারে তোমার কোন উপকার করতে, আর না পারে কোন ক্ষতি করতে।’’ (সূরা ইউনুস ১০ : ১০৬)

২. সাহায্য অর্থে, মহান আল্লাহর বাণীঃ وَادْعُوا شُهَدَآءَكُمْ

’’আর তোমরা যদি সত্যবাদী হও, তাহলে তোমাদের সহযোগীদের ডাক।’’ (সূরা আল বাকারাহ্ ২ : ২৩)

৩. চাওয়া অর্থে, মহান আল্লাহর বাণীঃ ادْعُونِىْ أَسْتَجِبْ لَكُمْ

’’তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।’’ (সূরা আল মু’মিন/গাফির ৪০ : ৬০)

৪. কথা অর্থে, মহান আল্লাহর বাণীঃ دَعْوَاهُمْ فِيْهَا سُبْحٰنَكَ اللّٰهُمَّ

’’তার ভিতরে তাদের ধ্বনি হবে, ’পবিত্র তুমি হে আল্লাহ’।’’ (সূরা ইউনুস ১০ : ১০)

৫. আহবান অর্থে, মহান আল্লাহর বাণীঃ يَوْمَ يَدْعُوكُمْ

’’যে দিন তিনি তোমাদেরকে ডাকবেন।’’ (সূরা ইসরা/বনী ইসরাঈল ১৭ : ৫২)

৬. প্রশংসা অর্থে, মহান আল্লাহর বাণীঃ قُلِ ادْعُوا اللّٰهَ أَوِ ادْعُوا الرَّحْمٰنَ

’’বল, ’তোমরা আল্লাহ নামে ডাকো বা রহমান নামে ডাকো।’’ (সূরা ইসরা/বনী ইসরাঈল ১৭ : ১১০)

মুসলিম হিসেবে সকলের জেনে রাখা উচিত দু’আ একটি ’ইবাদাত এবং তা মহান আল্লাহর হক এবং তা কবূল করার ওয়া’দাও আল্লাহ তা’আলা করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, (الدعاء مخ العبادة) অর্থাৎ- দু’আই হলো ’ইবাদাত।

একটি প্রশ্ন ও তার উত্তরঃ

প্রশ্নঃ তাকদীরের ভাল-মন্দের উপর বিশ্বাস করে দু’আ করা উত্তম নাকি দু’আ না করা উত্তম?

উত্তরঃ দু’আ করা উত্তম, এর অনেকগুলো কারণ রয়েছে।

ক) আল্লাহ দু’আ করতে বলেছেন, ’’তোমরা আমাকে ডাকো, আমি (তোমাদের ডাকে) সাড়া দেব।’’ (সূরা আল মু’মিন/গাফির ৪০ : ৬০)। সুতরাং দু’আ করলে আল্লাহর আদেশ পালন হয়।

খ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকদীরের মন্দ (বিষয়) থেকে আশ্রয় চেয়েছেন। যেমনঃ দু’আ কুনূতে আমরা পড়ে থাকি।

(وَقِنِىْ شَرَّ مَا قَضَيْت) অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমার তাকদীরের মন্দ বিষয় থেকে আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাই।

[দু’আ না করার ব্যাপারে একটি হাদীস রয়েছে, হাদীসটি হলঃ ’’আল্লাহ তা’আলা আমার অবস্থা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত। সুতরাং আমি যদি মন্দ অবস্থায় থাকি তাহলে তিনি তো দু’আ ছাড়াই আমার ভাল দিকটা আমার জন্য নিয়ে আসতে সক্ষম। সুতরাং আমার দু’আ করার কোন প্রয়োজন নেই।’’]

এ হাদীসটি সম্পর্কে ’আল্লামা আলবানী (রহঃ) বলেছেন, এর কোন ভিত্তি নেই। এটি একটি বানোয়াট হাদীস। সিলসিলাতুল আহাদীস আয্ য’ঈফাহ্ ১/২৯। ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ্ও একই কথা বলেছেন, মাজমা’উল ফাতাওয়া ৮/৫৩৯। ] (সম্পাদকীয়)

সুতরাং উপরোক্ত কথাগুলোর আলোকে আমরা বলবো, আমাদের সুখে-দুঃখে, অভাব-অনটনে সর্বদাই আল্লাহকে ডাকা উচিত।


২২২৩-[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক নবীকেই একটি (বিশেষ) কবূলযোগ্য দু’আ করার অধিকার দেয়া রয়েছে। প্রত্যেক নবীই সেই দু’আর ব্যাপারে (দুনিয়াতেই) তাড়াহুড়া করেছেন। কিন্তু আমি আমার উম্মাতের শাফা’আত হিসেবে আমার দু’আ কিয়ামত পর্যন্ত স্থগিত করে রেখেছি। ইনশা-আল্ল-হ! আমার উম্মাতের প্রত্যেক ব্যক্তির কাছে আমার এ দু’আ এমন উপকৃত হবে, যে আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শারীক না করে মৃত্যুবরণ করেছে। (মুসলিম; তবে বুখারীতে এর চেয়ে কিছু কম বর্ণনা করা হয়েছে)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لِكُلِّ نَبِيٍّ دَعْوَةٌ مُسْتَجَابَةٌ فَتَعَجَّلَ كُلُّ نَبِيٍّ دَعْوَتَهُ وَإِنِّي اخْتَبَأْتُ دَعْوَتِي شَفَاعَةً لِأُمَّتِي إِلَى يومِ القِيامةِ فَهِيَ نَائِلَةٌ إِنْ شَاءَ اللَّهُ مَنْ مَاتَ مِنْ أُمَّتِي لَا يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا» . رَوَاهُ مُسلم وللبخاري أقصر مِنْهُ

عن ابي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «لكل نبي دعوة مستجابة فتعجل كل نبي دعوته واني اختبات دعوتي شفاعة لامتي الى يوم القيامة فهي ناىلة ان شاء الله من مات من امتي لا يشرك بالله شيىا» . رواه مسلم وللبخاري اقصر منه

ব্যাখ্যা: ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেছেনঃ প্রত্যেক নাবীর জন্য একটি দু‘আ রয়েছে যা নিশ্চিত কবূল হয়। আর বাকী যে দু‘আগুলো তা কবূলের আশা করা যায় কিছু কবূল হয় আর কিছু কবূল হয় না। কাযী ‘ইয়ায (রহঃ) বিষয়টি একটু সুনির্দিষ্ট করে বলেছেন যে, প্রত্যেক নাবীর জন্য তার উম্মাতকে কেন্দ্র করে করা এমন একটি দু‘আ রয়েছে যা নিশ্চিত কবূল হওয়ার কথা বলা হয়েছে।

আবার কেউ বলেছেন, এটা ব্যাপক অর্থে নিতে হবে আর অন্য একদল বলেছেন, এটা প্রত্যেক নাবীর ব্যক্তিগত দু‘আ। যেমন: নূহ (আঃ) দু‘আ করলেন, رَبِّ لَا تَذَرْ عَلَى الْأَرْضِ مِنَ الْكَافِرِينَ دَيَّارًا

অর্থাৎ- ‘‘আল্লাহ এ দুনিয়ার সমস্ত কাফিরকে আপনি ধ্বংস করে দিন।’’ (সূরা নূহ ৭১ : ২৬)

যাকারিয়্যা (আঃ) দু‘আ করলেন, فَهَبْ لِي مِنْ لَدُنْكَ وَلِيًّا

অর্থাৎ- ‘‘আমাকে আপনার পক্ষ থেকে একজন উত্তরাধিকারী (ছেলে) দান করুন যে আমার উত্তরাধিকারী হবে।’’ (সূরা মারইয়াম ১৯ : ৫)

অনুরূপ সুলায়মান (আঃ) দু‘আ করলেন, رَبِّ اغْفِرْ لِي وَهَبْ لِي مُلْكًا لَا يَنْبَغِي لِأَحَدٍ مِنْ بَعْدِي

অর্থাৎ- ‘‘হে আমার রব! আমাকে আপনি এমন এক রাজত্ব দান করুন যা আমার পরে এ পৃথিবীতে আর কাউকে দিবেন না।’’ (সূরা সাদ/সোয়াদ ৩৮ : ৩৫)

(شَفَاعَةً لِأُمَّتِىْ) এখানে উম্মাত দ্বারা উদ্দেশ্য উম্মাতুল ইজাবাহ্ তথা উম্মাতের যেসব লোক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দা‘ওয়াত কবূল করেছেন। ইবনু বাত্ত্বাল (রহঃ) বলেন, অত্র হাদীস দ্বারা অন্যান্য নাবীগণের (আঃ)-এর ওপর আমাদের নাবীর মর্যাদা প্রতীয়মান হয়। যেহেতু আমাদের নাবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এটা দেয়া হয়েছে আর অন্যান্য নাবীকে তা দেয়া হয়নি।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৯: দু‘আ (كتاب الدعوات) 9. Supplications
২২২৪

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

২২২৪-[২] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে একটি ওয়া’দা কামনা করছি, (আমার বিশ্বাস) সে ওয়া’দাপানে কক্ষনো তুমি আমাকে বিমুখ করবে না। আমি তো মানুষ মাত্র। তাই আমি কোন মু’মিনকে কষ্ট দিয়েছি, গালি দিয়েছি, অভিশাপ দিয়েছি বা মেরেছি- আমার এ কাজকে তুমি তার জন্য কিয়ামতের দিন রহমত, পবিত্রতা ও তোমার নৈকট্য লাভের উপায় বানিয়ে দাও। (বুখারী, মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اللَّهُمَّ إِنِّي اتَّخَذْتُ عِنْدَكَ عَهْدًا لَنْ تُخْلِفَنِيهِ فَإِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ فَأَيُّ الْمُؤْمِنِينَ آذَيْتُهُ شَتَمْتُهُ لَعَنْتُهُ جَلَدْتُهُ فَاجْعَلْهَا لَهُ صَلَاةً وَزَكَاةً وَقُرْبَةً تُقَرِّبُهُ بِهَا إِلَيْكَ يَوْم الْقِيَامَة»

وعنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «اللهم اني اتخذت عندك عهدا لن تخلفنيه فانما انا بشر فاي المومنين اذيته شتمته لعنته جلدته فاجعلها له صلاة وزكاة وقربة تقربه بها اليك يوم القيامة»

ব্যাখ্যা: ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, বিশ্বনাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে তার উম্মাতের কল্যাণ, সমৃদ্ধি কামনা এবং তাদের প্রতি যে, তার চরম ও পরম দয়া ভালবাসা ছিল হাদীসটি তার জ্বলন্ত প্রমাণ।

গুটি কয়েক প্রশ্ন ও তার উত্তর:

প্রথম প্রশ্নঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন মুসলিমকে অভিশাপ দিয়ে থাকলেই যদি সেটা ঐ মুসলিমের জন্য রহমাত ও বারাকাতের কারণ হয় তাহলে তিনি তো একাধারে ছবি অঙ্কনকারী, যারা নিজ পিতা ব্যতীত অন্য কোন লোককে পিতা দাবী করে, চোর, মদপানকারী, সুদখোর ইত্যাদি ব্যক্তিদেরও অভিশাপ দিয়েছেন। সুতরাং এদের ক্ষেত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অভিশাপ অভিশাপ না হয়ে রহমাত স্বরূপ হবে কি?

উত্তরঃ অত্র হাদীসের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে যারা আসলে অভিশাপের উপযুক্ত নয়, বাহ্যিকদৃষ্টে তাদেরকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিশাপ দিয়েছেন তারাই উক্ত হাদীসের উদ্দেশ্য। অপরদিকে কাফির, মুশরিক, কবরপূজারী, চোর, সুদখোর ও ছবি অঙ্কনকারী এরা তো অভিশাপের উপযুক্ত, তাই তাদের জন্য অভিশাপটি রহমাত স্বরূপ হবে না যেমনটি হয়েছিল অভিশাপের অনুপযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য।

দ্বিতীয় প্রশ্নঃ তাহলে যারা অভিশাপের উপযুক্ত নয় তাদেরকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিভাবে অভিশাপ করতে পারেন?

উত্তরঃ আভ্যন্তরীণ ও বস্ত্তত সে অভিশাপের উপযুক্ত নয় তবে বাহ্যিক দিক থেকে মনে হওয়ার কারণে হয়তো এমনটা ঘটে যেতে পারে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৯: দু‘আ (كتاب الدعوات) 9. Supplications
২২২৫

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

২২২৫-[৩] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন আল্লাহর কাছে দু’আ করার সময় এ কথা না বলে যে, হে আল্লাহ! তোমার ইচ্ছা হলে আমাকে ক্ষমা করে দাও। তুমি যদি ইচ্ছা কর আমার প্রতি দয়া করো। তুমি যদি ইচ্ছা কর আমাকে রিযক দান করো। বরং সে দৃঢ়তার সাথে দু’আ করবে (চাইবে)। তিনি যা ইচ্ছা তা-ই প্রদান করেন। তাঁকে দিয়ে জোরপূর্বক কোন কিছু করাতে সক্ষম নয় বা তাকে বাধা দেয়ার কেউ নেই। (বুখারী)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا دَعَا أَحَدُكُمْ فَلَا يقُلْ: اللهُمَّ اغفِرْ لي إِنْ شِئتَ ارْحمْني إِنْ شِئْتَ ارْزُقْنِي إِنْ شِئْتَ وَلِيَعْزِمْ مَسْأَلَتَهُ إِنَّه يفعلُ مَا يَشَاء وَلَا مكره لَهُ . رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: اذا دعا احدكم فلا يقل: اللهم اغفر لي ان شىت ارحمني ان شىت ارزقني ان شىت وليعزم مسالته انه يفعل ما يشاء ولا مكره له . رواه البخاري

ব্যাখ্যা: মাফাতীহ কিতাবের সম্মানিত লেখক বলেন, দু‘আ করে আবার সে দু‘আকে কবূল করার বিষয়টি আল্লাহর ইচ্ছাধীন করে রাখতে নিষেধ করার কারণ হলো এতে করে দু‘আ কবূলের ক্ষেত্রে বান্দার মনে সংশয় সৃষ্টি হয়। কেননা (إِنْ شِئتَ) ‘‘যদি তোমার ইচ্ছা থাকে’’ এরূপ কথা এমন ব্যক্তিকে বলা হয় যে ব্যক্তির সে কথা বলার পূর্বে কোন ইখতিয়ার ছিল না। এখন এরূপ কথা বলাতে তার ওপর কাজটি অপরিহার্য হয়ে গেল। এতে তার ইচ্ছা থাকুক আর না থাকুক তাকে কাজটি করাই লাগবে। সুতরাং দু‘আকারীর এরূপ কথা বলাতে দু‘আ কবূল করতে আল্লাহকে বাধ্য করা হয়। আর এরূপ করা আল্লাহর শানে সম্পূর্ণ বেমানান। কারণ আল্লাহর ওপর ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে এমন কেউ নেই। তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন আবার যাকে ইচ্ছা বঞ্চিত করেন। সুতরাং আল্লাহর নিকট দু‘আ করলে আমাদের দৃঢ়তার সাথে দু‘আ করা উচিত।

ইমাম বাজী (রহঃ) বলেন, হাদীসটির অর্থ হলো আল্লাহর শানে তাকে ইচ্ছাধীন করে শব্দ ব্যবহার উচিত নয়, কেননা এ কথা সকলের কাছে দিবালোকের ন্যায় পরিষ্কার যে, তিনি কাউকে ক্ষমা করলে নিজ ইচ্ছাই করেন এক্ষেত্রে কারো চাপের মুখে পড়ে কাউকে ক্ষমা করতে আল্লাহ বাধ্য হন না। এগুলো থেকে আল্লাহ তা‘আলা সম্পূর্ণ পূতঃপবিত্র। কেননা, অত্র হাদীসের শেষেই বলা হয়েছে। (فإنه لا مكره له) অর্থাৎ- তাকে কেউ বাধ্যকারী নেই। এখানে نهى (নিষেধাজ্ঞা) টি হারামের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে কিনা অর্থাৎ- যদি কেউ এরূপ দু‘আ করে তাহলে কি তা হারাম হবে? এ ব্যাপারে মতবিরোধ আছে তবে অধিকাংশ ‘আলিমের মতামত হারাম হওয়ার দিকেই।

হাফেয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) ইমাম ইবুন ‘আবদিল বার (রহঃ)-এর বরাত দিয়ে বলেছেন, কোন ব্যক্তির জন্য এটা জায়িয নেই যে, সে এরূপ বলে, (اللهم أعطني إن شئت) অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমাকে চাইলে কিছু দাও।

এটা ধর্মীয় বা পার্থিব যে কোন বিষয়ই হোক না কেন এরূপ দু‘আ বৈধ নয়। কেননা, আল্লাহ তা‘আলা তো নিজের ইচ্ছাই সব করেন। অন্য কারো ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল হওয়া থেকে তিনি সম্পূর্ণ মুক্ত।

ইমাম ইবনু ‘আবদিল বার (রহঃ) হাদীসটির বাহ্যিক অর্থের প্রতি খেয়াল করে তিনি বলেছেন, অত্র হাদীসে ব্যবহৃত নিষেধাজ্ঞাটি হারাম সাব্যস্তের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে।

ইমাম নাবাবী (রহঃ) অত্র হাদীসে ব্যবহৃত নিষেধাজ্ঞাটিকে হারামের অর্থে গ্রহণ না করে للتنزيه তথা হারাম নয় তবে এর থেকে বেঁচে থাকা ভাল এ অর্থে গ্রহণ করেছেন। আর ইমাম নাবাবী (রহঃ)-এর কথাই বেশি সঠিক মনে হয়। কেননা ইসতিখারার সালাতে আমরা আল্লাহ তা‘আলাকে স্বাধীনতা দিয়েই দু‘আ করে থাকি যদি সেটা একেবারে হারামই হতো তাহলে দু’ হাদীসে দু’ রকম আসতো না। আল্লাহই ভালো জানেন।

‘আল্লামা দাঊদী (রহঃ) বলেন, দু‘আ করতে গিয়ে কেউ ‘ইনশা-আল্ল-হ’ বলার মতো যা বারাকাতের জন্য বলা হয় সেরূপ না করে বরং আল্লাহ তা‘আলার নিকট ঠিক সেরূপভাবেই চাইতে হবে যেমন একজন ফকীর দুঃস্থ ও অনাথ ব্যক্তি চেয়ে থাকে।

(اِرْحَمْنِىْ إِنْ شِئْتَ) অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আপনি ইচ্ছা করলে আমাকে রহম করুন, ইচ্ছা করলে আমাকে রিযক দিন ইত্যাদি এগুলো সবই হলো পূর্বে উল্লেখিত নিষেধকৃত দু‘আর উদাহরণ।

(لِيَعْزِمْ) অর্থাৎ- কোন প্রকার সংশয় সংশ্রব ব্যতীত দৃঢ়তার সাথে দু‘আ কবুলের আশা নিয়ে দু‘আ করার প্রতি আদেশ করা হয়েছে। হাদীসে উল্লেখিত (مَسْأَلَتَه) মাস্আলাহ্ শব্দের দ্বারা উদ্দেশ্য হলো দু‘আ। অবশ্য সহীহ মুসলিম ও মুসনাদে আহমাদএর এক বর্ণনায় (مَسْأَلَتَه) মাস্আলাহ্ শব্দের পরিবর্তে সরাসির দু‘আ শব্দ এসেছে।

ইমাম জাযরী (রহঃ) বলেন, এখানে যে عزم শব্দটি বলা হয়েছে তার বিশ্লেষণে আমরা বলি যে, যখন কোন মানুষ কোন কর্মে তার মনস্থির করে তখনই বলা হয় عزمت অর্থাৎ- তুমি কাজে দৃঢ়চেতা হয়েছ।

অপরদিকে عزم শব্দটির শাব্দিক অর্থও দৃঢ়, অকাট্য পাকাপোক্ত ও সন্দেহ দূরীভূতকরণ। সুতরাং মোটকথা হলো, দু‘আ করতে গিয়ে দৃঢ়চেতা হও সন্দেহের ভিতর থেকো না। কেননা দু‘আ কবূল হবে এরূপ দৃঢ় মনোবল নিয়ে সেই দু‘আ করতে পারে যার আল্লাহ সম্পর্কে ভাল ধারণা রয়েছে।

ইমাম দা‘ওয়াদীও একই মতামত ব্যক্ত করেছেন।

‘আল্লামা ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী (রহঃ) বলেন, আমি বলবো হাদীসটি ইমাম ত্ববারানী (রহঃ) দু‘আ অধ্যায়ে নিয়ে এসেছেন।

হাফেয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেছেন, এমন সানাদে যার সকল রাবীই নির্ভরযোগ্য তবে বাকিয়্যাহ্ বিন ওয়ালীদ এর ‘আয়িশাহ্ থেকে আন্ আন্ সূত্রে বর্ণনাটি একটু বিতর্কিত হয়েছে। হাদীসটি হলো, নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়া তা‘আলা তার ঐসব বান্দাদের পছন্দ করেন যারা তাদের দু‘আতে পিড়াপীড়ি অর্থাৎ- নাছোড় বান্দা হয়ে দু‘আ করে। ইবনু ‘উয়াইনাহ্ (রহঃ) বলেন, কারো জন্য এটা উচিত হবে না যে, তিনি নিজের অসম্পূর্ণতার দরুন দু‘আ করা বন্ধ করে দিবেন। কেননা আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলা সৃষ্টিকূলের নিকৃষ্ট ইবলীসের দু‘আও কবূল করেছেন। যখন সে বলেছিল,

رَبِّ فَأَنْظِرْنِي إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ অর্থাৎ- ‘‘হে আমার রব! তুমি আমাকে কিয়ামাত পর্যন্ত হায়াত দান করো।’’ (সূরা আল হিজর ১৫ : ৩৬)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৯: দু‘আ (كتاب الدعوات) 9. Supplications
২২২৬

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

২২২৬-[৪] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ যখন দু’আ করে, সে যেন এটা না বলে, হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দাও যদি তুমি ইচ্ছা রাখো। বরং সে যেন দৃঢ়চিত্তে ও পূর্ণ আগ্রহের সাথে দু’আ করে। কেননা কোন কিছু দান করতে আল্লাহর অসাধ্য কোন কিছু নেই। (মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا دَعَا أَحَدُكُمْ فَلَا يَقُلِ: اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي إِنْ شِئْتَ وَلَكِنْ لِيَعْزِمْ وَلْيُعَظِّمِ الرَّغْبَةَ فَإِنَّ اللَّهَ لَا يَتَعَاظَمُهُ شيءٌ أعطاهُ . رَوَاهُ مُسلم

وعنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: اذا دعا احدكم فلا يقل: اللهم اغفر لي ان شىت ولكن ليعزم وليعظم الرغبة فان الله لا يتعاظمه شيء اعطاه . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: হাফেয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন, (لْيُعَظِّمِ الرَّغْبَةَ) অর্থ হলো বারবার দু‘আ করা বা বেশি পরিমাণ চাওয়া। رغبة অর্থ হল বেশি বেশি চাওয়া।

(فَإِنَّ اللّٰهَ لَا يَتَعَاظَمُه شيءٌ أعطاهُ) অর্থাৎ- আল্লাহ তার কোন বান্দাকে অঢেল সম্পদ দান করলে এতে তার ধনভাণ্ডারে কোনরূপ বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় না।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৯: দু‘আ (كتاب الدعوات) 9. Supplications
২২২৭

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

২২২৭-[৫] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দার (প্রতিটি) দু’আ কবূল করা হয়, যে পর্যন্ত না সে গুনাহের কাজের জন্য অথবা আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার জন্য এবং তাড়াহুড়া করে দু’আ করে। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! তাড়াহুড়া কি? তিনি বললেন, (দু’আ করে) এমনভাবে বলা যে, আমি (এই) দু’আ করেছি। আমি (তার জন্য) দু’আ করেছি। আমার দু’আ তো কবূল হতে দেখছি না। অতঃপর সে নিরাশ হয়ে পড়ে এবং দু’আ করা ছেড়ে দেয়। (মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يُسْتَجَابُ لِلْعَبْدِ مَا لَمْ يَدْعُ بِإِثْمٍ أَوْ قَطِيعَةِ رَحِمٍ مَا لَمْ يَسْتَعْجِلْ» . قِيلَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا الِاسْتِعْجَالُ؟ قَالَ: يَقُولُ: قَدْ دَعَوْتُ وَقَدْ دَعَوْتُ فَلَمْ أَرَ يُسْتَجَابُ لِي فَيَسْتَحْسِرُ عِنْدَ ذَلِكَ وَيَدَعُ الدُّعاءَ . رَوَاهُ مُسلم

وعنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «يستجاب للعبد ما لم يدع باثم او قطيعة رحم ما لم يستعجل» . قيل: يا رسول الله ما الاستعجال؟ قال: يقول: قد دعوت وقد دعوت فلم ار يستجاب لي فيستحسر عند ذلك ويدع الدعاء . رواه مسلم

ব্যখ্যা: (لَمْ يَدْعُ بِإِثْمٍ) অর্থাৎ- কোন পাপ কাজ করার সুযোগ চেয়ে দু‘আ করা যাবে না। যেমন কেউ বললো, হে আল্লাহ! আমাকে অমুককে হত্যা করার ক্ষমতা প্রদান করুন। অথচ সে মুসলিম তাকে হত্যা করার কোন কারণ বিদ্যমান নেই। হে আল্লাহ! আমাকে মদ দান করুন ইত্যাদি পাপের কাজে দু‘আ করা নিষেধ।

(قَطِيعَةِ رَحِمٍ) অর্থাৎ- ইমাম জাযরী বলেন, কোন ব্যক্তি যদি এ দু‘আ করে, হে আল্লাহ! আমার ও আমার পিতা-মাতার মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দাও যাতে করে আমার তাদের পিছনে কোন খরচ না করা লাগে- এমন দু‘আ করা জায়িয নেই।

(فَلَمْ أَرَ يُسْتَجَابُ لِي) ‘আল্লামা মুল্লা ‘আলী কারী হানাফী (রহঃ) বলেন, দু‘আকারী এভাবে বলবে যে, অর্থাৎ- আমি বহুবার দু‘আ করেছি কিন্তু দু‘আ কবূল হওয়ার কোনই আলামত দেখছি না। এ জাতীয় কথা হয়তো দু‘আ কারী আল্লাহকে দু‘আ কবূলের ক্ষেত্রে ধীরুজ মনে করে বা নিরাশ হয়ে বলতে পারে আর এ দু’শ্রেণীর বিষয়ই তার জন্য জায়িয হবে না। প্রথমটি এজন্য জায়িয হবে না যে, দু‘আ কবূল হওয়া একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা আছে, যেমন : বর্ণিত হয়েছে মূসা (আঃ) ও হারূন (আঃ) ফির‘আওন-এর ওপর যে বদ্দু‘আ করেছিলেন তা কবূল হয়েছিল তাদের দু‘আ করার ৪০ বছর পর। আর দ্বিতীয়টি অর্থাৎ- নিরাশ হয়ে যাওয়া এজন্য জায়িয হবে না যে, আল্লাহর রহমাত থেকে কেবল তারাই নিরাশ হয় যারা বেঈমান।

পাশাপাশি আরো একটি বিষয় মনে করতে হবে। আর তা হলো, দু‘আ কবূলের অনেকগুলো প্রকার আছে যেমনঃ

১. কাঙ্ক্ষিত বস্ত্ত কাঙ্ক্ষিত সময়ে অর্জন হয়।

২. কাঙ্খিত বস্ত্ত অর্জিত হয় তবে কাঙ্ক্ষিত সময়ে নয় বরং কোন রহস্যের কারণে বিলম্বে অর্জিত হয়।

৩. কাঙ্ক্ষিত বস্ত্ত অর্জিত হয় না বরং কাঙ্ক্ষিত বস্তুর পরিবের্ত কোন অনিষ্ট দূরীভূত হয় অথবা তার চেয়ে আরো ভালো কিছু প্রদান করা হয়।

৪. বিচারের কঠিন দিনের জন্য জমা করে রাখা হয়। অর্থাৎ- দুনিয়াতে নয় এর প্রতিদান পাওয়া যাবে আখিরাতে।

আমি [‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী] বলবো, ‘‘হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে দু‘আ কবূল করা হবে’’ এর দ্বারা এবং পবিত্র কুরআনে যেখানে বলা হয়েছে, ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ অর্থাৎ- ‘‘আমাকে ডাকো আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব।’’ (সূরা মু’মিন/গাফির ৪০ : ৬০)

মহান আল্লাহর আরো বাণীঃ أُجِيْبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ অর্থাৎ- ‘‘আমি আহবানকারীর ডাকে সাড়া দেই যখন সে আমাকে ডাকে।’’ (সূরা আল বাকারাহ্ ২ : ১৮৬)

এসবগুলো দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, দু‘আ করলে তা কবূল হয়। হয়তো বা কখনো যা চাওয়া হয় তাই পাওয়া যায় আবার কখনো তার পরিবর্তে অন্য কিছু পাওয়া যায় বা তার চেয়ে বেশী পাওয়া যায়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৯: দু‘আ (كتاب الدعوات) 9. Supplications
২২২৮

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

২২২৮-[৬] আবূ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মুসলিম তার কোন মুসলিম ভাইয়ের জন্য তার অনুপস্থিতিতে দু’আ করলে ওই দু’আ কবূল করা হয়। দু’আকারীর মাথার পাশে একজন মালাক (ফেরেশতা) নিয়োজিত থাকেন। যখন সে তার ভাইয়ের জন্য (কল্যাণের) দু’আ করে; সে নিযুক্ত মালাক সাথে সাথে বলেন ’আমীন’ এবং তোমার জন্যও অনুরূপ হোক। (মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: دعوةُ الْمُسْلِمِ لِأَخِيهِ بِظَهْرِ الْغَيْبِ مُسْتَجَابَةٌ عِنْدَ رَأْسِهِ مَلَكٌ مُوَكَّلٌ كُلَّمَا دَعَا لِأَخِيهِ بِخَيْرٍ قَالَ الْمَلَكُ الْمُوَكَّلُ بِهِ: آمِينَ وَلَكَ بِمِثْلٍ . رَوَاهُ مُسلم

وعن ابي الدرداء رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: دعوة المسلم لاخيه بظهر الغيب مستجابة عند راسه ملك موكل كلما دعا لاخيه بخير قال الملك الموكل به: امين ولك بمثل . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: (بِظَهْرِ الْغَيْبِ) অর্থাৎ- তার অনুপস্থিত। মুল্লা ‘আলী কারী হানাফী (রহঃ) বলেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য শুধুমাত্র অনুপস্থিত ব্যক্তি নয় বরং কেউ যদি কারো সাথে উপস্থিত থাকে আর সে তার জন্য যদি মনে মনে জবানে উচ্চারণ না করে দু‘আ করে তাহলেও তার দু‘আ কবূল হয়। পূর্ববর্তী ‘উলামাগণের নিয়ম ছিল নিজের জন্য কোন দু‘আ করলে অপর মুসলিম ভাইয়ের জন্যও সে রকম দু‘আ করতেন যাতে করে সেও দু‘আর অংশীদার হতে পারে।

(مُسْتَجَابَةٌ) অর্থাৎ- যদি কোন মুসলিম অপর মুসলিমের জন্য তার অজান্তে তার কল্যাণ কামনা করে দু‘আ করে এটা এভাবেও হতে পারে যে, তারা একই বৈঠকে বসে আছে কিন্তু সে অপর মুসলিম ভাই বুঝতে পারল না যে, তার সাথে বসা মুসলিম ভাই তার জন্য দু‘আ করছে। এমন যদি হয় তাহলে এ দু‘আ কবূল হয়ে যায়, কেননা এখানে পূর্ণ একনিষ্ঠতার আগমন ঘটেছে, নেই কোন কপটতা আর না আছে কোন বিনিময় পাওয়ার আশা।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৯: দু‘আ (كتاب الدعوات) 9. Supplications
২২২৯

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

২২২৯-[৭] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের নিজেদের জন্য বদ্দু’আ করো না। বদ্দু’আ করো না তোমরা তোমাদের সন্তান-সন্ততির জন্য, বদ্দু’আ করো না তোমরা তোমাদের ধন-সম্পদের জন্য; আর বদ্দু’আটি এমন এক সময়ের সাথে মিলিত হয়ে যায় যে সময় আল্লাহর কাছে কোন কিছু চাওয়া হয়, আর আল্লাহ তখন তা কবূল করেন। (মুসলিম; আর ইবনু ’আব্বাস-এর হাদীসে যাকাত পর্বে উল্লেখ করা হয়েছে ’’মাযলূমের বদ্দু’আ হতে বেঁচে থাকো’’)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَدْعُوا عَلَى أَنْفُسِكُمْ وَلَا تدْعُوا على أَوْلَادكُم لَا تُوَافِقُوا مِنَ اللَّهِ سَاعَةً يُسْأَلُ فِيهَا عَطَاءً فَيَسْتَجِيبَ لَكُمْ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
وَذَكَرَ حَدِيثَ ابْنِ عَبَّاسٍ: «اتَّقِ دَعْوَةَ الْمَظْلُومِ» . فِي كِتَابِ الزَّكَاة

وعن جابر قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «لا تدعوا على انفسكم ولا تدعوا على اولادكم لا توافقوا من الله ساعة يسال فيها عطاء فيستجيب لكم» . رواه مسلم وذكر حديث ابن عباس: «اتق دعوة المظلوم» . في كتاب الزكاة

ব্যাখ্যা: এ বিষয়টি মহিলাদের ভিতরে বেশি লক্ষণীয়। তারা একটু কিছু হলেই তাদের সন্তানদের বদ্দু‘আ করে থাকে। এটা মোটেও ঠিক নয়। অত্র হাদীসে এ বিষয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞা বর্ণিত হয়েছে।

(لَا تَدْعُوْا عَلٰى اَنْفُسِكُمْ وَلَا تَدْعُوْا عَلٰى أَوْلَادِكُمْ) অর্থাৎ- কেননা তোমাদের বদ্দু‘আগুলো দু‘আ কবূলের সময়ের সাথে হয়ে যেতে পারে। তখন এরূপ দু‘আ কবূল হয়ে গেলে তোমরা লজ্জিত হবে। সুতরাং তোমরা কল্যাণময় দু‘আ ছাড়া বদ্দু‘আ করবে না।

(وَلَا تدْعُوا على أَمْوَالِكُم )‘আল্লামা মুল্লা ‘আলী কারী হানাফী (রহঃ) বলেন, এখানে (أَمْوَالِكُم) তথা সম্পত্তি দ্বারা উদ্দেশ্য হলো কর্মচারী বা চাকর-চাকরাণী। অর্থাৎ- এদের উপর রাগ করে তাদের মৃত্যু চেয়ে বদ্দু‘আ করো না। ‘আল্লামা ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী (রহঃ) বলেন, আবূ দাঊদ-এর এক রিওয়ায়াতে (وَلَا تدْعُوا على أَمْوَالِكُم) এর পূর্বে (لَا تَدْعُوْا عَلٰى خَدْمِكُمْ) উল্লেখ আছে।

(دَعْوَةَ الْمَظْلُومِ) অর্থাৎ- কারো ওপর যুলম করো না। কারো জিনিস ছিনিয়ে নিও না বা কাউকে তার প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করো না।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৯: দু‘আ (كتاب الدعوات) 9. Supplications
২২৩০

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

২২৩০-[৮] নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু’আই (মূল) ’ইবাদাত। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কুরআনের এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন, ’’এবং তোমাদের রব বলেছেন, তোমরা আমার নিকট দু’আ করো, আমি তোমাদের দু’আ কবূল করব।’’ (আহমদ, তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الدُّعَاءُ هُوَ الْعِبَادَةُ» ثُمَّ قَرَأَ: (وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكم)
رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ وَابْنُ مَاجَه

عن النعمان بن بشير قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «الدعاء هو العبادة» ثم قرا: (وقال ربكم ادعوني استجب لكم) رواه احمد والترمذي وابو داود والنساىي وابن ماجه

ব্যাখ্যা: (الدُّعَاءُ هُوَ الْعِبَادَةُ) হাদীসটির অর্থ হলো ‘ইবাদাতই দু‘আ, কেননা ‘ইবাদাতের যত শ্রেণী আছে তন্মধ্যে দু‘আ শ্রেষ্ঠ। যেহেতু পরবর্তীতে একটি হাদীস আসছে যেখানে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করা হয়েছে (الدُّعَاءُ هُوَ الْعِبَادَةُ) ‘ইবাদাতই হলো দু‘আ।

‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, হাদীসটির অর্থ হলো এখানে ‘ইবাদাতকে তার আভিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে বুঝানো হয়েছে, দু‘আর অর্থ হলোঃ

إظهار غاية التذلل والافتقار إلى الله والاستكانة له.

অর্থাৎ- আল্লাহর জন্য চূড়ান্তভাবে বিনয়ী ভাব প্রকাশ করা। আর শারী‘আতসিদ্ধ সকল ‘ইবাদাতেরই মূল বিষয় আল্লাহর জন্য বিনয়ী হওয়া। দলীল হিসেবে তিনি পবিত্র কুরআনের একটি আয়াত পেশ করেছেন যেখানে মহান আল্লাহ বলেছেন,

إِنَّ الَّذِيْنَ يَسْتَكْبِرُوْنَ عَنْ عِبَادَتِيْ سَيَدْخُلُوْنَ جَهَنَّمَ دَاخِرِيْنَ

অর্থাৎ- ‘‘নিশ্চয়ই যারা আমার ‘ইবাদাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে তারা নিন্দিত ও লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’’ (সূরা আল মু’মিন/গাফির ৪০ : ৬)

অত্র আয়াতে বিনয়ীভাব ও নম্রতা না প্রদর্শন করাকে অহংকার বলা হয়েছে আর ‘ইবাদাত শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে দু‘আর স্থানে আর এই অহমিকার প্রতিদান হিসেবে বলা হয়েছে লাঞ্ছনা-গঞ্জনার কথা।

আর এ কথাও কোন কোন বিদ্বান বলেছেন, অত্র আয়াতে ‘ইবাদাতকে তার আভিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার কোন সুযোগ নেই আর দেখলে তাতে কোন উপকারও নেই বরং দু‘আ হোক বা অন্য কোন কিছু হোক।

যাই হোক না কেন ‘ইবাদাত আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করা বা তার ক্রোধ দমন করা, অথবা দুনিয়াবী কোন নিয়ামত চাওয়া যেমনঃ রিযক্বের প্রশস্ততা কামনা করা, যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে অসুস্থতা থেকে আরোগ্য কামনা করা- এ থেকে মুক্ত নয়, আর এগুলোর প্রত্যেকটিকেই দু‘আ নামে অভিহিত করা যায়। কেননা, এগুলো হচ্ছে আন্তরিক দু‘আ। আমরা যদি শারী‘আতের অন্যান্য ‘ইবাদাতগুলো (দু‘আ ব্যতীত) পর্যালোচনা করে দেখি তাহলে দেখতে পাব সেখানে বান্দার আন্তরিক দিকটি প্রাধান্য দেয়া হয় আর অন্তরে যা আছে তাও ‘ইবাদাত এই ‘ইবাদাত যখন দু‘আ আকারে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়ে বের হয় তখন এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় দু‘আর মধ্যে ‘ইবাদাতের দু’টি দিকই সমভাবে বিরাজমান। সুতরাং দু‘আ সর্বোত্তম ‘ইবাদাত হতে আর কোন সমস্যা থাকার কথা নয়।

আর এক্ষেত্রে আরো জেনে থাকা দরকার (الدُّعَاءُ مُخُّ الْعِبَادَةِ) তথা অত্র হাদীসটি সানাদগত দুর্বল হলেও এ ব্যাপারে সহীহভাবে বর্ণিত আছে, (الدُّعَاءُ مُخُّ الْعِبَادَةِ) তথা দু‘আ হলো ‘ইবাদাতের মূল এ হাদীসটি (الدُّعَاءُ مُخُّ الْعِبَادَةِ) তথা দু‘আই ‘ইবাদাত এ হাদীসের সমর্থক।

এ ব্যাপারে একটি উদাহরণ পেশ করা যাক যেমনঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (الحج عرفة) তথা ‘আরাফার ময়দানে অবস্থানই হজ। এ কথার অর্থ এটা নয় যে, কোন ব্যক্তি হাজ্জের জন্য শুধুমাত্র ‘আরাফার ময়দানে অবস্থান করলে আর বাদবাকী রুকন আদায় না করলেও তার হজ হয়ে যাবে বরং এর অর্থ হলো হাজ্জের জন্য ‘আরাফার ময়দানে অবস্থান সর্বাধিক বড় রুকন বা এ জাতীয় কথা বলতে হবে। সুতরাং আমরা বলতে পারি সব ‘ইবাদাতই কোন না কোনভাবে দু‘আ।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৯: দু‘আ (كتاب الدعوات) 9. Supplications
২২৩১

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

২২৩১-[৯] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু’আ হলো ’ইবাদাতের মগজ বা মূলবস্তু। (তিরমিযী)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الدُّعَاءُ مُخُّ الْعِبَادَةِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

وعن انس قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «الدعاء مخ العبادة» . رواه الترمذي

ব্যাখ্যা: (الدُّعَاءُ مُخُّ الْعِبَادَةِ) অর্থাৎ- المخ শব্দটির মীমে ضَمَّة তথা পেশ দিয়ে পড়তে হবে, এর অর্থ হলো হাড়ের মজ্জা, ঘিলু, অক্ষিগোলক এবং প্রতি জিনিসের নির্জাস।

হাদীসটির অর্থ হলো, নিশ্চয়ই দু‘আ ‘ইবাদাতের মূল। এটা এজন্য যে, দু‘আকারী দুনিয়ার সকল কিছু থেকে যখন আশা ছেড়ে দেয় তখনই সে আল্লাহর নিকট দু‘আ করে থাকে এটাই তাওহীদ ও ইখলাসের বাস্তবতা আর তাওহীদ ও ইখলাসের চেয়ে উত্তম কোন ‘ইবাদাত নেই। ইবনুল আরাবী (রহঃ) বলেন, المخ তথা মস্তিষ্ক থেকেই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের শক্তি সঞ্চয় হয় ঠিক তেমনিভাবে দু‘আ হলো ‘ইবাদাতের মস্তিষ্ক এ দু‘আর মাধ্যমেই বান্দাদের ‘ইবাদাত শক্তি অর্জন করতে সক্ষম হয়, কেননা দু‘আ হলো ‘ইবাদাতের প্রাণশক্তি।

ইমাম তিরমিযী (রহঃ) হাদীসটিকে তার দা‘ওয়াত অনুচ্ছেদে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, হাদীসটি গরীব, কারণ এটা ইবনু লাহি‘আহ্ ব্যতীত কেউ বর্ণনা করেননি, আর ইবনু লাহি‘আহ্ সম্পর্কে উসূলে হাদীসের ময়দানে চরম সমালোচনা রয়েছে। তবে ইমাম বুখারী (রহঃ) তাঁর আদাবুল মুফরাদে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)  থেকে মারফূ‘ সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, (أشرف العبادة الدعاء) তথা সর্বোত্তম ‘ইবাদাত হলো দু‘আ। (আল্লাহই ভালো জানেন)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৯: দু‘আ (كتاب الدعوات) 9. Supplications
২২৩২

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

২২৩২-[১০] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর নিকট দু’আর চেয়ে কোন জিনিসের অধিক মর্যাদা (উত্তম) নেই। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ; ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি হাসান ও গরীব)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَيْسَ شَيْءٌ أَكْرَمَ عَلَى اللَّهِ مِنَ الدُّعَاءِ»

وعن ابي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ليس شيء اكرم على الله من الدعاء»

ব্যাখ্যা: (لَيْسَ شَىْءٌ أَكْرَمَ) দু‘আ সর্বোত্তম ‘ইবাদাত হওয়ার অনেকগুলো কারণ আছে, যেমন দু‘আর মাধ্যমে আল্লাহর দিকে অভিমুখী হওয়া আল্লাহর শক্তি স্বীকার করা, স্বীয় অক্ষমতাকে প্রকাশ করা ইত্যাদি বিষয়গুলো জোরালোভাবে প্রমাণ হয়।

(لَيْسَ شَىْءٌ أَكْرَمَ) অর্থাৎ- সর্বাধিক মর্যাদাসম্পন্ন

এখানে হাদীসটির অর্থ হলো কথার মাধ্যমে যত সব ‘ইবাদাত করা হয় তন্মধ্যে দু‘আই শ্রেষ্ঠ মহান আল্লাহর নিকট। এ হাদীসটি এ হাদীসের বিপরীত হবে না যেখানে বলা হয়েছে (الصلاة أفضل العبادات البدنية) সর্বোত্তম ‘ইবাদাত হলো সালাত, কেননা সালাত হলো শারীরিক ‘ইবাদাতের মধ্যে সর্বোত্তম। এ সন্দেহেরও অবকাশ নেই যে, এটা আল্লাহ তা‘আর এ বাণীর খেলাফ

إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ

‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় ‘ইবাদাত হলো তাকওয়া তথা আল্লাহভীতি।’’ (সূরা আল হুজুরাত ৪৯ : ১৩)

 কোন কোন বিদ্বান বলেন, বস্ত্তত দু‘আই হলো সমস্ত ‘ইবাদাত ও আনুগত্যের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।

আবার কোন কোন বিদ্বান বলেন, হাদীসে উল্লেখিত أَكْرَمَ শব্দের অর্থ হলো أسرع قبولًا তথা সর্বাধিক দ্রুততার সাথে মঞ্জুর হয়।

কোন কোন ‘আলিম এ কথা বলেছেন যে, এখানে দু‘আ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর দিকে আহবান করা। আর তখন অর্থ দাঁড়াবে যে, সর্বোত্তম ‘আমল হচ্ছে আল্লাহর দিকে মানুষকে আহবান করা যা ছিল আম্বিয়ায়ে কিরাম এবং তাঁদের নায়েব ‘আলিমগণের কাজ- এ অর্থটিও সঠিক যাতে কোন প্রশ্ন উঠে না।


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৯: দু‘আ (كتاب الدعوات) 9. Supplications
২২৩৩

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

২২৩৩-[১১] সালমান আল ফারিসী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু’আ ছাড়া অন্য কিছুই তাকদীদের লিখনকে পরিবর্তন করতে পারে না এবং নেক ’আমল ছাড়া অন্য কিছু বয়স বাড়াতে পারে না। (তিরমিযী)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

وَعَنْ سَلْمَانَ الْفَارِسِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يَرُدُّ الْقَضَاءَ إِلَّا الدُّعَاءُ وَلَا يَزِيدُ فِي الْعُمْرِ إِلَّا الْبر» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

وعن سلمان الفارسي قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «لا يرد القضاء الا الدعاء ولا يزيد في العمر الا البر» . رواه الترمذي

ব্যাখ্যা: মুল্লা ‘আলী কারী হানাফী (রহঃ) বলেন, হাদীসের ‘কাযা’ শব্দের অর্থ হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে ফায়সালাকৃত বিষয়। আর হাদীসটির ব্যাখ্যা হলো যেই আল্লাহ তাকদীর নির্ধারণ করেছেন সেই আল্লাহই তার তাকদীরে লিখে রেখেছেন এখন সে দু‘আ করবে আর দু‘আর মাধ্যমে তার মুসীবাত দূর হয়ে যাবে।

(وَلَا يَزِيدُ فِى الْعُمْرِ إِلَّا الْبر) এর ব্যাখ্যায় অনেক বিদ্বান অনেক ধরনের মূল্যবান মন্তব্য করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন যে, তাকে অল্প সময়ে এত পরিমাণ ভাল কাজ করার সুযোগ দেয়া হবে যা অনেক বেশি পরিমাণ সময় নিয়েও অনেকে করতে পারে না। অন্যথায় মানুষের আয়ু যে নির্ধারিত, এটা আল্লাহ পবিত্র কুরআনে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন।

মহান আল্লাহ বলেন,

وَمَا يُعَمَّرُ مِنْ مُعَمَّرٍ وَلَا يُنْقَصُ مِنْ عُمُرِه إِلَّا فِىْ كِتَابٍ

‘‘কোন দীর্ঘায়ুর আয়ু দীর্ঘ করা হয় না, আর তার আয়ু কমানো হয় না কিতাবের লিখন ছাড়া।’’ (সূরা আল ফা-ত্বির ৩৫ : ১১)

মহান আল্লাহ আরো বলেন,

 يَمْحُو اللَّهُ مَا يَشَآءُ وَيُثْبِتُ وَعِنْدَهٗ أُمُّ الْكِتَابِ

‘‘আল্লাহ যা ইচ্ছে করেন নিশ্চিহ্ন করে দেন আর যা ইচ্ছে প্রতিষ্ঠিত রাখেন, উম্মুল কিতাব তাঁর নিকটই রক্ষিত।’’ (সূরা আর্ র‘দ ১৩ : ৩৯)

মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেন,

فَإِذَا جَآءَ أَجَلُهُمْ لَا يَسْتَأْخِرُوْنَ سَاعَةً وَّلَا يَسْتَقْدِمُوْنَ

‘‘তাদের নির্ধারিত সময় যখন এসে যাবে তখন এক মুহূর্তকাল পশ্চাৎ-অগ্র হবে না।’’ (সূরা আল আ‘রাফ ৭ : ৩৪)

মোট কথা হলো, তাকদীর দু’প্রকারঃ

১. المعلق বা যা পরিবর্তনশীল।   

২. المبرم যা অপরিবর্তনশীল।

المعلق টি দু‘আ বা সৎ ‘আমলের মাধ্যমে পরিবর্তন হতে পারে। তবে المبرم টি কোন সময়ে পরিবর্তন হয় না। এমনটা মতামত ‘উলামায়ে কিরামের।


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৯: দু‘আ (كتاب الدعوات) 9. Supplications
২২৩৪

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

২২৩৪-[১২] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিঃসন্দেহে দু’আ ঐ সব কিছুর জন্যই কল্যাণকামী যা সংঘটিত হয়েছে এবং যা এখনো সংঘটিত হয়নি। সুতরাং হে আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা দু’আ করাকে নিজের প্রতি খুবই জরুরী মনে করবে বা যত্নবান হবে। (তিরমিযী)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ الدُّعَاءَ يَنْفَعُ مِمَّا نَزَلَ وَمِمَّا لَمْ يَنْزِلْ فَعَلَيْكُمْ عِبَادَ اللَّهِ بِالدُّعَاءِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ

وعن ابن عمر رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ان الدعاء ينفع مما نزل ومما لم ينزل فعليكم عباد الله بالدعاء» . رواه الترمذي

ব্যাখ্যা: (إِنَّ الدُّعَاءَ يَنْفَعُ مِمَّا نَزَلَ) অর্থাৎ- যে কোন ধরনের বালা মুসীবাতে দু‘আ করলে তা দূরীভূত হয়ে যায় সেটা যদি তাকদীরে মু‘আল্লাক্বের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয় হয়ে থাকে আর যদি তা তাকদীরে মুবরাম হয় তাহলে এ বিপদে ধৈর্যধারণ করার শক্তি আল্লাহ দিয়ে দেন, ফলে বিপদটি বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির জন্য সহ্য করা সহজ হয়ে যায়।

(وَمِمَّا لَمْ يَنْزِلْ) অর্থাৎ- ভবিষ্যতের বিপদও দু‘আর প্রেক্ষিতে দূর হতে পারে এভাবে যে, হয়তো মহান আল্লাহ তার থেকে বিপদটি সরিয়ে নিবেন বা তাকে ঐ বিপদ আসার আগে এমন বিশেষ ক্ষমতা নিজের পক্ষ থেকে দান করবেন যাতে বিপদে সে সবর করতে সক্ষম হবে।

(فَعَلَيْكُمْ)অর্থাৎ- হে আল্লাহর বান্দাগণ! দু‘আর অবস্থা যখন এরূপ যে, তা বর্তমান ও ভবিষ্যতের বিপদ-আপদ দূর করতে সক্ষম তখন তোমরা সকলেই দু‘আ কর। কেননা দু‘আ তো ‘ইবাদাতেরই একটি অংশ।

হাদীসটি ইমাম তিরমিযী তার দা‘ওয়াত অধ্যায়ে বর্ণনা করেছেন। হাদীসটির সনদে ‘আবদুর রহমান বিন আবূ বাকর আল কুরাশী রয়েছেন যিনি সমালোচিত রাবীর অন্তর্গত।

হাফেয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেছেন, হাদীসটির সনদে لِيْنٌ তথা দুর্বলতা বিরাজমান।


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৯: দু‘আ (كتاب الدعوات) 9. Supplications
২২৩৫

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

২২৩৫-[১৩] আর এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রহঃ) মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি গরীব।[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

وَرَوَاهُ أَحْمَدُ عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ. وَقَالَ التِّرْمِذِيّ هَذَا حَدِيث غَرِيب

ورواه احمد عن معاذ بن جبل. وقال الترمذي هذا حديث غريب

ব্যাখ্যা: হাদীসটি মূলত মুসনাদে আহমাদ-এর, তবে ত্ববারানীতেও হাদীসটির বর্ণনা দেখতে পাওয়া যায় তবে উভয় বর্ণনাই ইসমা‘ঈল বিন ‘আইয়্যাশ থেকে, তিনি ‘আবদুল্লাহ বিন ‘আবদুর রহমান বিন আবী হুসায়ন আল মাক্কী থেকে, তিনি শাহর বিন হাওশাব থেকে, তিনি আবার মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ) থেকে নিম্নের শব্দে বর্ণনা করেছেন শব্দগুলো হলো,

لن ينفع حذر من قدر ولكن الدعاء ينفع مما نزل ومما لم ينزل فعليكم بالدعاء عباد الله

অর্থাৎ- তাকদীর থেকে সতর্ক থাকা যায় না বা তা করে কোন উপকারও নেই তবে উপকার আছে আপতিত ও আগামীতে আপতিত আশংকাজনিত মুসীবাত থেকে বাঁচার দু‘আ করার মধ্যে। সুতরাং হে আল্লাহর বান্দারা! তোমরা বেশি বেশি দু‘আ করো।

হাদীসটির সানাদ সম্পর্কে ইমাম হায়সামী তাঁর প্রসিদ্ধ কিতাব মাজামাউয্ যাওয়ায়িদ-এ বলেছেন শাহর বিন হাওশাব মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ) থেকে শুনেননি। পক্ষান্তরে ইসমা‘ঈল বিন ‘আইয়্যাশ যদি আহলে হিজায থেকে বর্ণনা করেন তাহলে তার বর্ণনাটি য‘ঈফ হয়।

‘আল্লামা ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী (রহঃ) বলেছেন, হাদীসটি ইমাম বাযযার (রহঃ) ও মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ)-এর থেকে বর্ণনা করেছেন, তবে এ সানাদেও ইব্রাহীম বিন খায়সাম নামে এক রাবী আছেন যিনি মাতরূক তথা পরিত্যাজ্য।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৯: দু‘আ (كتاب الدعوات) 9. Supplications
২২৩৬

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

২২৩৬-[১৪] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে কোন ব্যক্তি আল্লাহর কাছে কোন দু’আ করলে আল্লাহ তা’আলা তার হয়ত সে দু’আ কবূল করেন অথবা এরূপ কোন বিপদকে তার ওপর থেকে দূরে সরিয়ে দেন, যদি সে কোন গুনাহের অথবা আত্মীয়তার সম্পর্কচ্ছেদের জন্য দু’আ না করে। (তিরমিযী)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

وَعَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا مِنْ أَحَدٍ يَدْعُو بِدُعَاءٍ إِلَّا آتَاهُ اللَّهُ مَا سَأَلَ أَوْ كَفَّ عَنْهُ مِنَ السُّوءِ مِثْلَهُ مَا لَمْ يَدْعُ بِإِثْمٍ أَوْ قَطِيعَةِ رحم» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

وعن جابر رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ما من احد يدعو بدعاء الا اتاه الله ما سال او كف عنه من السوء مثله ما لم يدع باثم او قطيعة رحم» . رواه الترمذي

ব্যাখ্যা: (إِلَّا اٰتَاهُ اللّٰهُ مَا سَأَلَ) অর্থাৎ- যদি তাকদীরে তার লেখা থাকে তাহলে তার দু‘আর প্রেক্ষিতে আল্লাহ তাকে দান করে থাকেন।

(أَوْ كَفَّ عَنْهُ مِنَ السُّوءِ مِثْلَه) অর্থাৎ- তার তাকদীরে যদি সে যে বিষয় চেয়েছে তা না থাকে তবে কমপক্ষে তার কোন না কোন অনিষ্ট দূর করে দেয়া হবে।

একটি প্রশ্ন ও তার উত্তরঃ হাদীসে বলা হলো, যদি সে যে কল্যাণের জিনিস চেয়েছে তা না দেয়া হয় তাহলে তার যে কোন একটি বিপদ বা অনিষ্ট দূর করে দেয়া হবে। প্রশ্ন হলো বিপদ দূর করে দেয়াকে কল্যাণ দেয়ার সমতুল্য করা হলো কিভাবে? কারণ কল্যাণ দান আর বিপদ দূর করাতো এক বিষয় নয়।

এর উত্তরে হাফেয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন, তার চাহিদামাফিক কল্যাণ দিলে তার আরাম স্বস্তি হতো আর অকল্যাণ দূর করলেও তো আরামে স্বস্তি হয়। সুতরাং আরামের দৃষ্টিকোণ থেকে দু’টি এক সাথে তুলনা করে দেখানোর বেশ যৌক্তিকতা রয়েছে।

‘আল্লামা ত্বীবী বলেছেন, কল্যাণ যেমন প্রয়োজন অনুরূপ অকল্যাণ দূরবর্তী হওয়াও প্রয়োজন। সুতরাং প্রয়োজনের দৃষ্টিকোণ থেকে দু’টিকে একই বিবেচনা করা হয়েছে।

(أَوْ قَطِيعَةِ رحم) অর্থাৎ- আত্মীয়ের সম্পর্ক ছেদনের দু‘আ না করার কথা হাদীসে বলা হয়েছে। এর আগে বলা হয়েছে পাপের দু‘আ না করার কথা। এখানে মূলত প্রথমে পাপ বলে সব পাপকেই বুঝানো হয়েছে পরে গুরুত্ব বুঝানোর জন্য আত্মীয়ের সম্পর্ক ছেদন করার দু‘আ না করার কথা বলা হয়েছে।


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৯: দু‘আ (كتاب الدعوات) 9. Supplications
২২৩৭

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

২২৩৭-[১৫] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর কাছে তাঁর অনুগ্রহ কামনা করো। কেননা আল্লাহ তাঁর কাছে প্রার্থনা করাকে পছন্দ করেন। আর ’ইবাদাতের (দু’আর) সর্বোত্তম দিক হলো স্বচ্ছলতার অপেক্ষা করা। (তিরমিযী; তিনি বলেন, হাদীসটি গরীব)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «سَلُوا اللَّهَ مِنْ فَضْلِهِ فَإِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ أَنْ يُسْأَلَ وَأَفْضَلُ الْعِبَادَةِ انْتِظَارُ الْفَرَجِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَقَالَ هَذَا حَدِيث غَرِيب

وعن ابن مسعود رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «سلوا الله من فضله فان الله يحب ان يسال وافضل العبادة انتظار الفرج» . رواه الترمذي وقال هذا حديث غريب

ব্যাখ্যা: ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, অত্র হাদীসটিতে উম্মাতে মুহাম্মাদীকে আল্লাহর নিকট দু‘আ করে তার ফাযীলাত অনুগ্রহ অন্বেষণ করার ব্যাপারে উৎসাহ দেয়া হয়েছে। কেননা আল্লাহ হচ্ছেন এমন সত্তা যে তার ভাণ্ডার থেকে কাউকে কিছু দিলে তার ভাণ্ডারে কোন ঘাটতি হয় না।

বর্তমানে অধিকাংশ পাণ্ডুলিপিতে ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণনার কথা আছে, যেমনঃ মুনযিরীর তারগীব, জামি‘ সগীর ও কানযুল উম্মাল-এ এমনটাই পাওয়া যায়।

‘আল্লামা মুল্লা ‘আলী কারী হানাফী (রহঃ) বলেন, মিশকাতের নুসখা তথা পাণ্ডুলিপিতে ইবনু মাস্‘ঊদ-এর স্থানে আবী মাস্‘ঊদ পাওয়া যায়। তবে সঠিক হলো ইবনু মাস্‘ঊদ। যেমনটি দেখতে পাওয়া যায় জামি‘ আত্ তিরমিযীতে।

(سَلُوا اللّٰهَ مِنْ فَضْلِه) ‘আল্লামা ত্বীবী বলেন, অর্থাৎ- তোমরা আল্লাহর নিকট থেকে ফাযীলাত অন্বেষণ কর। কেননা তার ফাযীলাত বা অনুগ্রহ সুবিশাল আর তিনি যদি কাউকে অনুগ্রহ করেন তাহলে কেউ তাকে বাধা প্রদান করতে পারবে না।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৯: দু‘আ (كتاب الدعوات) 9. Supplications
২২৩৮

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

২২৩৮-[১৬] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট কামনা (দু’আ) করে না, আল্লাহ তার ওপর রাগান্বিত হন। (তিরমিযী)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ لَمْ يَسْأَلِ اللَّهَ يغضبْ عَلَيْهِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

وعن ابي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «من لم يسال الله يغضب عليه» . رواه الترمذي

ব্যাখ্যা: (مَنْ لَمْ يَسْأَلِ اللّٰهَ يغضبْ عَلَيْهِ) অর্থাৎ- আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলা তার নিকট যারা চায় না তাদের প্রতি ক্রোধান্বিত হন, কেননা না চাওয়া অহংকার ও নিজের স্বয়ংসম্পূর্ণতার উপর প্রমাণ করে যা কোন আদম সন্তানের জন্য জায়িয নেই। কবি কতই না সুন্দর করে বলেছেন,

الله يغضب إن تركت سؤاله وترى ابن آدم حين يسأل يغضب

অর্থাৎ- আল্লাহর নিকট তুমি দু‘আ করা বা চাওয়া বন্ধ করে দিও না তাহলে তিনি রাগান্বিত হন আর মানুষের নিকট কোন কিছু চাইলে তারা এক পর্যায়ে চাওয়ার কারণে রাগান্বিত হয়ে যায়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৯: দু‘আ (كتاب الدعوات) 9. Supplications
২২৩৯

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

২২৩৯-[১৭] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে যার জন্য দু’আর দরজা খোলা, তার জন্য রহমতের দরজাও খোলা। আর আল্লাহর নিকট কুশল ও নিরাপত্তা কামনা করা ব্যতীত আর কোন কিছু কামনা করা এত প্রিয় নয়। (তিরমিযী)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ فُتِحَ لَهُ مِنْكُمْ بَابُ الدُّعَاءِ فُتِحَتْ لَهُ أَبْوَابُ الرَّحْمَةِ وَمَا سُئِلَ اللَّهُ شَيْئًا يَعْنِي أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ أَنْ يُسْأَلَ الْعَافِيَةَ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

وعن ابن عمر رضي الله عنهما قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «من فتح له منكم باب الدعاء فتحت له ابواب الرحمة وما سىل الله شيىا يعني احب اليه من ان يسال العافية» . رواه الترمذي

ব্যাখ্যা: (فُتِحَتْ لَهٗ أَبْوَابُ الرَّحْمَةِ) অর্থাৎ- যে বেশি বেশি দু‘আ করার তাওফীক লাভ করবে সে বেশি বেশি আল্লাহর নিয়ামত ও রহমাত লাভে ধন্য হবে। অন্য বর্ণনায় আছে, তার জন্য জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হবে।

(مِنْ أَنْ يُسْأَلَ الْعَافِيَةَ) এর ব্যাখ্যায় ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, অত্র হাদীসটিতে সুস্থতা চেয়ে দু‘আর প্রতি উৎসাহিত করার কারণ হলো সুস্থতা একটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ যার মধ্যে জাগতিক ও পরকালীন সব সুস্থতাই অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায় এবং নিশ্চয়ই সুস্থতা এক বড় নিয়ামত।

উল্লেখ্য যে, হাদীসটিতে মুলায়কী নামক একজন রাবী আছেন যিনি য‘ঈফ। ‘আল্লামা মুনযীর তাকে যাহিবুল হাদীস ও ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) তাকে দুর্বল বলেছেন। যদিও ইমাম হাকিম হাদীসটি সহীহ বলেছেন।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৯: দু‘আ (كتاب الدعوات) 9. Supplications
২২৪০

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

২২৪০-[১৮] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি চায় বিপদাপদে আল্লাহ তার দু’আ কবূল করুন। সে যেন তার সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের সময়েও আল্লাহর নিকট বেশি বেশি দু’আ করে। (তিরমিযী; তিনি বলেন, হাদীসটি গরীব)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَسْتَجِيبَ اللَّهُ لَهُ عِنْدَ الشَّدَائِدِ فَلْيُكْثِرِ الدُّعَاءَ فِي الرَّخَاءِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيث غَرِيب

وعن ابي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «من سره ان يستجيب الله له عند الشداىد فليكثر الدعاء في الرخاء» . رواه الترمذي وقال: هذا حديث غريب

ব্যাখ্যা: (أَنْ يَسْتَجِيبَ اللّٰهُ لَهٗ عِنْدَ الشَّدَائِدِ) এর الشَّدَائِدِ শব্দটি الشديدة শব্দের বহুবচন এর অর্থ হলো কঠিন মুহূর্তে অটুট থাকা। জাযরী (রহঃ) বলেন, (شديدة) ‘শাদীদাহ্’ বলা হয় মানুষের দুনিয়াবী বিপদাপদ।

(الدُّعَاءَ فِى الرَّخَاءِ) এর এ অংশটুকু ব্যাখ্যায় ইমাম জাযরী (রহঃ) বলেন, الرَّخَاءِ হলো স্বচ্ছলতার সাথে জীবন যাপন করা যা হলো شدة তথা জীবনের কঠিন বাস্তবতার বিপরীত। অর্থাৎ- সুস্থ, সমৃদ্ধি ও ক্লেশযুক্ত অবস্থায় বেশী বেশী সে দু‘আ করে, কেননা চালক মু’মিনের লক্ষণ হচ্ছে তীর নিক্ষেপ করার পূর্বেই তার প্রস্ত্তত করার কাজ সেরে নেয় এবং বাধ্য হওয়ার আগেই আল্লাহর নিকট আশ্রয় কামনা করে। অপরদিকে কাফির ও ফাজির তারা দু‘আ করে শুধুমাত্র বিপদের সময়ে। যেমন : আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَإِذَا مَسَّ الْإِنْسَانَ ضُرٌّ دَعَا رَبَّهٗ مُنِيبًا إِلَيْهِ ثُمَّ إِذَا خَوَّلَهٗ نِعْمَةً مِنْهُ نَسِيَ مَا كَانَ يَدْعُو إِلَيْهِ مِنْ قَبْلُ

অর্থাৎ- ‘‘মানুষকে যখন কোন অনিষ্ট স্পর্শ করে তখন একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকে ডাকে, অতঃপর যখন আল্লাহ তাকে কোন নিয়ামত দান করেন তখন যে বিপদে সে আল্লাহকে ডেকেছিল তা ভুলে যায়।’’ (সূরা আয্ যুমার ৩৯ : ৮)

মহান আল্লাহ আরো বলেন,

وَإِذَا مَسَّ الْإِنْسَانَ الضُّرُّ دَعَانَا لِجَنْبِهِ أَوْ قَاعِدًا أَوْ قَائِمًا فَلَمَّا كَشَفْنَا عَنْهُ ضُرَّهٗ مَرَّ كَأَنْ لَمْ يَدْعُنَا إِلٰى ضُرٍّ مَسَّهٗ

অর্থাৎ- ‘‘আর মানুষকে যখন কোন অনিষ্ট স্পর্শ করে তখন সে নিরুপায় হয়ে আমাকে শুয়ে অথবা বসে অথবা দাঁড়িয়ে ডাকে আর যখন আমি তার বিপদ দূর করে দেই সে এমন ভাব দেখায় যে, সে যেন আমাকে ডাকেইনি।’’ (সূরা ইউনুস ১০ : ১২)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৯: দু‘আ (كتاب الدعوات) 9. Supplications
২২৪১

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

২২৪১-[১৯] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা দু’আ কবূল হওয়ার দৃঢ়তা ও নিশ্চয়তা মনে রেখেই আল্লাহ তা’আলার নিকট দু’আ কর। জেনে রেখ, আল্লাহ তা’আলা অবহেলাকারী আস্থাহীন মনের দু’আ কবূল করেন না। (তিরমিযী; তিনি বলেন, হাদীসটি গরীব)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «ادْعُوا اللَّهَ وَأَنْتُمْ مُوقِنُونَ بِالْإِجَابَةِ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ لَا يَسْتَجِيبُ دُعَاءً مِنْ قَلْبٍ غَافِلٍ لَاهٍ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حديثٌ غَرِيب

وعنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ادعوا الله وانتم موقنون بالاجابة واعلموا ان الله لا يستجيب دعاء من قلب غافل لاه» . رواه الترمذي وقال: هذا حديث غريب

ব্যাখ্যা: (وَأَنْتُمْ مُوقِنُونَ بِالْإِجَابَةِ) অর্থাৎ- দু‘আ করার মুহূর্তে দু‘আকারীর অবস্থা এমন হতে হবে যে, সে দু‘আ কবূল হওয়ার যতগুলো শর্ত রয়েছে সৎকাজের আদেশ অসৎকাজের নিষেধ সহ ইত্যাদি সৎকর্মের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখে কায়মনোবাক্যে এ বিশ্বাস দৃঢ়ভাবে ধারণ করে যে, আমার দু‘আ আল্লাহ তা‘আলা কবূল করবেন।

এমনটাই মতামত পেশ করেছেন জগদ্বিখ্যাত ইসলামী পণ্ডিত ‘আল্লামা তুরবিশতী (রহঃ)।

(مِنْ قَلْبٍ غَافِلٍ) অর্থাৎ- আল্লাহর স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে দু‘আর আদবসমূহ বজায় রেখে দু‘আ করেনি বরং দু‘আর মধ্যে অনেক আদব সে ভঙ্গ করেছে।

‘আল্লামা আল মাযহার (রহঃ) বলেন, হাদীসটির অর্থ হলো, দু‘আকারী তার দু‘আর ব্যাপারে এ বিশ্বাস দৃঢ়ভাবে স্থাপন করবে যে তার রব তার দু‘আ কবূল করবেন, কেননা দু‘আ কবূল না করে ফিরিয়ে দেয়া হয় মূলত তিনটি কারণে একটি হয়তো অপরাগতা নতুবা আহবানকৃত বিষয়টি অমর্যাদাকর হওয়া অথবা আহবানকৃত বিষয় সম্পর্কে অজ্ঞ থাকা- এগুলোর সবটাই আল্লাহর জন্য অবান্তর, কেননা তিনি সবই জানেন এবং সব কিছুই করতে সক্ষম বান্দার দু‘আ কবূল করতে তাকে কেউ বাধাদানকারী নেই। সুতরাং দু‘আকারী যখন এ কথা দৃঢ়তার সাথে জানতে পারবে যে, তার রব তার দু‘আ কবূল করতে সক্ষম তখন দু‘আ কবূল হওয়ার ব্যাপারে সে দৃঢ় থাকবে।

একটি প্রশ্ন ও তার উত্তরঃ দু‘আকারী কিভাবে দু‘আ কবূলের ব্যাপারে দৃঢ় হবে কেননা দৃঢ়তার দাবী হলো তা কবূল হবেই অথচ দু‘আর ভিতর কিছু আছে কবূল হয় আর কিছু আছে কবূল হয় না?

উত্তরঃ দু‘আকারী দু‘আ করে কখনো বঞ্চিত হয় না হয়তো তার দু‘আ অনুপাতে কল্যাণ দেয়া হয় নতুবা তার অনিষ্ট দূরীভূত করা হয়। একটি না একটি পাবেই।

অথবা, তার প্রতিদান আখিরাতের জন্য জমা করে রাখা হয়। কেননা, দু‘আ হলো একটি স্বতন্ত্র ‘ইবাদাত।


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৯: দু‘আ (كتاب الدعوات) 9. Supplications
২২৪২

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

২২৪২-[২০] মালিক ইবনু ইয়াসার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা যখন আল্লাহর কাছে দু’আ করবে, তখন হাতের ভিতরের (তালুর) দিক দিয়ে দু’আ করবে, হাতের উপরের দিক (পিছন দিক) দিয়ে দু’আ করবে না।[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

وَعَنْ مَالِكِ بْنِ يَسَارٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا سَأَلْتُمُ اللَّهَ فَاسْأَلُوهُ بِبُطُونِ أَكُفِّكُمْ وَلَا تَسْأَلُوهُ بِظُهُورِهَا»

وعن مالك بن يسار قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «اذا سالتم الله فاسالوه ببطون اكفكم ولا تسالوه بظهورها»

ব্যাখ্যা: ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন, দু‘আর ক্ষেত্রে হস্তদ্বয়ের ভিতরের পিঠের মাধ্যমে দু‘আ করতে বলা হয়েছে আর উপরের পিঠের মাধ্যমে দু‘আ করতে নিষেধ করা হয়েছে, এর কারণ হলো কেউ যখন কিছু চায় তখন সে উপরের পিঠ নয় বরং ভিতরের পিঠেই চায় এবং সে চায় তা পূর্ণ করে দেয়া হয়। সুতরাং নিয়ম হচ্ছে দু’হাতকে আকাশের দিকে উঠিয়ে দু‘আ করা। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণই এ ক্ষেত্রে ভাল ফলাফল দিতে পারে।

পূর্বের হাদীসও অত্র হাদীসের মধ্যকার একটি সংঘর্ষ ও তার সমাধান।

পূর্বে সায়িব বিন খল্লাদ তার পিতা থেকে যে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন সেখানে রয়েছে যে, নিশ্চয়ই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন কিছু চাইতেন তখন হাতের মধ্যপিঠ তার দিকে করতেন আর কোন বিপদ থেকে আশ্রয় চাইলে বাহির পিঠ তার দিকে করতেন আর অত্র হাদীসে শুধুমাত্র মধ্যপিঠের আদেশ করলেন।

এর সমাধানঃ

১. সায়িব বিন খল্লাদ তার পিতা থেকে যে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন তার সানাদে ইবনু লাহ্ই‘আহ্ রয়েছেন, যিনি য‘ঈফ।

২. বাহির পিঠের মাধ্যমে দু‘আর যে কথা বলা হয়েছে তা শুধুমাত্র ইসতিসকা তথা বৃষ্টির জন্য দু‘আ করার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট। যেমনঃ সহীহ মুসলিমে আনাস  থেকে বর্ণিত আছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৃষ্টির জন্য দু‘আ করলেন হাতের বাহির পিঠ আকাশের দিকে করলেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পর্ব-৯: দু‘আ (كتاب الدعوات) 9. Supplications
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ২০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৬৪ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 3 4 পরের পাতা »